দেশের তরুণ সমাজ দেশের এক অমুল্য সম্পদ। তরুণ সমাজ যদি বিপথগামী হয় তাহলে জাতির সর্বনাশ। তরুণ সমাজকে ভাল কাজে নিয়োজিত করতে পারলে যেমন সুফল মিলে তেমনি মন্দ কাজেও এদের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের সন্তানরা বিভিন্ন দিক থেকে জড়িয়ে পড়ছে মাদকের নেশায়। তারা এ বিষয়টি শখের বসে নিতে গিয়ে পরে মাদকাসক্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে জীবনের বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতকে জয় করার মানসিকতা হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে তরুণ সমাজ। নেশাসক্ত মানুষের মধ্যে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীদের সংখ্যাই বেশী। ক্রমবর্ধমান এই সংখ্যাটি ক্রমশ শহরতলি ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। তবে অবৈধ ড্রাগ সেবনের এই প্রবণতা সারা দেশে এক রকম নয়। যেমন উত্তরবঙ্গে যা বেশী চলে দক্ষিণে কম, আবার পূর্বে যা বেশী পশ্চিমে তা কম। তবে ইয়াবা এবং ফেনসিডিলের ব্যবহার দেশের সর্বত্রই বিদ্যমান। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। পুরুষদের বিষয়টি সামনে এলেও নারীরা পর্দার অন্তরালে থেকে নিজেদের বিলীন করে দিচ্ছে। মাদক ধ্বংস করে দিচ্ছে ফুলের মতো কতগুলো মানুষের জীবন। নেশায় আসক্ত হওয়ার পেছনে যদিও বহুবিধ কারণ রয়েছে। তবে নারীরা কৌতুহলের বশেই প্রথমে মাদক গ্রহণ করা থেকে তারা আসক্ত হয়ে পরে। এছাড়া পারিবারিক অশান্তি, যে কোন ধরনের হতাশা, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, প্রেমঘটিত ব্যাপার, ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, মাদকাসক্ত বন্ধুদের সঙ্গ এসব কারণেই এই মরণ নেশায় আসক্ত হচ্ছে। বহুবিধ কারণে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে দেশের যুবসমাজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কারণ যাই হোক না-কেন, নেশা সমাজের প্রধান পাঁচটি অংশকে অর্থনৈতিকভাবে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই অংশগুলো হচ্ছে স্বাস্থ্য, উৎপাদন, অপরাধ, নিরাপত্তা, এবং সরকারি কার্যপ্রণালী। নেশা মানুষের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত করে তোলে। মাত্রাতিরিক্ত মাদক সেবন রোগীর মানসিক অবসাদ ঘটায় এবং হেপাটাইটিস বি ও সি, এইচআইভি-এইডস ও যক্ষার মতো ভয়ানক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দেয়। নেশাগ্রস্ত লোকেরা যে শুধু নিজের ক্ষতি করে এমন নয়, সমাজের অন্যান্য মানুষের নিরাপত্তাও সঙ্কটাপূর্ণ করে তোলে। নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালালে সড়ক দুর্ঘটনায় চালকের ক্ষতি হয় আর এর কুফল ভোগ করতে হয় পথযাত্রীদের। এই নেশাবিরোধী অভিযান, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন কর্মসূচিতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সুতরাং ঘন ঘন রোগে আক্রান্ত হওয়া কিংবা মারা যাওয়া উভয় ক্ষেত্রেই দেশের প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়।
↧