বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৯২ আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। ১৯৭৩ সালে ১৯ মে দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার শুরু করেন। ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দশম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এই কাউন্সিলে রাজশাহীর এ, এইচ, এম কামরুজ্জামান সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুন:নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে বঙ্গবন্ধু চেয়ারম্যান ও ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী সেক্রেটারি জেনারেল হোন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের ১৮ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। অবাক বিস্ময়ে পৃথিবীর মানুষ সেদিন শোকে বিহ্বল হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ নামের একটি দেশ যিনি জন্ম দেন, সাড়ে সাতকোটি মানুষের যিনি জনক হতে পেরেছিলেন, বিশ্ব ইতিহাসে যার পরিচিতি ছিল শোষিত মানুষের নেতা হিসেবে, নির্যাতিত মানুষদের পক্ষে যিনি ছিলেন বজ্রকণ্ঠ, সাধারণ মানুষের যিনি ছিলেন বন্ধু তাকেও হত্যা করা হলো! বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে তার প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের দুঃসময় নেমে আসে ১৯৭৫ সালের পর। অভিভাবকহীন অবস্থায় ১৯৭৭ সালের ৪ এপ্রিল সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন আহ্বায়ক হয়ে একাদশতম কাউন্সিল করেন। (তবে, এর অগে ১৯৭৬ সালে দল পুনরুজ্জীবনের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন।) ১৯৭৮ সালের ১৮-২০ জানুয়ারি দ্বাদশ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে আব্দুল মালেক উকিল সভাপতি ও আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক হোন। (এ বছরই আওয়ামী লীগ (মিজান) সভাপতি ও মতিউর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে আরেকটি কমিটি গঠন করে। মুখ্যত আওয়ামী লীগ দুই ধারায় বিভক্ত হয়। কিন্তু ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে আব্দুল মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নৌকা মার্কা প্রতীক বরাদ্দ পায়। ফলে আওয়ামী লীগ (মালেক) মূল দল হিসেবে বিবেচিত হয়।) ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ত্রয়োদশ কাউন্সিল। এ কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা (শেখ হাসিনা তখন ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে) এবং সাধারণ সম্পাদক হোন আব্দুর রাজ্জাক। আব্দুর রাজ্জাক অন্য দল গঠন করলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন। নিজের জন্মভূমিতে ফিরতে পারেন না শেখ হাসিনা, তারই বাবার হাতে জন্ম নেয়া বাংলাদেশে ফিরতে না পারার বেদনা অপার! অবশেষে শত্রুকবলিত অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে নিস্ব, রিক্ত, অসহায়, এতিম শেখ হাসিনা ১৭ মে ১৯৮১ প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে আসতে সক্ষম হন। দেশে ফিরে মায়ের শীতল পরশে যে বাড়িতে বড় হয়ে ওঠেছিলেন, বাবার বুকে মাথা রেখে যে বাড়িতে আশ্রয় পেতেন ভাইবোনের নিবিড় সান্নিধ্যে, সেই ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে যাওয়ার অনুমতি ছিল না শেখ হাসিনার কি আশ্চর্য ব্যাপার! এভাবেই বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশে ক্লান্ত, শোকে মূহ্যমান শেখ হাসিনা হাল ধরলেন বাবার উত্তরাধিকার হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে ময়দানে, গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিয়ে যান জনগণের কাছে। জনগণের রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তুলেন আওয়ামী লীগকে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের নির্বাচনে প্রথম অংশগ্রহণ করেন। জনগণের বিপুল সমর্থন থাকলেও এরশাদের সামরিক কৌশলে নির্বাচনে কারচুপির আশ্রয়ে জিতে যায় জাতীয় পার্টি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৮৬টি আসন নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে। শেখ হাসিনা হন বিরোধী দলীয় নেতা।– (চলবে……)
↧