রাঙ্গামাটি-বান্দরবানে ভূমি ধসের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে আমাদের সেনাবাহিনী। তাদের উপর অর্পিত প্রচলিত দায়িত্ব ও কর্তব্যের বাইরেও আর্তমানবতার সেবায় পাহাড় ধসের ঘটনা মোকাবিলায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে সেনাবাহিনী বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। ইতোপূর্বেও সেনাবাহিনী ঘূর্ণিঝড় আইলা, রানা প্লাজায় ভবনধস, বন্যা সহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় বরাবরই সংকটময় মুহূর্তে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে অতিজনদের আপন করে নিয়েছে। বর্তমানে রাঙ্গামাটি-বান্দরবানে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গত পরিবারের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলাসহ জরুরি ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং বিদুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে কাজ করছে আমাদের সেনাবাহিনী। বিগত কয়েকদিনে রাঙ্গামাটি জেলায় প্রবল বর্ষণে এবং একের পর এক পাহাড় ধসের ঘটনায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত ও অচল হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যখন জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে, এই সংকটময় মুহূর্তে দুর্গতদের পাশে আবারও এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সহ অন্য সদস্যরা। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুনর্বহাল এবং রাস্তাঘাট পুনসংস্কারে তিন পার্বত্য জেলায় ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এবং ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের প্রায় তিন শতাধিক সদস্য বিপুল সংখ্যক ভারী যন্ত্রপাতি সহকারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বান্দরবান জেলার রদমা এবং রাঙ্গামাটির ঘাগড়া এলাকায় ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়নের ২৩৩ জন সদস্য ২০টি ভারী যন্ত্র (১০টি ডাম্পার, ১টি হুইল লোডার, ৫টি এক্সেভেটর, ১টি হুইল ডোজার এবং ১টি লোডার) দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট সংস্কারের কাজ করছে। ১৬ই জুন থেকে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোট ১,৬৮৬ জন অসহায় ও দুর্গতদের মাঝে চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং ৪৮৯২ জনকে দৈনিক দুই বেলা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, রসদ বিতরণ ও ৯০০ জন দুর্গতের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা ও বস্ত্র বিতরণ নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে তাদের ৮টি মেডিকেল টিম ১৬টি স্থানে অসহায় ও দুর্গতদের মাঝে চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং ৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্গত জনসাধারণের মাঝে প্রতিদিন রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করছে। পাহাড় ধসের ঘটনার পরবর্তী সময়ে বৈরী ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে সেনাবাহিনী প্রধান, জিওসি ২৪ পদাতিক ডিভিশন, কমান্ডার এসডব্লিউও এবং জিএসও-১ (সিআই) রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার দুর্গত এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেন। এই সময় সেনাবাহিনী প্রধান ও জিওসি ২৪ পদাতিক ডিভিশন এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দুর্গত এলাকার জনগণকে সার্বিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন। পাহাড় ধসের এ ঘটনায় রাঙ্গামাটিতে ১১৫ জন, বান্দরবানে ৬ জন ও খাগড়াছড়িতে ৫ জনসহ সর্বমোট ১২৬ জনের মৃত্যু ঘটে। পাহাড় ধসের ঘটনার পর রাঙ্গামাটি জেলার মানিকছড়িতে সেনাবাহিনীর ১৬ জন অকুতোভয় সেনাসদস্য উদ্ধার অভিযানে গেলে সেখানে পুনরায় পাহাড় ধসের ঘটনায় ২ জন সামরিক কর্মকর্তাসহ মোট ৫ জন সেনাসদস্য নিহত হন। এ ঘটনার পরও সেনাসদস্যরা দমে না গিয়ে বরং রাঙ্গামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় ব্যাপক উদ্ধার অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি, দুর্গম ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকায় চিকিৎসা সেবা প্রদান, রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও রসদ সরবরাহ করে যাচ্ছে।
↧