Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

ভারত বাংলাদেশের বর্ডারের কাঁটাতারের বেড়াই কাঁটা হল ভালবাসায়

$
0
0

বিমানবন্দরের অভিবাসন কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে সুলতা সিংহ (নাম পরিবর্তিত)। পাসপোর্টে ঝাড়খণ্ডের ঠিকানা। যাবেন বাংলাদেশ। তাঁকে দেখে সন্দেহ হল অভিবাসন অফিসারের। কথা শুরু হতেই দেখা গেল হিন্দিতে সড়গড় নন সুলতা। কথায় ও-পার বাংলার টান স্পষ্ট।  সেই থেকে সুলতা জেলে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মনোজ সিংহকে (নাম পরিবর্তিত) ভালোবেসে বিয়ে করে দু’জনে ঘর বেঁধেছিলেন ঝাড়খণ্ডের এক গ্রামে। কিন্তু আচমকাই স্বপ্নভঙ্গ! বাংলাদেশ থেকে বেআইনি ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আসার অভিযোগে এ বার বিচার হবে সুলতা বেগমের। তাঁকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে বিচার হবে মনোজেরও। সুলতার বিরুদ্ধে যেমন বেআইনি ভাবে ভারতে ঢোকা ও তথ্য গোপন করে ভারতীয় পাসপোর্ট বানানোর অভিযোগ আছে, তেমনই ১৩ নম্বর ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী, বেআইনি ভাবে দেশে ঢুকে পড়া কাউকে (স্ত্রী-কে) আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মনোজের বিরুদ্ধে।
মনোজ-সুলতার ঘটনা অনেকটা সেই বীর প্রতাপ সিংহ আর জারা হায়াত খানের মতোই। সীমান্তের কাঁটাতার হার মেনেছিল তাঁদের ভালোবাসার কাছে। পাকিস্তানি জারাকে ফিরিয়ে আনতে ভারতীয় পাইলট বীর সে দেশে গিয়ে দীর্ঘ বছর জেলে কাটিয়েছিলেন। ছাড়া পেয়ে দেশে ফিরে দেখেন, জারা বহু দিন আগেই ভারতে এসে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন।
সে ছিল রুপোলি পর্দার চিত্রনাট্য। আর এটা ঘোর বাস্তব!
বাংলাদেশের গা়জিপুরের মেয়ে সুলতা। স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে ৬ বছরের মেয়ে আর মাকে নিয়ে থাকতেন। পুলিশি জেরায় সুলতা জানান, অঞ্জলি নামে এক প্রতিবেশীর কথা শুনে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সাতক্ষিরার দিক থেকে পাসপোর্ট ছাড়াই সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসেন এ দেশে। তার পরে সোজা কলকাতা। আশ্রয় নেন উত্তর কলকাতার যৌনপল্লিতে। রোজগারের তাড়নায় সেখানে শুরু হয় দেহব্যবসা।
সেই সূত্রেই ঝাড়খণ্ডের মনোজের সঙ্গে সুলতার পরিচয়। পেশায় পরিবহণ ব্যবসায়ী মনোজ কলকাতায় এলে ওই যৌনপল্লিতে যেতেন। সেখানেই ঘনিষ্ঠতা, প্রেম। ২০১৬-র মার্চের এক দিন সুলতাকে মনোজ নিয়ে যান জামতাড়ায়, তাঁর গ্রামের বাড়িতে। মনোজের প্রথম স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন। ছেলেকে পুনরায় থিতু হতে দেখে খুশি হয়েছিলেন বাড়ির লোক।
এ পর্যন্ত সব কিছু ঠিকই চলছিল। বাদ সাধল স্ত্রীর আবদার। বাংলাদেশে ফেলে আসা মেয়ে ও মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন সুলতা। মনোজকে বিয়ে করে তত দিনে তিনি হয়েছেন সুলতা সিংহ। স্ত্রীর কথা রাখতে পাসপোর্ট তৈরি হয় ওই নামেই। ভিসাও হয়। মে মাসের শেষ দিনে সুলতাকে কলকাতা থেকে ঢাকা যাওয়ার বিমানের টিকিট কেটে দেন মনোজ। তিনিই সুলতাকে নিয়ে আসেন কলকাতায়। বিমানবন্দরে স্ত্রীকে বিদায় জানিয়ে রয়ে যান কলকাতাতেই। হিন্দি বলতে না-পারা সুলতা ততক্ষণে অভিবাসন অফিসারের হাত ঘুরে পুলিশি হেফাজতে চলে গিয়েছেন। তাঁর ফোনেই মনোজকে ডেকে এনে গ্রেফতার করা হয়।  আইনজীবীরা জানান, মনোজ হয়তো জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু বিচারে সুলতা বাংলাদেশি প্রমাণিত হলে তাঁকে পত্রপাঠ বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সেখানে গিয়ে নতুন করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট বানিয়ে ভারতে আসার ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে তাঁর। মনোজ এখানে পাসপোর্ট বানিয়ে বাংলাদেশের ভিসা নিয়ে সুলতার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেন। কিন্তু জেল খাটায় তাঁরও ভিসা পেতে সমস্যা হওয়ার কথা। তবে কি পাকাপাকি ভাবে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল ‘বীর-জারার’? উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে বিচার শেষ হওয়া পর্যন্ত।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>