Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

আপনার সন্তান কি যৌন বিকৃতির শিকার হচ্ছে? আপনি সচেতন তো?

$
0
0

শিশুরা কিন্তু একটা ভয়হীন পবিত্র পরিবেশের মধ্যে দিয়ে বড় হয়। সবাই তাকে ভালোবাসে, আদর করে। কিন্তু একটু বড় হবার পর সে বুঝতে পারে আসলে পরিবেশটা মোটেও তত পবিত্র বা ভাল না। সমস্যা হল, কোন করুণ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে বুঝতে পারার আগে সে এই বিষয়ে মোটেও সতর্ক থাকে না। কারণ তাকে কেউ এই সব কুৎসিত বিষয়ে সতর্ক করে না। বলেন না তোমাকে বিকৃত ভাবে ব্যবহারের জন্য কিছু পশু (পুরুষ/মহিলা) মুখিয়ে থাকে।

কিন্তু এই যে শিশুটা সতর্ক হতে পারে না। তার দায় কার? কে তাকে সতর্ক করবে এবং কত বয়সে?

আমার মতে এই দায় বাবা-মার। তাদের অনেক সতর্ক থাকা উচিত শিশু যৌন নিপীড়নকারীদের ব্যাপারে। লক্ষ্য রাখা উচিত তার আদরের সন্তান যেন কারও বিকৃতির শিকার না হয়। আবার সন্তানকে খুব ছোট বয়স থেকে তার বোঝার উপযোগী করে তাকে সতর্ক করা দরকার। নিরীহ গোছের প্রশ্ন করে জানা দরকার কেউ তাকে ব্যবহারের চেষ্টা করছে কিনা। আর এ বিষয়ে কথাবার্তা খুব স্পষ্ট আর খোলামেলা হওয়া দরকার। অহেতুক লজ্জার কারণে নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসের সর্বনাশ করাটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ না।

থ্যাংকস গড! আমার মা এ বিষয়ে অসাধারণ স্মার্ট ছিলেন। আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া তিনি আমাকে এমন প্রজ্ঞাবান মা দিয়েছেন। ছোট বেলার একটা ঘটনা বলি। আমি তখন অনেক ছোট, স্কুলেও ভর্তি হইনি। বাবার সাথে তার অফিসে গেলাম। তার এক কলিগ আমকে কোলে নিবেন। কোলে উঠার পর খুব অস্বস্তি লাগা শুরু করল এবং এক পর্যায়ে আমি জোর করে তার কোল থেকে নেমে বাবার কাছে গেলাম। তিনি বারবার ডাকছিলেন। কিন্তু আমি যাব না।

কিছু দিন পর বাবা মাকে বললেন, সেই লোকটি নাকি বাচ্চাদের খুব আদর করেন। আমাকে খুব পছন্দ করেছেন এবং নিয়ে যেতে বলেছেন। আমি তো শুনেই বললাম যাব না। বাবা একটু বিরক্তই হচ্ছিল। মা বললেন যখন যেতে চাচ্ছে না, নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। এরপর আমাকে অনেক প্রশ্ন করে জানতে চাইলেন কেন যাব না। আমার উত্তর শুনে তিনি বললেন যাওয়ার কোন দরকার নেই। পরে বাবাকে আলাদা ভাবে কি যেন বললেন। আমাকেও আর যেতে হয়নি।

আস্তে আস্তে যখন বড় হয়েছি মা সব সময় খুব স্পষ্ট ভাবে কথা বলেছেন এ সব বিষয়ে। যেন বিপদে না পড়ি। ভুল না হয়।

সবচেয়ে খারাপ লাগে যে শিশুরা ছোট বেলায় এসব ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়। তাদের অনেকে পরে মানসিক বিকৃতির শিকার হয়। কলেজে যখন পড়তাম, আমার এক সহপাঠী ছিল। দেখতাম সে বাচ্চাদের একদম সহ্য করতে পারত না। এমনকি নিজের বোনের বাচ্চাদেরও সুযোগ পেলেই মারত। পরে একদিন সে বলে তার ছোট বেলার কিছু অসম্ভব কষ্টের কথা। সে বাচ্চাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, কারণ সে চায় না বাচ্চারা তার কাছে আসুক। কারণ এখন তার মাথায় বিভিন্ন চিন্তা আসে।

কোন এক বিচিত্র কারণে আমার চারপাশের মানুষরা মনে করে আমার কাছে কষ্টের কথা বলা যায়। অনেকের কষ্টের কথাই শোনার সুযোগ হয়েছে। আমি জানি বিপদ ছেলে শিশু বা মেয়ে শিশু উভয়ের জন্য। আর বিপদ গুলি পুরুষদের কাছ থেকে বেশি আসলেও মহিলারা একেবারে বাদ যায় না।

তবে অবশ্যই মেয়ে শিশুদের জন্য পরীক্ষাটা অনেক বেশি দিতে হয়। আর সবচেয়ে খারাপ বিষয় হল, এমন একজন পুরুষ (সাধারণত) তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়। যে মেয়েটির পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ/প্রিয়। সাধারণভাবে সেই লোক সম্পর্কে মেয়ের আপত্তি বাবা-মা আমলে আনেন না। আর মেয়েটিও সব কিছু শেয়ার করার সুযোগ বা পরিবেশ পায় না। আমি এমনও দেখেছি কোন লোক সম্পর্কে আপত্তি করায় মেয়ে "বেশি বুঝে" বলা হচ্ছে। কারণ মেয়েটির পরিবারে লোকটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাবা-মা লোকটির অনুগ্রহ হারাতে চান না।

আবার শিশুদের খুব ভাল বাসেন। খুব আদর করেন। এরকম ব্যক্তির ব্যাপারেও আমি মনে করি বাবা-মার অনেক সতর্ক হবার বা খোঁজ খবর করা দরকার। বাবার চাকুরীর সুবাদে আমরা তখন জয়পুরহাট সুগার মিলে থাকি। বুয়েট থেকে পাস করা এক দারুণ মেধাবী ছেলে সুগার মিলে জয়েন করলেন। আমি তখন সিক্সে পড়ি। সে লোক দেখি আমাদের বয়সী সবাইকে তার বাসায় ডাকতো টিভি দেখার জন্য। পড়া দেখিয়ে দেবার জন্য। লোকটি আসার পর পরই বাবার বদলির কারণে আমরা জয়পুরহাট থেকে পঞ্চগড়ে চলে যাই। পরে শুনি সেই লোক ৪-৮ ক্লাসে পড়া ছেলেদের নিয়ে নিয়মিত ব্লু-ফ্লিম দেখতেন। যেহেতু বাবা-মারা জানতেন তার ছেলে বুয়েটের মেধাবী ছাত্রর কাছে পড়া দেখিয়ে নিতে যাচ্ছে। তারা কখনও বিষয়টা খুব বেশি খতিয়ে দেখেননি। শিক্ষিত মেধাবী! কি বলেন!

আবার তথাকথিত শিশু সংগঠক বা কিশোর সংগঠকদের ব্যাপারেও খোঁজ নেয়া দরকার। নিজেদেরও সতর্ক থাকা উচিত। তবে নিঃসন্দেহে প্রচুর মানুষ আছেন যারা সত্যিকার অর্থেই বাচ্চাদের ভাল বাসেন। এমন অনেকের কথাই জানি। কিন্তু তারপরও কিছু পিশাচ থেকেই যায়। তাদের জন্য সতর্ক থাকা দরকার।

অনেক কথাই লিখে ফেললাম। সব শেষে আমার মনে হয় বাবা-মা এর সর্তক আর বুদ্ধিমান থাকাটা খুব দরকার। প্রয়োজন স্পষ্ট কথার। সন্তানদের এই ভরসা দেয়া দরকার যেন তারা তাদের কষ্টের কথা, লজ্জার কথা বাবা-মার সাথে নির্দ্বিধায় শেয়ার করতে পারে। তারা যেন তাদের কথা শেয়ার করতে পারেন, সেই পরিবেশও থাকা দরকার। সন্তানদের বিশ্বাস করতে হবে। প্রয়োজনে দোষী ব্যক্তির ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।

আমার বন্ধুদের (সহপাঠী) সাথে কথা বলে দেখেছি এ বিষয়ে। প্রায় সবারই কিছু না কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা আছে। বিশেষত তারা যদি একটু সুন্দর হয়। কাজেই বিষয়টা একেবারে ফেলে দেয়ার মত না। আর আমি তাদের সরাসরি জিজ্ঞাসা করে জেনেছি - তাদের বাবা-মার এ বিষয়ে কোন সতর্কতাই ছিল না।

তাই বাবা-মার উচিত সতর্ক হবার। অপ্রয়োজনীয় লজ্জা বা সংকোচ দূর করার। নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটির কল্যাণে।

আমি আমার চারপাশে এরকম অসুস্থ, বিকৃত মানুষ দেখি। তাদের দেখে, তাদের আচার দেখে আমি বুঝতে পারি তারা অসুস্থ। কখনও দেখি শিকার নিজেই শিকারী হয়ে উঠছে। ধীরে ধীরে আর একটা সুন্দর জীবন অহেতুক বিকৃত হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমার কিছু করা থাকে না। সতর্ক হওয়া খুব দরকার। খুবই।



[বিষয়টা ইদানিং খুব ভাবায়। আর কি করণীয় থাকতে পারে দয়া করে আলোচনা করবেন।]


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>