Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

কেন এলে? ভিন্ন আলোয় দেখা

$
0
0

'কেন এলে? ' -এর বিয়োগাত্মক সমাপ্তি সবার মন খারাপ করে দিয়েছিলো। সবার মন খারাপ দেখে আমারও খারাপ লেগে গেলো। তাই এটা একটু নতুন করে লিখলাম। মিলনাত্নক।' কেন এলে?' -এর মূল পরিণতি যেটা দিয়েছিলাম সেটাই থাকবে। এটা একটু নতুন আলোয় দেখবার মত ব্যাপার। ভালোলাগতেও পারে  smile

শেষের কিছু অংশ থেকে..

তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। মাজনুনের ব্যতিব্যস্ততা কোনোভাবেই ছুঁইছে না নীলিমা আর রেয়ান কে। শেষবেলায় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এসময়টা বড় মূল্যবান-রেয়ান মনে রাখবে। মনে রাখবে ডাগর দু’টি জলভরা চোখ। ভাষাহীণ নীরবতা যে অনন্য অপ্রকাশ্য সেতুবন্ধনের কথা বলছে...মনে রাখবে...রেয়ান আজীবন তুলে রাখবে স্মৃতির মণিকোঠায়।
-ভালো থাকবেন। রেয়ান বলে। ‘আপনিও’ নীলিমার ভাঙ্গা কণ্ঠ!

হুশ করেই বেরিয়ে যায় সি আর-ভি টা। দূরে যেতে যেতে নীলিমা দেখে রেয়ানের পাথর মুখে আবেগের জল! গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। যেতে যেতে একটি কথাই যুগপৎ মনে হয় দু’জনের-

‘কেন এলে?’

পরের কথা...

ক্লিফের প্রান্তে আবারও বিপজ্জনকভাবে বসে আছে রেয়ান। বৃষ্টি-ধোঁয়া গভীর রাত্রি। আকাশে প্রায় পূর্ণ চাঁদের অপার্থিব আলোর বন্যা।  বড় ভালোলাগতে থাকে। এমনি রাতেই তো বিধাতাকে জব্দ করতে চেয়েছিলো। এই যে গভীর খাদ, নীচে জিরোনো নদী...শুধু একটা লাফের প্রতীক্ষা...ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে গেলে মুছে যাবে যাবতীয় যাপিত বেদনা, হাসি-কান্না, বন্ধন...ভালোবাসা...ভালোবাসা? ...নীলিমা...নীলু...আহ, বলা হলো না! নীলু, তোমায় কত যে ভালোবাসি! ভালোবাসি, ভালোবাসি নীলু, তোমায় ভালোবাসি!!! শুনশান বনের নীরবতায় রেয়ানের চিৎকার আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এসে জমতে লাগল বুকের পিঞ্জরে। ভালোবাসাহীণতায় যে সত্তা উন্মাদ হয়ে যাচ্ছিল, তাতে একটু একটু করে জমতে লাগলো জীবনের সৌন্দর্য্য!

রেয়ানের অগস্ত্য যাত্রা আর হলো না! চিৎ হয়ে শুয়ে আছে মাটির কাছাকাছি। চাঁদটা এখন ঠিক তার উপর জোছনা বিলোচ্ছে। চাঁদের মুখে নীলিমার হাসি... জীবনে অপ্রাপ্তিও কখনো কখনো কেমন বাঁচার ইচ্ছে উস্কে দেয়! আজব!

অনেক দিন পর..

বাংলা নববর্ষে রঙ্গিন সেজেছে বাঙ্গালী পাড়া। একটা বইয়ের দোকানে নির্জন এক কোণে নিজের লেখা একটা উপন্যাসের পাতা উল্টাচ্ছিল রেয়ান রেশাদ। হঠাৎ একটা কিন্নর কণ্ঠ...
-এই তিতলি, কোথাও যাবি না বলছি...একটু দাঁড়া। বইটা একটু দেখে নেই...একটা ৩/৪ বছরের ফুটফুটে মেয়ে ঘরময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

বুকের ভেতরটা যেন ছলাৎ করে উঠলো। এ কী শুনছে সে? সেই কতকাল আগের শোনা একটা ডাক, ‘এই যে শুনছেন?’ নীলিমা...আমার নীলু...এ যে নীলুর গলা! বিস্ময়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। বেশি খুঁজতে হলো না। একটা লালপেঁড়ে জামদানি যে শরীরী ঐশ্বর্যে বুঁদ হয়ে আছে সেটা সেই খাজুরাহ’র বিনোদীনির না হয়েই যায় না!

-নীলিমা! ভরাট কন্ঠে ডেকে উঠলো রেয়ান।

চকিতে মুখ ঘুরিয়েই স্তব্ধ হয়ে গেলো। এ কী দেখছে সে?
-রেয়ান! আপনি! সত্যি? একটা ছোটখাট চিতকার দিয়ে উঠলো সে। ‘একটুও বদলায় নি’ মনে মনে ভাবল রেয়ান। কেউ কেউ মাথা ঘুরিয়ে কৌতুহলে দেখছে ওদের।
-আরে করছেন কী? হ্যাঁ আমি রেয়ান। রেয়ান হেসে ফেললো। সরল হাসি।

‘এই লোকটার হাসি এত সুন্দর অথচ কী ভাবটাই না দেখিয়েছিলো? মা গো!’ ভাবলো নীলু। তেমন একটা বদলায় নি, সেইরকম পোক্ত চেহারা। শুধু চিবুকে সেই মারকুটে ভাবটা নেই!

উভয়েই কিছুক্ষণ কিছুই বলতে পারলো না। শুধু চেয়ে চেয়ে যেন বহুকালের না মেলা কিছু হিসেব মিলিয়ে নিতে চাইল।
-কেমন আছেন? নীলিমা জিজ্ঞেস করল।
-কেমন আছি? মরতে মরতে বেঁচে আছি...হা হা হা। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না আপনার জন্যই সেবারে আর মরাটা হয়ে উঠলো না। (...হাসি)
-সে কী? বিস্ময় ঝরে নীলুর কন্ঠে।
-সে অনেক কথা! আপনি এখানে?
-বই কিনতে এসেছিলাম। আর দেখুন না কী আজব কান্ড! এই বইটার নাম ‘নীলিমায় লীন’। কৌতুহলে পড়তে গিয়ে দেখি এ যে আমার গল্প...আসলে ইয়ে...আমার আর...আপনার। কী কাকতাল দেখেছেন?  রাইটারটি কী পাজি দেখেন কীরকম অসভ্যের মত নায়িকার বর্ণনাটা দিয়েছে!
রেয়ান আবারও হাসতে শুরু করেছে।
-আরে! কী আশ্চর্য! লেখকটির নাম দেখছি রেয়ান রেশাদ। বাই এনি চান্স...আপনিই না তো আবার? চোখ মটকে তাকায় নীলিমা।
রেয়ান দমকে দমকে হেসে ফেলে। নীলিমা যা বোঝার বুঝে যায়। চাপা হাসিতে অস্ফূটে বলে ওঠে, ‘অসভ্য কোথাকার!!’ রেয়ান শুনেও না শোনার ভাণ করে থাকে।
-আপনি যে লেখক জানতাম না!
-জিজ্ঞেস আর কই করলেন? ধূমকেতুর মত এসে সবকিছু তছনছ করে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। সময়ই তো পাই নি!
-তাই বুঝি?
-হ্যাঁ, তাই-ই! ঠিক তখনি তিতলি এসে আধো আধি বোলে বলে উঠলো,
-মামণি, মামণি আমাকে ঐ বড় টুইটি টা কিনে দেবে? হঠাত রেয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তুমি কে?’
দু’বেণি ঝোলানো ছোট্ট মিষ্টি মেয়েটিকে রেয়ান কোলে তুলে নিয়ে বলে, ‘আমি, আমি তোমার একটা ছেলে, মা! চল তোমায় টুইটি টা কিনে দেই’
-না, না কী করছেন? বড় দুষ্ট হয়েছে...মাথায় চড়ালে দেখবেন সমস্ত দোকানটাই কিনে দিতে হচ্ছে!
-হোক না? আজ আমার বড় আনন্দের দিন! আজ কারো কারো জন্য সবকিছু দিয়ে দিতে পারি।
-বাব্বাহ, তাই নাকি? আপনি যে এতো আবেগী তা তো আগে বুঝি নি!
-সত্যিই বোঝ নি? কখন যে আলগোছে তুমি বলে ফেলেছে রেয়ান বুঝে উঠে না। কেবল তন্ময় হয়ে নীলিমার চোখে তাকিয়ে কী যেন খোঁজে...
বিব্রত হয়ে নীলিমা চোখ নামিয়ে নিল।

অনেকগুলি বাচ্চা খেলেছে। তিতলিও খেলছে। মুগ্ধ হয়ে তিতলি কে দেখছে রেয়ান। কী সুন্দর! এমন একটি মেয়ে যদি তার থাকত...তার আর...নী...নীলি... চিন্তাটা কেটে যায় নীলিমার ডাকে,
-কী দেখছেন? কফির পেয়ালা হাতে নীলুও সেদিকে তাকিয়ে দেখে।
-বড় মিষ্টি মেয়ে তোমার! ভাবছিলাম মেয়েটি যদি আমার হতো!
-তা করে নিলেই ত পারেন। কেউ না কেউ নিশ্চয়ই সেই রাগী ষাঁড়টির গলায় দড়ি ঝুলিয়েছে, নাকি?
-কী!! আমি ষাঁড়?
-না তো কী? ফিক করে সেই একি ভঙ্গীতে হেসে ফেলে।
-হুম! সে রকম কেউ থাকলে তো ঝুলাবে? যে পারতো সে তো কিছু না বলেই চলে গিয়েছিলো।
-ও মা! রাগ করলেন নাকি? নীলিমা বুঝে যায়। আর অন্য জন বুঝি খুব বলেছিলো?
-কীভাবে কী সব হয়ে গেলো তাই না? রেয়ানের কন্ঠে কষ্ট খেলে যায়।  ইয়ে...মজনু সাহেব কেমন আছেন?
-মজনু নয়, মাজনুন (...হাসি)। বিজনেসে মোগল সম্রাট বনে গেছে...ভালো থাকবারই তো কথা! ঠিক জানি না।
-জান না? অবাক কথা?
-হ্যাঁ, জানি না। অবাক হওয়ার কিছু নেই; মাজনুনের সাথে সেদিনের পরে আর গাঁটছড়াটা বাঁধা হলো না, দু’টো ভিন্ন মেরু মেলে কীভাবে, বলুন? আর এজন্য দায়ী আপনি।
-আমি?
-হ্যাঁ, আপনি। আপনি সেই ঝড়-জলের রাত্রিতে আমার যে কী সর্বনাশ করেছিলেন...নীলু আর বলতে পারে না।
-তবুও ভালোই আছো দেখছি...একটা  ফুটফুটে মেয়েও ...তা, সেই সৌভাগ্যবানটি কে শুনি?
-ও মা! তিতলিকে আমার মেয়ে ভেবেছেন বুঝি? আমার ভাইয়ের মেয়ে...
-তাহলে মামণি ডাকছিলো যে!
-বলতে পারেন আমার কাছেই মানুষ। ওর মায়ের থেকেই বেশি মা মনে করে আমাকে। আর, আর কাউকে জড়াই নি। এক জীবনে একটাই...
একটা ভার যেন নেমে যায় রেয়ানের বুক থেকে। নীলিমার চঞ্চল চোখ দু’টোকে নিজের কাছে বন্দী করে খুব ধীরে ধীরে বলে,
-নীলু, নীলু তোমায় ভালাবাসি।
-কিন্তু আমি আপনাকে মোটেই নয়... আপনি একটা অভদ্র, ইতর... ( ফিক ফিক হাসি)

কখন যে রেয়ানের হাতটা সন্তর্পনে নীলুর অনামিকাটা ছুঁয়ে ফেলেছে...যেখানে একদা সাদা সোনার প্রত্যাখ্যানটা ছিলো, সেই শূন্য জায়গাটিতে রেয়ানের উষ্ণ অঙ্গীকার নীরবে বসে যায়।

নীলিমা কেঁপে ওঠে। মনে মনে বলে ওঠে, ‘আবার তাহলে এলে?’


সমাপ্ত।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>