ঢাকার রাস্তায় ভলভো বাসগুলো ছিলো তীব্র খরায় এক পশলা বৃষ্টির মতো। এত চমৎকার ও আরামদায়ক বাস ছিলো যে উঠলে মনেই হতো না রাস্তায় কোন খানা খন্দ আছে। রাস্তা ভাঙ্গাচোরা হলেও বাসের ভিতরে বসে সেটা বুঝাই যেতো না। রাস্তায় যানজট পরিস্থিতিরও ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছিলো কিন্তু আফসোসের ব্যাপার, মাত্র ৮ বছরের মধ্যে এগুলো রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এত উন্নত মানের ইউরোপিয়ান বাসের যন্ত্রাংশ বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। দেশের ৯০ শতাংশ বাস, ট্রাক হচ্ছে ইন্ডিয়ান বিভিন্ন কোম্পানীর। বিশেষ করে টাটা ও অশোক লেল্যান্ড কোম্পানীর। তাই এইসব ইন্ডিয়ান বাস-ট্রাকের যন্ত্রাংশ বাংলাদেশে সবখানে পাওয়া যায় কিন্তু যে সব অত্যাধুনিক ইউরোপিয়ান ভলভো বাস কোটি কোটি টাকা খরচ করে আনা হয়েছিলো সেগুলোর কোন যন্ত্রাংশ নাকি দেশে পাওয়া যায় না।
আমি খুব মিস করি ভলভো বাসগুলো। কি যে আরাম লাগতো এগুলোতে চড়তে। বাসে উঠেই বাসের উপরের তলায় চলে যেতাম।
ইন্ডিয়া থেকে ঋন নিয়ে সেই দেশের কোম্পানীর কাছ থেকে ২৯০টি দোতলা বাস সহ এসি , নন-এসি মিলিয়ে ৪৪০টি বাস কেনা হয়েছে যা আগামী মার্চের মধ্যে ঢাকার রাস্তায় নামবে কিন্তু এগুলো তো ভলভো না।
ভলভো সার্ভিস আবার চাই।
‘এলিভেটেড এক্সপ্রেস না হলে ভলভো বাস চালু হবে না’
বিআরটিসি ৫০টি দ্বিতল ভলভো বাস নিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০০২ সালে। এগুলোর মধ্যে সচল আছে ১০টি। বাকিগুলোর মধ্যে ২০টি মিরপুর ও ১০টি গাজীপুরে মেরামত কারখানায় এবং ১০টি কল্যাণপুর ও মতিঝিল বাস ডিপোতে পড়ে আছে। পড়ে থাকা প্রতিটি বাসের মেরামতের জন্য গড়ে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ সব গাড়িকে রাস্তায় নামাতে মোট ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা লাগবে।
ভলভো গাড়ির ভবিষৎ কী জানতে চাইলে বিআরটিসির উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মেজর কাজী সফিক উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকার তো বসে নেই। সরকার আমাদের ১১০০টি নতুন ধরনের গাড়ি দিচ্ছে। ভলভোর পরিবর্তে আমরা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কোম্পানির টাটা, কমিনস, অশোক লিল্যান্ড ছাড়াও কোরিয়া, চীন থেকে আমদানি করা নতুন নতুন গাড়ি রাস্তায় নামিয়েছি। তাই ভলভোর আবেগ নিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না।’ ইউরোপ থেকে আমদানি করা এসব গাড়ির প্রতিটির দাম এক কোটি ৩২ লাখ থেকে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা।
বিআরটিসির উপমহাব্যবস্থাপক আরও বলেন, ‘আমাদের দেশ গরিব। ৮ ও ১৬ টাকার টিকিট থেকে আয় হয় খুব কম। এর বিপরীতে ৪০টি ভলভোর জন্য এত টাকা ব্যয় করার সক্ষমতা আমাদের নেই। ভলভো বাস মেরামত করে চালু করতে সরকারের কাছে নতুন করে ৫০ বছরের জন্য ঋণ নিতে হবে। এই ঋণ আমরা কত দিনে শোধ দেব, আদৌ দিতে পারব কি না তাও ভাবতে হবে।’
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গাজীপুর মেরামত কারখানায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে ভলভোগুলো পড়ে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি প্রায়-নতুন ভলভোর চাকা ও ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ পাল্টানো হয়েছে। পুরাতন চাকা ও যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়েছে। কারখানার মিস্ত্রিরাও একই অভিযোগ করেন, কে বা কারা গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে গেছে।
এমন অভিযোগের জবাবে মেজর কাজী সফিক উদ্দিন বলেন, ‘ভলভোর জন্য চাই সুন্দর রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা। আমাদের এখানকার যে রাস্তাঘাট তাতে গাড়ি দ্রুত নষ্ট হয়। নতুন গাড়ি দিনে ৪টা রাউন্ড ট্রিপ দিতে পারত। কিন্তু এখন যে গাড়িগুলো রয়েছে তা দুইটা রাউন্ড ট্রিপের বেশি চলতে পারে না। নষ্ট হওয়া কিছু গাড়িতে যন্ত্রপাতি আমদানি করে ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু কয়েক ট্রিপ দেওয়ার পর তা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আমরা তো চেষ্টার ত্রুটি করছি না।’
এত অর্থ ব্যয়ে কেন এসব গাড়ি আমদানি করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ভুলটা আমাদের আগে যারা এখানে ছিলেন তারা করেছেন। তারা কিছু না বুঝেই এটা করেছে।’
তবে তিনি বলেন, ‘দ্বিতল বাস যতো বাড়বে ঢাকা শহর থেকে যানজট তত কমবে। ভলভো গাড়ি এক সঙ্গে ১২০ জন থেকে ১৫০ জন যাত্রী নিতে পারে। তাই ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেস চালু হলে আমাদের পরিকল্পনা আছে সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আরও ২০টি নতুন ভলভো গাড়ি আমদানি করার। পাশাপাশি পুরনো গাড়ি থেকে ৩০টি গাড়ি মেরামত করে চালু করা হবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১১