রাস্তার পাশে চাটাই এর বেড়া দেয়া দোকান।
যা নেবেন ২০ টাকা। যা নেবেন ২০ টাকা। বলে দোকানদার রাস্তার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করছে।
কোট প্যান্ট স্যুট টাই বিক্রয় হচ্ছে দেখে জগাই থমকে দাড়ালো। ওমা কি আজব শহর রাস্তার ধারেও কোট প্যান্ট স্যুট টাই পাওয়া যায়। তাও মাত্র ২০ টাকায়?
জগাই ছেড়া জামার বুক পকেটে হাত ঢুকায়। আজ দু সপ্তাহ শহরে এসেছে রাস্তা নির্মানের কাজে। দুসপ্তায় রোজগার হয়েছে ৪৫০০ টাকা। ৩০০০ টাকা বাড়ির পাশের সামসুদ্দিনের কাছে বাড়ি পাঠিয়েছে বৌ বাচ্চার জন্য। হাতে আছে ১৫০০ টাকা।
জগাই এর বড্ড শখ হয় কোট প্যান্ট পরার। সে দোকানে যেয়ে একটা কোট একটা প্যান্ট, একটা স্যুট একটা টাই কিনল দাম কষাকষি করে ৭০ টাকা দিয়ে। পকেটে এখনো ১৪৩০ টাকা থাকল।
এবার সে দোকানের কোনে গিয়ে পরে নিল সদ্য কেনা কোট প্যান্ট।
ঐ বুট নিবেন বুট। হকারের হাকে জগাই তাকায় রাস্তায়। দ্যাখে একটা বড় ঝাকাতে করে রংবেরং এর বুট বিক্রয় হচ্ছে।
কি আজব শহর গাও গিরামে দেখে এসেছে ঝাকাতে করে হাস মুরগী বিক্রয় করতে আর এখানে শয়ং বুট।
জগাই তাড়াতাড়ি হাক দেয় ও বুট বাউ এদিক লও এদিক লও।
বুট ওয়ালা বুটের ঝুড়ি নামায় জগাই এর সহযোগীতায়।
অনেক দর কষাকষি করে পুরো ৫০ টাকা দিয়ে জগাই এক জোড়া বেশ চকমকে বুট কিনে ফেলল।
আর কে দ্যাখে। এবার নিশচয় আমাদের গাও এর চৌধুরীর জজ পোলার মতন ই লাগবো আমায়। জগাই ভাবে আর মিচকি মিচকি হাসে
জগাই নাপিতের দোকানে ঢুকে বেশ আরাম করে আয়নার সামনে বসে।আহা বুট জোড়া পায়ে কোট প্যান্ট টায়ে বেশ বাবু বাবু লাগছে।
নাপিতকে বেশ সাহেবী কায়দায় জগাই হুকুম করে ঐ বেডা নাপিত মোগো চুল আন ছাটি তোগো দে শাহরুখ খান লাগউত।
নাপিতও বেশ কায়দা করে চুল ছেটে দিয়ে পয়শা হাকাইল ১০০ টাকা।
পরিশেষে বহুত দর কষাকষি করে ৯০ টাকা দিয়া নাপিতের দোকান থেকে বের হয়ে এলো জগাই
এখন জগাইকে বেশ স্মার্ট স্মার্ট লাগছে। হঠাত জগাই এর চোখে পড়ে পুরোনো গলির পাশে কাচ ঘেরা দোকানে।
লাল কাল সাদা নীল সবুজ কাচ ফ্রেমে আটা নানান পদের সানগ্লাস। আহা একটা সানগ্লাস ছাড়া বাবু বাবু ঠিক মানাচ্ছেনা।
তাই জগাই বেশ দর কষাকষি করে ১২০ টাকা দিয়ে কিনে নিল একটা সানগ্লাস।
চশ্মা ঘরের আয়নাতে জগাই দাঁড়ায় সানগ্লাস চোখে দিয়ে। একি! কে এটা চেনাইতো যায়তক না।
এক্কেরে চৌধুরীর জজ পোলার লাহান দেহায় দেহি।
জগাই ভাবে আর ভাবে। এত্ত লেখা পড়া শিখে ক্যান সব ভদ্দরলোক হয়। এ্যম্নেই তো পোষাকেই ভদ্দরলোক হই গেলুম। ভদ্দর লোক সাজতে আর কয় টাকা খরচ হল।
জগাই হিসেব কষে ৭০+ ৫০+ ৯০+ ১২০, মোট ৩৩০ টাকাতে ভদ্দরলোক। কে তারে এখন কইবে রাস্তা নির্মানের জন্য আসা জগাই এটা।
হঠাত মাইকিং কানে যায় জগাই এর। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে। আস্তে আস্তে তার দিকেই আসছে।
ফ্রি সিম, ফ্রি সিম। একেবারে ফ্রি সিম সাথে ইন্টারনেট প্যাক ফ্রি। ফ্রি সিম।
জগাই ভাবে মাইকে সিম বিক্রি করে ক্যান? কি আজব শহর। বুট বিক্রি হয় ঝাকে আর সবজি ফ্রি দেয় মাইকে। গেরামে তো আইসক্রিম বিক্রি হয় মাইকে। বা কেও মরে গেলে মাইকে বলে বেড়ায় আর শহরে সবজি ফ্রি দিয়ে বেড়াচ্ছে মাইকে বলে। আবার ইন্টারনেট নাকি জানি মশলাও দিচ্ছে ফ্রি সাথে।
আস্তে আস্তে জগাই সিম বিক্রেতার নিকট যায়। বাইগো তোমাগো এ দেশী সিম নাকি ইরি সিম দেওগো। আর ইন্টারনেট কোন দ্যাশের মশ্লাগো বাইজান?
সিম বিক্রেতা মটকা মেরে হাসে জগাই এর কথায়। বলে আরে ভাই এ সিম খাওয়া সিম না। এ সিম ফেসবুকের সিম। এই সিম মোবাইলে ভরে ফোডো দিলে হাক্কার পরীর লান মেয়েরা লাইক কমোন্টে তোমারে ছেলিব্রেটি করি তুলবো গো ভাইসাপ।
নিয়ে ন্যান এককান সিম। মোবাইলে লাগাইলেই হেত্থন পৃথিবীর বেবাগ মানষের সাথে পরিচয় ঘোটবো। কত্ত মাইয়ার ভালবাসা পায়বা। সেসব মাইয়ারা বেহেস্ত খানার হুর পরিগোর লাগান। প্রেম পিরিত কইরা ভদ্রলোক সাজি জাওন যায়। আর ইন্টারনেট হল মাইয়াগো লগে প্রেম করার ব্যবস্থা করা। ছেলেব্রেটি হইলে কত্ত লাইকু কমেন্টুতে তুমিতো ভদ্রলোক সাজি যাবা গো।
জগাই অবাক হয়ে যায়। বিস্ময়ে আবিভুত জগাই একটা সিম ফ্রিতে নিয়ে নেয়।
সিম কোম্পানীর লোকরাই জগাইকে সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইলের দোকান দেখিয়ে দেয়।
চোরাই মোবাইলের দোকানে ঢুকে জগাই আরো হতবাক। কত শত ছোট ছোট যন্ত্র। এই যন্ত্রের মাঝেই নাকি পৃথিবী দেখা যায়। বিদেশী মাইয়াগো দেখা যায় ছেলিব্রেটি হওন যায়।
জগাই সদ্য কেনা সিম দেখিয়ে মোবাইল চাই। ফেসবুক খুলি দিতি হবি।
দোকানদার জগাইকে স্কিন টাচ মোবাইল ধরায় দেয় ৮০০ টাকায়। যেহেতূ চোরায় মাল যা পাওয়া যায় তাই সই।
দোকানদার আরো চল্লিশ টাকা ফ্লাক্সি দিয়ে ১৫০০ জিবি নেট প্যাক চালু করে দেয়। প্রথম সপ্তাহে ৭০০ জিবি।
ক্যামেরা ফিট মোবাইল ছবি তোলাও দেখিয়ে দেয়।
এখন ফেসবুক আইডি খুলতে হবে। দোকানদার জানতে চাই নাম দিব কি?
জগাই অনেক ভেবেও নাম পায়না খুজে পরিশেষে জগাই থেকে জেন্টল্ম্যান গবার্ট ইস্কান্দার মির্যা দিয়ে ফেসবুক আইডি খোলা হল।
এবাউটে লেখা হল ফেসবুক ওয়ার্ক অফ ইউনিভার্সিটি। স্টুডেন্ট অফ ইন্টারন্যাশনাল টু কানাডা। ইত্যাদি ইত্যাদি।
৪৬ বছরের জগাই বয়সের জায়গায় দিলেন ২৬। কারন ফেসবুকে উঠতি যুবক যুবতীরা বড্ড বেশী তাড়াতাড়ি ছেলিব্রেটি হয়ে যায়।
মোবাইল দোকানদার জগাইকে পোজ দিয়ে দাড়াতে বললেন। জগাই ও সার্ট প্যান্ট কোট, বুট, টাই, চশ্মা পরে দুহাত বগল দাবা করে দিলেন এক পোজ।
পাশেই মোটর ম্যাকানিকের কারখানা। জগাই দাঁড়িয়ে থাকা নোয়া গাড়ির দরজার হাতল ধরে দাঁড়ায়। ফ্ল্যাশ উঠে মোবাইলের ক্যাম পোষ্টে
ওয়াও দারুন সট। এক সেলেন্ট। জগাই নিজের ছবি দেখে নিজেই চিনতে পারেনা। জগাই চারিপাশে তাকিয়ে খুজে কার ছবি উডাইল। জগাই জানতে চাই বাইগো কার ফোডো তুলেন।
দোকানদার জগাই এর ফেসবুক এ ছবি আপ্লোড দিতে দিতে বুঝিয়ে দেয়। এটা তার ই ছবি। কিছু ফ্রেন্ড রিকু পাঠায় তারপর ফেসবুকে ছবি আপ্লোড, ইনবক্স ফাংশন, ট্যাগ করার ফাংশন শিখিয়ে দেয়।
জগাই অপলোকে তাকিয়ে থাকে ফেসবুকে আপলোড হওয়া নিজের প্রফাইল ছবির দিকে। এযে সাক্ষাত ভদ্রলোক।
জগাই নিজের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ সয়ে যায়। এখন যে চৌধুরীর জজ ছেলেকেও টেক্কা দিয়ে চলতে পারবে।
ইতিমধ্যে ফেসবুকে বেশ কিছু বন্ধু বান্ধব হয়। সবাই কি সুন্দর পোষ্ট লিখে। ছবি দেয়। কিন্তু কিছুই পড়তে পারেনা জগাই।
জগাই লাইক দেয় সকলের ছবিতে।
ইতিমধ্যে জগাই এর ছবিতে অনেক লাইক কমেন্ট পড়েছে। কিন্তু সেতো লিখতে পড়তে পারেনা এখন উপায়?
ইতি মধ্যে তার মতন কিছু বন্ধু ও খুজে পায় ফেসবুকে। তারা আরো আগে থেকে ফেসবুক চালাই তাই কিছু কিছু বাংলিশ কথা বার্তা শিখেছে।
যেমন
hau ari,
h r u,
halo,
halu,
wh hm yr,
nais,
quin,
biutI,
bro
mem ইত্যাদি
যার অর্থ কি নিজেরায় জানেনা।
জগাই ও এসব বন্ধুদের থেকে এগুলো শিখে যায়।
জগাই ফেসবুকে খুব মজা পেয়ে যায়। যেই লিষ্টে কোনো বন্ধু এ্যাড হয় তখনি সে ইনবক্সে একটা লেটেস্ট মডেলের ছবি পাঠায় সাথে লিখে h r u mem/ bro
আবার টাইম লাইনে ছবি আপলোড করেই সব বন্ধুদের ট্যাগ করতে থাকে সে কেও বিরক্ত হোক বা না হোক।
যাহোক এভাবেই ফেসবুকে জগাই অরফে জেন্টলম্যান গবার্ট ইস্কান্দার মির্জার আবির্ভাব। আমরা সকলেই তার মংগল কামনা করি।
↧
ভদ্দরলোক (ছোট গল্প)
↧