Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

নিঃস্বার্থ সুখ

$
0
0

০- ভাইজান একটি ফুল নেন, আপার খোপায় অনেক ভালো লাগবো।
-- কিন্তু তোর আপা যে নাই, কাকে পড়াবো?
০- তাইলে আপনার বোনকে পড়াবেন। আপনার বইন অনেক খুশি হইবো,
-- আমার যে বোইন ও নাই, কিভাবে দিবো?
০- তাইলে আপনি নিজে পড়েন, আপনারে রানীর মত লাগবো...  হি হি

মেয়েটি খিল খিল করে হেসে উঠলো, মেয়েটি কোন ফুল বিক্রেতা নয়, তার সমাজের মানুষের নকল করতে ভালো লাগে, যাকে তার ভালো লাগে তার নকল করে নিজেও ভালো থাকে অন্যকেও ভালো রাখে।

শ্যাম বর্ণ তার গায়ের রঙ, চোখেতে একরাশ ভালোবাসা নিয়ে সর্বদা প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটানোই যেন তার জীবনের লক্ষ। তার এলোমেলো বাউরী চুলে যেন তার রুপ দ্বিগুন হয়ে যায়, কালো হলেও তাকে অপ্সরা রুপসীর থেকে কোন অংশ কমনেই, তার তেছড়ি নয়ন, বাতাসে উড়ে যাওয়া রেশমীকালো চুল, চঞ্চল প্রকৃতিতে হাসিয়ে মাতিয়ে রাখা তার স্বভাব যেন আল্লাহর নিখুঁত উপহার এই পৃথিবীর জন্য।

গল্প টা অবনীশ আর রুপসীর.......... আজ থেকে ৫ বছর আগে!

০- অবনীশ ঘুম থেকে উঠ, বেলা পেরিয়ে সন্ধ্যে হতে চলল, এখনো তুই ঘুমাচ্ছিস, আর কত ঘুমাবি এবার উঠ,
-- মা কাল রাতে ঘুমাতে পারিনি, এবার একটু ঘুমাতে দাও।
০- পড়ে ঘুমাইস দেখ কে এসেছে, তোর সাথে দেখা করতে
-- যেই আসুক আমি ঘুমাবো এখন।
০- আচ্ছা থাক তুই, কোন কিছু হলে আমাকে কিছু বলবি না।

কথাটা বলে অবনীশের মা চলে গেলো, কথাটা শুনেই অবনীশের বুকের ভিতর নাড়া দিয়ে উঠলো, কি হবে আর কে এসেছে ঘুর্নিঝড় তো আবার আসেনি? এসব ভাবতে ২ সেকেন্ড সময় চলে গেলো ৩ সেকেন্ড এ চোখ খোলার আগেই, ঘুর্নিঝরের পানি তার পুরো দেহকে ভিজিয়ে দিলো,
০- এইযে নবাবজাদা,  পুরো পৃথিবী তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে, আমি আপনার জন্য নৌকা আনছি চলেন আপনাকে পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দেই, সবাই জলে ডুবে মরবে আর আপনি উড়ে উড়ে মরবেন।

কথাগুলো বলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো মেয়েটি, অবনীশ উঠে বসে রইলো, আর তার মাকে জোরে ডাক দিয়ে বলতে লাগলো,
০- মা ও মা, আগে কেন বলোনি, এই ঝরের রানী এসেছে,
 
অপর প্রান্ত থেকে অবনীশ কে বলতে লাগলো,
০- আগেই বলেছিলাম, কিছু হলে আমাকে বলবি না।
-- তাইবলে ৩ সেকেন্ড অপেক্ষা করতো পারলো না এমন মেয়ে আমি জন্মে দেখিনাই,
০- ঝড় কিন্তু আধা সেকেন্ডে হয়, তুই অনেক ভাগ্যবান যে ৩ সেকেন্ড পর ঝড় আসছে তোর উপর,।

এই কথা বলে অবনীশের মা হাসতে লাগলো, অবনীশের রাগে শরীরে আগুন জলছে, কিন্তু এই আগুন নিজের মাঝেই রেখে দেওয়া ভালো, কারন সে যদি কিছু বলে এখন, তার অবস্থা যে কি হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা,  অবনীশ মেয়েটির সাথে কোন কথা না বলে, সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো, ব্যাপার টা রুপসীর একদম ভালো লাগলো না, যে সে তাকে কিছু বললোনা, অবনীশেরই বা কি করার আছে বললেও দোষ না বললেও দোষ, রুপসী রেগে গেলো আর বলতে লাগলো,

০- ইদুর, পিঁপড়ার জামাই, কলা গাছের বাদুর, জংগলের পোকা মাকড়ের শত্রু, তুই আমার সাথে রাগ দেখাস, আজ তোর যেকয়দিন লাগে, আমার কিন্তু ১ মিনিটই লাগবে, আজ তোকে আমি বাথরুম কেল্লা দেখাবো।

কথাগুলো শুনে অবনীশের মনের মাঝে ভয় লেগে গেলো আবার কি করবে তার সাথে, ঝটপট প্যান্ট পড়ে যেই না বের হতে যাবে, ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেলো, তার বের হওয়ার রাস্তা অপরপ্রান্ত থেকে বন্ধ, এবার অবনীশ বলতে লাগলো,
০- আল্লাহ কোন পাপের শাস্তি তুমি আমাকে দিতেছো, এমন দাজ্জাল মেয়ে কেন আমাকে দিছো, না বাচতে দেয় না একটু শান্তি দেয়, আল্লাহ ওর মাথায় একটু জ্ঞান দাও তুমি, আমিন।
-- কি বললি তুই, আমি তোরে শান্তি দেইনা, আমার মাথায় জ্ঞান নাই, আমি তোরে জালাই, আজকের পর থেকে তোর সাথে সব সম্পর্ক শেষ, যা ভালো থাক।
০- যাক এতদিনে তুই আমাকে ছাড়তেছিস, সম্পর্ক যখন নাই, তখন, দরজা খুলে দে, আমি তোর যাবার দরজা খুলে দিবো।
-- কুত্তা, ***, ছাগলের লেজ, তোরে আমি খুন করে ফেলবো, আমি চলে যাইতেছি আর দরজা খুলমু না, ওখানে পড়ে থাক তুই।

এই কথা বলে রুপসী চলে গেলো অবনীশের ঘর থেকে, অবনীশ কে বাথরুমে আটকিয়ে। অবিনাশ চিৎকার করতে করতে ক্লান্ত, কিন্তু তার শব্দ যেন কেউ শুনেও শুনে না, অবিনাশ ও জানে তার বাথরুমের দরজা রুপসী ছাড়া কেউ খুলবে না, তাহলে তার ১২ টা বাজিয়ে ছাড়বে, তাই বাধ্য হয়ে রুপসীর রাগ ভাংগা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

বাথরুমেই ২ ঘন্টা কেটে গেলো, ২ ঘন্টা পর.... রুপসী এসে দরজা খুলে দিলো, কিন্তু তার মুখে কোন শব্দ নেই অবনিশ বের হয়ে বলতে লাগলো,
০- কলিজা ঠান্ডা হইছে এখন।
-- হুম,
০- আর কিছু করার বাকি আছে
-- হুম,
০- কি?

রুপসী চুপ করেই রইলো, মাথা নিচু করে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো, তারপর অবনিশ এর কাছে গিয়ে কলার টেনে ধরলো, আর বলতে লাগলো,
০- তুই ঐ মেয়ের সাথে কথা বলছিস কেন?
-- কোন মেয়ে,
০- ঐ যে তোর সাথে কলেজে পরে  তামান্না নাকি ফামান্না জানি।
- কথা বললে কি হয়?
০- আবার যদি কথা বলিস তোর মুখ ভেংগে দিবো ঘুষি মেরে,  চোখ উপড়ে ফেলবো অন্যকোন মেয়ের দিকে তাকালে।

কথাগুলো বলতে বলতেই রুপসীর চোখে পানি জমে গেলো, অবনীশ তার চোখের পানি মুছে দিতে গেলে, অবনিশ কে বুকে জরিয়ে হাউমাউ করে কেদে দিলো, আর বলতে লাগলো, তুই অনেক খারাপ, আমাকে শুধু কষ্ট দিস, আর অবনিশ কে কিছু বলতে দিলোনা, অবনিশের কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো।

কিছুক্ষন পর আবার রুপসী ফিরে আসলো, সাথে একটি মেরুন রংয়ের পাঞ্জাবী নিয়ে, এসে বলতে লাগলো, এটা পড়ে ঝটপট তৈরি হয়ে নে,
০- কেন কোথায় যাবো
- জাহান্নাম এ।
০- তুই যা, আমার জাহান্নাম এ যাওয়ার ইচ্ছা নাই,
-- তোর ইচ্ছা তে আমার বয়েই গেছে, টেনে হেচড়ে নিয়ে যাবো।
০- আচ্ছা তুই আমাকে এত জালাস কেন?
-- আমি তোকে জালাই তাইনা, দেখিস যেদিন আমি জালাবো না সেদিন তুই আরো জলবি।
০- সেদিন যখন আসবে আমি অনেক হ্যাপি হবো, তোর মত ডায়ানের হাত থেকে মুক্তি পাবো।
- তাই ঠিক আছে আমি মরলেই যখন তোর শান্তি, কথা দিচ্ছি মরেই যাবো তোকে রেখে।

অবনিশ চুপ করে রইলো, খানিকবাদে রুপসী কে জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো,
০- এমন কথা কোনদিন ভুলেও বলবি না।

দুজনের রোমান্টিক এর মাঝেই অবনিশ এর মা চলে আসলো, এসে একটা ছোট্ট কাশি দিয়ে দিলো, তারা দুজনেই চমকে উঠলো, রুপসীর মুখখানা লজ্জায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠলো, মাথা নিচু করে বলতে লাগলো, দেখুন আন্টি আমার কোন দোষ নেই, আপনার ছেলে আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরছে, লাজ স্বরম সব পানিতে ভিজিয়ে খাইছে।
০- কিরে বদমাইশ মেয়েটাকে এত জালাস কেন?
-- আমার সাথেই এমন হয়, সব সময় গেড়াকলে আমাকে, পড়তে হয়, এখন আমার দোষ থাকুক আর না থাকুক।

অবনিশ এর মা হাসি দিয়ে বলতে লাগলো, এবার তোদের দুজনকে এক করেই দিবো
-- না না মা, এমন করোনা, এই ডায়ান রে নিয়া, সংসার করলে প্রতিদিন আমাকে বন্যার পানিতে চুবাইবে।

রুপসী একটু রাগ নিয়ে বললো, দেখো ফিউচার জামাই আপোষে রাজী হয়ে যাও তানা হলে কেইস করে বিয়া করবো, ভদ্র ছেলের মত জামাই সেজে আমাকে নিয়ে আসবে, তানা হলে তো জানোই...

কথাগুলো বলে রুপসী চলে গেলো, আর অবনিশ তার মা কে বলতে লাগলো,
০- দেখছো মা, দেখছো, কেমন বেহায়া মেয়ে লাজ স্বরমের বাটি তাকে আল্লাহ ধুয়েও দেয় নাই।

অবনিশ এর মা মুচকি হাসি দিয়ে বলতে লাগলো, আল্লাহ যেন তোদের দুজনকে দুজনের জন্যই বানিয়েছেন। এই কথা বলে অবনিশ এর মা চলে গেলেন, আর অবনিশ মুখে ভালোবাসার মুচকি হাসি নিয়ে বলতে লাগলো, পাগলী তোকে অনেক ভালোবাসি, হুট করে আবার রুপসী চলে আসলো, কলার ধরে এত জোরে টান দিলো, অবনিশ নিজেকে ধরে রাখতো পারলো, প্রায় পড়েই যাচ্ছিলো, বাচার চেষ্টা করেও বাচতে পারলোনা, অবনিশ রুপসী কে নিয়েই পড়ে গেলো, রুপসী পরম যত্নে অবনিশ এর ঠোট ছুয়ে দিলো, আর তাকে ধাক্কা দিয়ে উঠে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

আজ শুক্রবারের দিন, অবনিশ বাসার সবার সাথে বসে আড্ডা দিতে ছিলো, বাবা মা, ছোট ভাই সবাই এক সাথেই ছিলো, এমন সময়, রুপসীর ফোন আসলে সে কয়েকবার কেটে দিলো, তার বাবা বিষয়টা লক্ষ্য করলো, আর অবনিশ কে জিজ্ঞেস করতো লাগলো, কে ফোন দিচ্ছে তোকে বার বার, ফোন রিসিব কর, আর লাউডস্পিকার দে, আমরা সবাই শুনবো, বাবার কথার অমান্য করতে পারলো না,  অবনিশ ফোন রিসিব করে লাউডস্পিকার দিলো সাথে সাথেই কর্কশ শব্দে রুপসী বলে উঠলো,
০- ঐ ইন্দুরের বাদশা ফোন কাটতেছোস কেন?
-- কি হইছে বল,
০- তুই এখনি আমাদের বাসায় এসে বদমাইশ ছেলেকে ঘুষি মেরে ওর নাক ফাটিয়ে দে,
-- কার নাক ফাটাবো, আর কেন?
০- ওমা তুই ফাটাবি না তো কে ফাটাবে তোর পাগলিকে বিয়ে করার জন্য আসছে, তুই যদি কিছু না বলিস, আমি তোর নাক ফাটিয়ে দিবো বলে দিলাম হু......
-- আমি পারবো না, তুই ফাটা বসে বসে,

অবনিশ এর কথা শুনে রুপসীর মাথায় আগুন চড়ে গেলো, আর বলতে লাগলো
০- তুই বাসায় থাক, আমি আসতেছি, আজ তোর যে কয়দিন লাগুক, আমার কিন্তু ১ ঘন্টাই লাগবে।

রুপসীর কথা শুনে, অবিনাশের আত্মার পানি শুকিয়ে গেলো, সব সময়তো ১ মিনিটের কথা বলে, আজকে ১ ঘন্টার কথা বলছে নিশ্চয় তার কপালে আজ অনেক খারাপ কিছু আছে, এসব ভাবতেই পাশ থেকে অবনিশ এর বাবা বলে উঠলো
০- মা তোমার আসতে হবে না, আমি আর অবনিশ আসতেছি ঐ বদমাইশ ছেলের নাক ভাংতে, কত বড় সাহস ছেলের, আমার বউমা কে বিয়ে করতে আসছে, তুমি বাসায় থাকো আমরা আধ ঘন্টার মধ্যে আসতেছি।
-- ধন্যবাদ আংকেল, আপনার ছেলেকে বুঝান, আমি ছাড়া ওর কোন গতি নাই, বেশি তেড়িবেড়ি করলে ওকে মেরে ভর্তা করে আচার বানিয়ে খাবো, তাকে বলে দিয়েন আজ শুধু আপনার জন্য ও বেচে গেলো তা না হলে.....
০- থাক মা রাগ করোনা, অবনিশ ছোট মানুষ এত কিছু বুঝেনা একটু বুঝিয়ে নিও।
-- ঠিক আছে আংকেল তাহলে রাখি, আর এই যে অবনিশ বাবু, আজ আমার সাথে আপনি শুধু দেখা করেন, মজা বুঝাবো...

অবনিশ ধীর সুরে বলতে লাগলো, সব কিছুতো সমাধান হয়ে গেছে আবার কেন?
০- সেটা দেখা করলেই বুঝবেন বায়।

কথাগুলো বলে, রুপসী ফোন রেখে দিলো অবিনাশ এর বাবা সহ পরিবারের সবাই রুপসীর বাড়িতে গেলো, তাদের বাড়িতে যাওয়া মাত্রই সবাই রুপসীর বাবা মা বলতে লাগলো, বেয়াই সাহেব এসেছেন তাহলে, আসুন, ভিতরে আসুন

অবনিশ অবাক হয়ে গেলো রুপসীর বাবা মায়ের কথা শুনে বেয়াই কবে হলো আর কথাবার্তা কবে কি হলো, কিছুই সে জানেনা।

সবাই বসে আছে, অবনিশ চিন্তায় মশগুল, কি হতে যাচ্ছে তার সাথে, এরই মধ্যে রুপসী আসছে, লাল একটা দোপাট্টা পড়ে, নিজেকে খুব অপুর্বভাবে সাজিয়েছে আজকে, নানা রংয়ের চুড়ি হাতে, পায়ে নুপুর, কোমরে বিছা, কপালে টিকলি, যেন এক অপ্সরা নেমে আসছে পৃথিবীতে, এমন ভাবে নিজেকে সাজিয়েছে আজ, অবনিশ চোখের পাতাও ফেলতে পারছে না, বার বার কবিতার সুরে তাকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে

""প্রেয়সী এমন রুপ কোথায় লুকিয়েছিলে তুমি? আজিকের এই সাজে এমন বৈচিত্র্যময় লগনিতে যদি ভালোবাসার নামে মান কুলমান হারাই, তুমি কি আমার মান কুলমান হীন রাজ্যের সংগী হবে?""

এসব কথা ভাবতে আর অপলোক দৃষ্টিতে রুপসীর পানে অবনিশ তাকিয়ে রয়েছে, এমন কান্ড দেখে, রুপসীর মা দুষ্টুমিতে বলে উঠলো
০- জামাই সাহেব মেয়ে কি পছন্দ হয়েছে আপনার?

অবনিশ ও কম না সেও বলে উঠলো, পছন্দ না হলেও কি করার, বিয়ে তো তাকেই করতে হবে, অন্য মেয়ের দিকে চোখ দিলে যে এই ডায়ান সুন্দরী আমার চোখ উপড়ে ফেলবে।

কথাটা শুনে রুপসী তেলে বেগুনে জলে উঠলো, আর সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো, রুপসী খুব শান্তসুরে বলতে লাগলো,
০- আমার হবু বরের সাথে আমি একটু আলাদা কথা বলতে চাই,

অবনিশ এর বাবা, অবনিশ কে ইশারা দিলে সে উঠে রুপসীর সাথে ছাদে চলে যায়, ছাদে যেতেই বিদ্যুৎ প্রবাহি বিজলির মত পড়লো অবনিশের উপর,

কোমরে হাত দিয়ে ধমকাতে ধমকাতে জিজ্ঞেশ করলো, আমাকে ডায়ান বললি কেন?
০- আগে বল জামাইকে কেউ কি তুই করে বলে,
-- আচ্ছা আমার প্রানের জামাই, তুমি আমাকে ডায়ান কেন বললে?
০- ভালোবেসে,
-- আর একদিন যদি ডায়ান বলো, তাহলে রক্তচোষা ডায়ান হয়ে তোমার রক্ত চুষে খাবো।
০- রক্ত থাকলে তো খাবে, সব তো চুষে খেয়েই ফেলছো।
-- কি বললে তুমি, ঠিক আছে আমি যাচ্ছি আর আসবোনা,

এই কথা বলে রুপসী চলে যেতে লাগলো পিছন থেকে অবনিশ তাকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলো, আর বলতে লাগলো, এই পাগলি কই যাও, তোমাকে ছাড়া আমি কি করে থাকবো, রুপসী কোন কথা না বলে অবনিশের বুকে মাথা গুজে দিয়ে শুধু প্রেমসুখ গ্রহন করতে লাগলো।

এক মাস পর তাদের বিয়ে হলো, দুই পরিবার অনেক আনন্দ করে তাদের বিয়ে দিলো, তারা একে অপরের সাথে জীবন সুখ ভোগ করতে লাগলো,  খুনসুটি ঝগরায়, আর ভালোবাসায় তাদের কেটে গেলো জীবনের ৫ টি বছর।

৫ বছর পর আজকের বর্তমানে.....

কিছুদিন আগেও সব ঠিক ছিলো, সব কিছু এলো মেলো করে দিলো একটি ঝড় তুফান, আজকের এই সুর্যের কিরন পৃথিবীর বুকে এমন ইতিহাস লিখে দিবে তা কখনো ভাবতেও পারেনি, জীবন বড্ড বেশী আজব।

মায়ের  অনুমতি নিয়েই আজ  পথযাত্রা অবনিশ এর
০- মা তোমার বউমা কে নিয়ে, কোথাও থেকে ঘুরে আসি,
-- ঠিক আছে ঘুড়ে আয়,

রুপসী ঘুড়তে যাবার কথা শুনেই ঝটপট কাপড় পড়ে সেজে গুজে প্রস্তুত, অবনিশ আর রুপসী ঘর থেকে বের হয়ে গেলো, অবনিশ এর মা রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, হঠাৎ রান্না ঘরে একটা কালো বিড়াল দৌড়ে এসে খাবার নষ্ট করে দিলো, অবনিশের মা ঘাবড়িয়ে গেলো, কালো বিড়াল খাবার নষ্ট করা শুভ লক্ষন না, মায়ের মন সন্তানের কোন বিপদ আসলে আগেই বুঝে যায়, ছুটে গিয়ে অবিনাশ কে ডাকতে লাগলো, ততক্ষনে অবনিশ আর রুপসী গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেছে, অবনিশ এর মোবাইলে বার বার ফোন দিচ্ছে মোবাইল বন্ধ, রুপসীর মোবাইলেও কোন সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।

অবনিশ এর মা চুপিসারে বসে কান্না করতে লাগলো আর আল্লাহর দরবার এ ফরিয়াদ করতে লাগলো, যেন তার সন্তানের কোন বিপদ না হয়, কিছুক্ষন পর অবনিশ এর মোবাইল থেকে ফোন আসলো, মোবাইল টা রিসিব করেই বলতে লাগলো,
০- অবনিশ বাবা তোরা কোথায়, তোদের কিছু হয়নি তো, আমার খুব ভয় করছে তোরা চলে আয়, কোথাও যেতে হবেনা, তোদের আজ।

অপর প্রান্ত থেকে কোন শব্দ নেই, কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর, একজন বলতে লাগলো,
-- সাভার হাইওয়ে তে এই ফোনের মালিকের এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে একটি ট্রাক এর সাথে ধাক্কা লেগে গাড়ি রাস্তা থেকে ছিটকে ক্ষেতের মাঝে পড়ে গেছে, গাড়িতে একটি মেয়ে আর ছেলে ছিলো তাদের কে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যাওয়া হয়েছে আপনারা সেখানে চলে যান।

অবনিশ এর মা এক চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন, অবনিশ এর বাবা খবর পেয়ে বাসায় এসে, অবনিশ এর মায়ের মুখে জল ছিটিয়ে তাকে জ্ঞান ফিরালেন, আর তারা দ্রুত চলে গেলেন, ঢাকা মেডিকেল এ, সেখানে গিয়ে খোজ নিয়ে জানতে পারেন, তারা দুজনেই বিপদ মুক্ত, কিন্তু দুজনেরই মাথায় প্রচন্ড আঘাত লাগার কারনে রুপসীর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গেছে আর অবনিশ এর দুটো চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে গেছে।

তাদের আদরের সন্তান অন্ধ হয়ে গেছে আর পাগলী বউমা এবার সত্যি পাগল হয়ে গেছে।

অনেক চেষ্টার পরেও, অবনিশ এর চোখের সন্ধান মিললো না, অবশেষে, অবনিশ এর মা নিজের চোখ দেওয়ার পরিকল্পনা করলেন, অবনিশ এর বাবা রাজী ছিলেন না, কিন্তু অবনিশ কে তার মা অন্ধ দেখতে পারবে না, তার ছেলেকে নিজের জীবন দিয়ে হলেও, এই সুন্দর পৃথিবী দেখা থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না।।


অবশেষে অবনিশ এর মায়ের কথায় রাজী হলেন সবাই, না হয়েও উপায় নেই, সে তার ছেলের জন্য সব বিসর্জন দিয়ে দিবেন, এতে কারো কথাই সে শুনবে না, আর সবাইকে বলে দিলো যেন এই কথা অপারেশন না হওয়া পর্যন্ত কেউ অবনিশ কে না জানায়।  অবনিশের জ্ঞান ফিরে আসলো, অবনিশ এর কাছে গিয়ে তার মা জিজ্ঞেস করলো,
০- বাবা কেমন আছিস?
-- মা ভালো আছি, তোমরা কেমন আছো, বাবা কোথায়, আর রুপসী কোথায়?
-- তোর বাবা অসুধ আনতে গেছে, আর রুপসীর এখনো জ্ঞান ফিরে নাই।
০- মা ডাক্তার বললো আমি নাকি দেখতে পাবোনা, কেন আল্লাহ এমন করলো বলতে পারো?
-- কে বলছে তুই দেখতে পাবিনা, আমরা চোখের ব্যবস্থা করে ফেলছি, কাল তোর চোখের অপারেশন হবে, তুই আবার দেখতে পাবি।
০- সত্যি বলছো মা, আমি আবার সবাইকে দেখতে পাবো।
০- হ্যা বাবা আবার সবাইকে দেখতে পারবি।
-- তাহলে মা আমি সবাইকে এক সাথে দেখতে চাই যখন আমার চোখ ভালো হয়ে যাবে।
০- ঠিক আছে বাবা, এখন তুই বিশ্রাম নে।

এই কথা বলে অবনিশ এর মা রুম থেকে বের হয়ে গেলেন, হাজারো কষ্ট লুকিয়ে একটি হাসি দিয়ে, রুপসীর রুমে গেলেন, রুপসীর জ্ঞান অনেক আগেই ফিরেছে, কিন্তু তার কাছে কেউ গেলেই বলতে থাকে,
০- এই এই তুই আমাকে মারতে আসছিস, আমাকে মেরে ফেলবি তাইনা, আমার অবনিশ কে তো মেরে ফেলছিস, এখন আমাকে মারবি তাই, দূরে যা সরে যা সবাই, এসব বলেই হাতের কাছে যা পায়, তাই ছুড়ে মারে সবার গায়ে।

এমন কান্ড দেখে ডাক্তার বলতে লাগলো, তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গেলেও, অবনিশ কে সে এখনো ভুলে নাই, তাকে একবার অবনিশ এর কাছে নিয়ে যাই দেখা যাক কি হয়।

ডাক্তারের কথায় তাকে অবনিশ এর রুমে নিয়ে গেলো, কাউকে না চিনতে পারলেও সে অবনিশ কে চিনতে পারলো, অবনিশ কে দেখেই কাদতে লাগলো আর বলতে লাগলো,
০- দেখো অবনিশ সবাই আমাদের শত্রু হয়ে গেছে, সবাই আমাদের দুজন কে মেরে ফেলতে চায়, চলো তুমি আর আমি অন্য কোথাও চলে যাই।

অবনিশ রুপসী কে শান্তনা দিয়ে বলতে লাগলো, কেউ আমাদের শত্রুনা তুমি আমার বুকের উপর শুয়ে থাকো, কেউ আসবে না আমাদের মাঝে।

রুপসী চুপচাপ বুকের উপর শুয়ে রইলো, কারোই বিশ্বাস হচ্ছে না, যাকে পুরো হাসপাতাল পরিবার মিলে  শান্ত করতে পারলো না, সেই মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষটিকে অবনিশ এক মুহুর্তেই শান্ত করে দিলো, সবাই এমন প্রেম দেখে অবাক হয়ে গেলো, যে পৃথিবীতে এখনো সত্যিকার ভালোবাসা রয়েছে যে ভালোবাসায় মানুষ সব ভুলে গেলেও ভালোবাসা ভুলে না, এমন ভালবাসা পৃথিবীর ইতিহাস বিখ্যাত অমর ভালোবাসার মধ্যে একটি। যা ভাগ্যবান মানুষের ভাগ্যে জোটে এমন ভালোবাসা, আর এমন ভালোবাসা বাস্তবে দেখতেও ভাগ্য লাগে।

অবনিশ এর বুকেই ক্লান্ত দেহ লুটিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো রুপসী। সবাই তাকে ধীরে ধীরে উঠিয়ে তার ক্যাবিনে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়েই দিলো।

সবাই অপেক্ষা করছে, আজকের রাত্রিযাপনের আর কালকের সুর্যের আজ অবনিশ এর চোখের অপারেশন,  সবার অপেক্ষা কাটিয়ে ভোরের সুর্য কিরন উঠলো, সবাই অবনিশ এর সাথে কথা বলল, অপারেশন এর আগে তার মা ও কথা বলে বিদায় নিলো, রাতের বেলা অবনিশ এর অপারেশন হবে, তাই এখন অবনিশ কে বিশ্রাম নিতে হবে।

রাত ৯ টায় অবনিশ কে অপারেশন থিয়েটার এ নিয়ে যাওয়া হলো, অবনিশ কে নিয়ে যেতে দেখে, রুপসী পাগলের মত চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলো, কোথায় নিয়ে যাও আমার অবনিশ কে, তাকে মেরে ফেলার জন্য নিয়ে যাচ্ছে, এসব বলে ডাক্তারের হাত মুখ খামচাতে লাগলো, ডাক্তার বাধ্য হয়ে তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে অবনিশ কে নিয়ে গেলো।

অপারেশন করতে করতে ভোর হয়ে গেলো, অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে, ৩ দিন পর তার ব্যান্ডেজ খুলবে। সবাই অপেক্ষা করতে লাগলো, সেই ৩ দিনের তারপর থেকে অবনিশ আবার দেখতে পাবে, এই পৃথিবীর সৌন্দর্য ভরা অপরুপ দৃশ্যকে।

। আজ অবনিশ এর চোখের ব্যান্ডেজ খুলবে সবাই সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে, বাবা মা, তার আত্মীয় স্বজন, রয়েছে রুপসীও, রুপসী সবার থেকে আলাদা হয়ে, অবনিশ এর একদম বাহুডোরের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

ডাক্তার ধীরে ধীরে চোখের ব্যান্ডেজ খুলতে লাগলো, ব্যান্ডেজ খোলার পর অবনিশ সব কিছু ঘোলাটে দেখতে লাগলো, ধীরে ধীরে তার চোখের ঘোলাটে ভাব দূর হয়ে সব কিছু স্পষ্ট হতে লাগলো, একে একে সবাইকে প্রান ভরে দেখলো, নয়ন ভরে দেখলো, যেন কত বছর পর সবাইকে দেখতে লাগলো, অবনিশ এর দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবায় সবার মুখে আনন্দের ছাপ ফুটে উঠলো, সবাই খুব আনন্দিত, কিন্তু অবনিশ এর চোখ আটকে গেলো তার মায়ের দিকে তাকিয়ে, তার মা একটি সাদা লাঠি হাতে চোখে কালো চশমা পড়ে একটি হুইল চেয়ার এ বসে আছে। অবনিশ মুখে একটু আনন্দ নিয়ে বলতে লাগলো
০- মা আমার এখন এসবের দরকার নেই, সাদা লাঠি দিয়ে চলতে হবে না, লাগবে না কালো চশমা তুমি কেন এগুলো পড়ে আছো, তোমার ছেলে এখন সব দেখতে পাচ্ছে।

সবার মুখ অন্ধকারে ছেয়ে গেলো অবনিশ এর কথা শুনে, পাশ থেকে ডাক্তার সাহেব বলতে লাগলো, অবনিশ এগুলো হয়ত এখন আপনার প্রয়োজন নেই, কিন্তু আপনার মায়ের প্রয়োজন আছে।
০- কি আবোল তাবোল বলছেন ডাক্তার, মায়ের কেন দরকার হবে?
-- কারন আপনার মায়েই সেই মানুষ যে আপনাকে চোখ দান করেছে, যার চোখ দিয়ে আপনি সবাইকে দেখছেন, সে মানুষটি আর কেউ না আপনার মা। আপনার মা তার দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে আপনার দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে এনেছে।

ডাক্তারের কথা শুনে অবনিশ এর যেন দম বন্ধ হয়ে আসতেছিলো,  কোনভাবেই তার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না, গড় গড় করে ঝরে পড়তে লাগলো, তার চোখের পানি।

অবনিশ এর চোখে পানি দেখে, রুপসী বলতে লাগলো,
০- অবনিশ তুমি কাদতেছো তাহলে আমিও কাদবো

কথাটাই বলে রুপসী হাউমাউ করে কেদে দিলো, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষও চোখের পানির কষ্ট বুঝে, যদি হয়, সে ভালোবাসার মানুষ তাহলে তো আর কোন কথাই নেই, রুপসী কাদতে কাদতে অবনিশ এর বুকে তার দেহ লুটিয়ে দিলো, অবনিশ এখন কিভাবে কি বলবে বুজতে পারছেনা,  এক পাশে মানসিক ভারসাম্যহীন তার ভালোবাসা অন্যদিকে জন্মদাত্রী মায়ের অন্ধত্বের কারন। অবিনিশ নির্বাক দৃষ্টিতে একবার মায়ের দিক, একবার রুপসীর দিক, একবার পুরো পরিবারের দিক তাকিয়ে শুধু চোখের জল ফেলে যাচ্ছে, সবাই মিলে পুরো কলোনিকে নিস্তব্ধ কলোনী করে রেখেছে, সবাই যেন আজ মৌনব্রত করেছে এমন ভাব দেখে অবনিশ এর মা বলে উঠলো
০- কি হয়েছে সবাই এমন চুপ কেন, কেউ কথা কেন বলছে না।

কেউ তার কথার উত্তর দিলোনা, কিছুক্ষন পর অবনিশ বলল মা তোমরা কোন মাটি দিয়ে তৈরি, কিভাবে পারো সন্তানের সুখের জন্য সবকিছুর কুরবানী দিতে?
০- অবনিশ তুই যখন আমার গর্ভে ছিলি, যেদিন থেকে আমার রক্ত মাংস খাইয়ে তোকে একটু একটু করে বড় করতেছিলাম, সেদিন থেকে একটু করে আমার সকল সুখ তোর সুখের সাথে মিলে গেছে, যখন তুই ক্ষুদার যন্ত্রনায় কেদে উঠতি, আমি আমার বুকের দুধ খাইয়ে তোকে শান্ত করতাম, কসম করে বলছি আমার ক্ষুদাও মিটে যেতো যখন তুই দুধ খেয়ে তৃপ্তির সহিত খিল খিল করে হেসে উঠতি। এ চোখ দিয়ে কি করবো, যখন নিজ গর্ভের সন্তান এই পৃথিবী দেখতে পারবে না, আমি কি করে এই পৃথিবী দেখবো, আজ থেকে আমার হয়ে তুই এই পৃথিবী দেখবি, আর আমাকে শুনাবী এতেই আমার সুখ।

-- কি দিয়ে শোধ  করবো মা তোমার ঋন, তোমার দুধের ঋন, তোমার দেওয়া আমার স্বপ্নের জন্য কুরবানীর ঋন, মা আবার যদি জন্ম হই, তাহলে যেন তুমি আমার ছেলে হয়ে জন্ম হও, আর আমি তোমার মা, এরপরেও যদি পারি তোমার ঋন শোধ করতে, আর এই জন্মে সব সময় যেন তোমার চরন পানে থাকতে পারি এই কামনা করি। 

কথাগুলো বলে অবনিশ গিয়ে তার মা কে জড়িয়ে ধরে তার কপালে একটি চুমু দিলো, সবাই অবনিশ কে জড়িয়ে নিলো ভালোবাসার আবেশে, রুপসীও এসে অবনিশ কে জড়িয়ে নিলো, আর বলতে লাগলো,
০- অবনিশ তুমি কেদোনা, তাহলে কিন্তু আমিও কাদবো  আর এরা সবাই তোমাকে আমাকে মারতে চায়।

অবনিশ রুপসীকে আলতো বেশে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,
০- কেউ আমাদের মারতে চায়না, এরাই যে আমাদের বেচে থাকার উৎস, আমি যেমন তাদের ভালোবাসি তারা আমাদেরকে তার থেকে হাজার গুন বেশী ভালোবাসে।

রুপসী মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলতে লাগলো,
০- ওহ, তাহলে আমিও তাদের জড়িয়ে ধরবো


এই বলে রুপসী সবাইকে জড়িয়ে ধরলো। তারা সবাই হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে গেলো, এমন প্রেম এমন পরিবার দেখে ডাক্তারের ও দুচোখ নয়নে ভরে গেলো, হাসপাতালের সমস্ত কর্মকর্তা তাদের ভালোবাসা, মায়া, মমতা শ্রদ্ধা দেখে চোখের পানি না ফেলে পারলো না।

অবনিশ তার ভালবাসার মানুষ রুপসী, দৃষ্টিশক্তি হীন মা,  বাবা, ভাই সবাইকে নিয়ে সুখের জীবন ভোগ করতো লাগলো, যতই অভাব যতই বিপদ আসুক না কেন, তাদের সুখের সুতোয় বিন্দু পরিমান আচ আসতে দেয়না।

এই তো মা, যে গর্ভধারিণী,  যে জন্মদাত্রী, এ মায়ের তুলনা কখনো কোনদিন কোন কিছুতেই দেওয়া সম্ভব না, নাইবা দেওয়া সম্ভব মায়ের ভালোবাসা, আত্মত্যাগ এর সংজ্ঞা।

এই যে কালো মেয়েটি রুপসী, বর্তমানে মানসিক ভারসাম্যহীন এক মেয়ে, এই মেয়ের ভালোবাসার সংজ্ঞাই বা কোন ক্যালকুলেটর দিবে?

ভালোবাসা, সুখ কোনদিন টাকা দিয়ে কেনা যায়না,  ভালোবাসা শুধু ভালোবাসলেই পাওয়া যায়, সুখ শুধু আত্মত্যাগ করলেই পাওয়া যায়। ধনী হোক গরীব হোক, চাইলেই সুখে থাকার অধিকার সবার আছে, কিন্তু ভালোবাসাকে যারা রুপ জ্ঞানে মাপে তাদের জন্য ভালোবাসা নেই, ভালোবাসা পেতে হলে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসতে হবে। আজ আমারো কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে।

হ্যা জন্মদাত্রী মা, ১০ মাস ১০ দিন রেখেছিস তোর গর্ভে,
খাওয়াইয়াছিস রক্তের মিশ্রনে তোর বুকেরই দুগ্ধ,
কেমন করে মা, কেমন করে!
শোধ করিবো তোর ঋন।

একটু একটু করে শিখিয়েছিস মা,
চলিতে কঠিন পথ,
কেমন করে মা, কেমন করে!
ভুলবো সে পথ।

তোরই পায়ের নিচে, ও মা স্বর্গ যে আছে,
স্বর্গ ছেড়ে কোথায় যাবো কোন দেশের তীরে,
রাখিস রে মা, তোর চয়নে,
মরনের ডাকে,
শেষ নিশ্বাস যায় যেন মা তোর মাতৃক্রোড়ে।

তুই বন্ধু,  তুই আপন, তুই যে সুখের দিশা,
এ সুখ মা তুই নিস না কেড়ে আমায় ফেলে দিয়ে,
তোর আগে যেন মরন সুধা দেয়গো খোদা মোরে।

আজো অবনিশ এর পরিবারে সুখের বিন্দু পরিমান কমতি নেই, মা, স্ত্রী বাবা সবাইকে নিয়ে সুখের জীবন কাটিয়ে যাচ্ছে, আজ মানসিক ভারসাম্যহীন তার ভালোবাসা রুপসী মা হতে যাচ্ছে, যদিও তার মানসিক অবস্থা আগের থেকে অনেক ভালো ধীরে ধীরে সে পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে এক মায়ের চরিত্র তে পদার্পন করবে। ভালোবাসা হোক ভালোবাসার মত, পরিবার, স্বজন, সবাইকে নিয়ে গঠিত হোক সত্যিকারের ভালোবাসা, ভালোবাসায় কোন স্বার্থ থাকতে নেই, স্বার্থের ভালোবাসায় সুখ নেই, আত্মত্যাগী ভালোবাসাতেই এই পৃথিবীর সুখ রয়েছে। এই ছিলো একটি গল্প, একটি পরিবারের গল্প, একটি প্রেমের গল্প, একটি আত্মত্যাগী গল্প, একটি নিঃস্বার্থ সুখের গল্প।
.
লেখা: #Tashriq_Intehab


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>