সিলিং এর সাথে গোলায় বুকের ওড়না দিয়ে ঝুলে থাকা মেয়েটির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তারপরেও তার কথাগুলো আমার কলমের শব্দে সংযুক্ত করতে হলো। খুব বেশী মহান কাজ আমি করতে যাচ্ছি এমন কিছু না। শুধুমাত্র মানবতা আজ কোথায় সেই কথাটি জানতেই কথাগুলো টুক টুক করে কিবোর্ড থেকে লিখে যাচ্ছি। মেয়েটি কুমারী নয় কারো স্ত্রী। সে একজন মা ২০ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরাগ নামক ছেলেটির মা।
.
এই বয়সেই কেন তাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হলো। যখন যৌবন ছিলো প্রেম করেছে, ধোকা খেয়েছে তখন কেন সে আত্মহত্যা করেনি? তার যুবক সন্তান থাকা সত্যেও কেন তাকে আজ মৃত্যুর পথটি সর্বউত্তম পথ মনে হলো?
.
পরাগ নামক ছেলেটি ছোট বেলা থেকেই হোস্টলে থেকে বড় হয়েছে কোনদিন তার মা তাকে তার সংস্পর্ষে আসতে দেয়নি। তার চরিত্র সম্পর্ক এ জেনে যাবে এই ভয়ে। আজকে যে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে সে দৌলতদীয়া পতিতালয়ের ১০ জন পতিতার একজন ছিলো জুঁই। দুর্ভাগ্যবশত পরাগ তার গর্ভ থেকে জন্ম নিলেও, পরাগ পিতা কোন ব্যক্তি ছিলো তা জুঁই নামক মেয়েটি জানেনা। । কত মানুষেই তো তার দেহ উপভোগ করে জীর্ণগুলো তার পেটেই ঢেলে রেখে গেছে। এত মানুষের মধ্যে কার জীর্ণ থেকে এই পরাগ নামক সন্তানটি জন্ম হয়েছে তা বোঝা কোন সাধারণ ব্যাপার না।
.
জুঁই একজন যৌনকর্মী হবার আগে শুধু জুই ছিলো। তখন তার নামে এমন কিছুই যোগ হয়নি। সম্ভবত ১২ বছর বয়সেই পিতামাতা সবাইকে হারিয়ে ফেলে সে। জীবন বাচাতে গিয়ে মড়ল বাড়ির বাটু মিয়ার কাছে আশ্রয় চাইলে। সেদিন রাতেই সে প্রথম ধর্ষন হয়। তার সতিত্ব চুষে চুষে খেয়ে ফেলে বাটু;মিয়া। ১২ বছরের বয়সের সেই ধর্ষীত মেয়েটিই আজকের পতিতালয়ের জুই। বাটু মিয়ার ঘরে তিনবেলা খারাবের জন্য গিয়েছিলো, অবশেষে সে নিজেই বাটু মিয়ার দেহ আগুন বুঝানোর খাবার হয়ে গেলো। সেখান থেকে পালিয়ে আসতে চাইলেও আসার কোন উপায় ছিলোনা। শত হলেও বাটু মিয়া এলাকার বড় মাথা, তার নামে কিছু বলাতো দুরে থাক, ভাবলেও প্রাণটা হারাতে হবে। নিত্যনতুন মেয়েদের উপভোগ করাটাই বাটু মিয়ার একটি অপরিবর্তনীয় ধর্ম।
.
ঘরের বন্ধে বন্ধি ছিলো কয়েকবছর। প্রতিদিন রাতেই জুই কে নিয়ে মেতে উঠতো এক আজব খেলায়। শুধু বাটু মিয়া নয়, সাথে তার বন্ধু বান্ধব থাকতো। এভাবেই টানা তিনবছর ধর্ষনের শিকার জুইকে একদিন বাটু মিয়া নিয়ে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিলো দৌলদিয়া পতিতালয়ের মাথা সামছুর শিকদারের কাছে। সেই থেকে আজ শুরু করে আজ ২৫ বছর কেটে গেলো এই পতিতালয়ের একজন কর্মী হিসেবেই। তার পেটে সন্তান আসার পর তাকে এবরশোন করার চেষ্টা করলেও সে রাজী হয়নি। সে এই সন্তানকে জন্ম দিবেই। তার আকুতিতে সাড়া দিলো পতিতালয়েল আরেক কর্মী শাহানাজ। সে তার এক পরিচিত লোক দিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো এবং তার জন্ম হওয়া শিশুটি পরাগ প্রথমে দায়মার কাছে লালিত হতো, তারপর একটু বয়স হবার পর থেকে হোস্টল থেকেই জীবন চলতে লাগলো। পরাগের সমস্ত ভরণ পোষণ আসতো, তার মায়ের দেহবিক্রির টাকা দিয়ে। তার মা চাইতো না এই নোংরা টাকায় তার সন্তান পালিত হোক, কিন্তু এ ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই। শামসুর শিকদার বড্ড খারাপ মানুষ তার কথার অবাধ্য হলে, মা ছেলে দুজনের প্রান হারাতে হবে।
.
আজ ৪০ বছরের কোটায় জুই আক্তার তার জীবন সমাপ্ত করলেন। দৌলদীয়া ৩০৪ নাম্বার রুমের মাঝেই। নিয়তি বড্ড আজব খেলা করে। পরাগকে সে সর্বদা ছবিতেই দেখতো কোনদিন বাস্তবে দেখতো না। পরাগ জানতো তার মা বাবা কেউ নেই। আর দায়মা হচ্ছে তার দাদী। সবাই এক এক্রিডেন্টে মারা গেছে। পরাগ তার মাকে না চিনলেও তার মা পরাগ কে চিনতো।
.
আজকের দৌলদীয়া পতিতালয়ে আরেকজন নতুন গ্রাহক এসেছে পরাগ নামক একটি ২০ বছরের তরুন ছেলে। মেয়ে বাছাই পর্বতেই জুইয়ের চোখ পড়ে পরাগের উপর, তাকে চিনতে বিন্দু পরিমান কষ্ট হলোনা। ১০ মাস ১০ দিন তার শরীরের হাড়মাংস খেয়ে যে সন্তানকে জন্ম দিয়েছে, তাকে না চিনে উপায় কি? পরাগ কে দেখা মাত্রই কলিজা যেন ফুটো হয়ে যাচ্ছে এক একটি বিষ নিশ্বাসের সাথে। পরাগ ঘুরে ঘুরে জুইয়ের কাছে গিয়ে তার বন্ধুকে বলতে লাগলো আমি তাকে নিয়ে রুমে যাবো।
.
এই কথা শোনার পর জুই আর পৃথিবীতে নেই, তার মৃত্যু যেন এখনি হয়ে যাবে, মুখে কিছুই বলতে পারছে না। হরহর করে দুচোখের পানি ছেড়ে দিলো। শাহনাজ পরাগকে চিনতো সে বলতে লাগলো
-- এই ছেলে তুমি অন্যকাউকে নিয়ে যাও, সে তোমার সাথে যাবেনা।
.
পরাগ জেদ করতে লাগলো, সে জুইকে নিয়েই যাবে। এরপর আর কি হবে ওদিকে শামসুর শিকদার উক পেতে রয়েছে। জুই কোনভাবে বলতে লাগলো
-- আমার শরীর খারাপ আপনি অন্য কাউকে নিয়ে যান। এই কথা বলে সে দৌড়ে ঘরে ঢুকে সিলিং ফ্যানের সাথে বুকের আচল দিয়ে পেচিয়ে ঝুলে পড়লো।
.
তার মৃত্যুতে আমার বিন্দু পরিমান কষ্ট হচ্ছে না, কষ্ট তো এই ভেবে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির সময় কষ্টের পরিমাণ কতটুকু হতে পারে? এক যৌনকর্মী তার গর্ভ এর সন্তান এসে যদি তাকে নিয়েই বিছানায় যেতে চায়, তখন কষ্টের নদী কতটুকু বেগ স্রোতে বইতে পাড়ে? এসব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। এই জুই নামক মেয়েটির ইতিহাস শাহনাজ, মড়ল বাড়ীর বাটুমিয়া আর শাহনাজ পর্যন্তই রয়ে গেলো। কেউ জানলো না এক পতিতালয়ের মাঝেও একটি ১২ বছর বয়সে ধর্ষন হওয়া মেয়ে রয়েছে। একজন মা রয়েছে। যার স্বপ্ন আশা বলতে কিছুই ছিলোনা। থাকলেও তা বাস্তব করার শক্তি ছিলো না। কোন মা খারাপ না, কোন বাবা খারাপ না। খারাপ আমাদের সমাজ, খারাপ আমাদের মা বাবা হবার আগে মেয়ে ছেলে।
.
মানুষ জাত শুধু একটি কারনে পশু হতে পারেনা। কারন আমাদের অনুভুতি আছে। অনুভুতির জন্যই পশু কোনদিন মানুষ হতে পারেনা। কিন্তু মানুষ গুলোই খুব স্বাভাবিক ভাবে পশু হয়ে যায়।
।
লেখা: Tashriq Intehab
↧
বেষ্যার ছেলে
↧