শুরুতেই বলে নেই - এই টপিকে দয়া করে অন্য কোনো আসমানী কিতাব নিয়ে আলোচনা করবেন না বা অন্য কোনো কিতাবের ভুল/ভ্রান্তি/ব্যাখ্যা এসব নিয়ে ভেজাল করবেন না.. যদি এটা না মানার ইচ্ছা থাকে.. Don't Continue!
মহান/অ-মহান/আপদ/বিপদ/বদ/খারাপ/নষ্ট যাই বলুন না কেন শয়তান নামক এক সত্বা যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিরাজমান এতে কোনো সন্দেহ নেই.. হয়তোবা সেই সত্বা আমাদেরই তৈরী তবে এটাকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই.. এজন্যই এই শয়তান রচিত একটি মহা-মূল্যবান কিতাব আছে যেটাকে অনেকে বলেন আসমানী অনেকে বলেন দুনিয়াবী। তবে যে যা বলুক না কেন একটা বই হিসেবে একটা সলিড পিস অফ ওয়ার্ক হিসেবে এই ডেভিল'স বাইবেলকে যথেষ্ঠ ক্রেডিট দেয়ার আছে।
ল্যাটিন ভাষায় রচিত এই কিতাবের ল্যাটিন নাম হচ্ছে 'কোডেক্স গিগাস', যার মানে হলো বিশাল কিতাব। আসলেই বিশাল এবং কিতাবখানার কোনো খন্ড নেই, নেই কোনো শানে-নূযুল নেই কোনো মিথ্যা/সত্য ভার্সন। এটি এক পিস বই এবং বিশ্বের সবচেয়ে জাইগ্যন্টিক ম্যনুস্ক্রিপ্ট (খোলা অবস্থায় ৩ ফুট লম্বা এবং ৩ ফুট চওড়া) যেটা আপাতত সংরক্ষিত আছে সুইডেনের ন্যশনাল লাইব্রেরীতে। এটি সবসময় দেখার জন্য ওপেন না থাকলেও মাঝেমধ্যে ডিসপ্লে করা হয় এবং সেই পাতাটিই দেখানো হয় যেখানে শয়তানের এক সুবিশাল পোট্রেট আঁকা হয়েছিলো। সবাই জল্পনা-কল্পনার শত ফ্যন্টাসি থেকে এক স্টেপ এগিয়ে শয়তানের বদন খানা পরিদর্শন করতে ছুটে আসেন। যদিও বইটির হাই-রেজ স্ক্যনড এবং ট্র্যন্সলেটেড কপি অনলাইনে পাওয়া যায়, তাও রিয়েল বইয়ের পাতায় ডিমোনিক গডকে দেখা অনেকটাই 'ড্রিমস কাম ট্রু'!
পেইজ ২৯০ এ পাওয়া যায় শয়তানের এই ছবিটি
পূর্বকথা:
এই কিতাবের ইতিহাস নিয়ে গবেষনা করতে যেয়ে অতি রহস্যময় এবং mind-boggling কিছু ঘটনা খুঁজে পেয়েছেন ঐতিহাসিকরা। যেগুলোর সত্যতা নিয়ে এখনও রিসার্চ চলছে সুইডেনে। তবে এই পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায় যে এটি রচিত হয়েছে মধ্য-যুগের কোনো একসময় চেক প্রজাতন্ত্রে। যদিও প্রথম পর্যায়ে ধারণা করা হয়েছিলো যে এই কিতাবের পিছনে লেখক বলতে আছেন বেশ কয়েক বেনেডিকটিন মংক, তবে খুব নিখুঁত ভাবে হাতের লেখা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে এর রচয়িতা শুধু মাত্র একজনই যে তার আত্না শয়তানের কাছে সমর্পন করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। আবার কেউ কেউ দ্বিমত করে বলেই ফেলেছিলেন যে -- এই অসাধারণ নির্ভূল কাজ শুধু মাত্র শয়তানের হাতেই সম্ভব হতে পারে।
কন্টেন্ট:
বইটিতে টেকচুয়াল কন্টেন্টের পাশাপাশি অনেক অনেক গ্র্যফিকাল কন্টেন্ট বিদ্যমান। সেই মেডিয়্যভ্যল যুগের প্রাণীজ পার্চমেন্টের (১৬০ টি ডংকির স্কিন থেকে বানানো) উপর ইনসেক্ট ইংকে আঁকা অসাধারণ ক্যলিগ্রাফিক কারূকাজ এই ফ্যসিনেটিং বইয়ের সৌন্দর্য ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে নিয়ে গেছে। তবে শয়তানে উপাসনাকারীদের জন্য খারাপ সংবাদ হচ্ছে এই বইটির কন্টেন্ট অনেকাংশেই বাইবেলের আরো স্পেসিফিকলি নিউ টেস্টামেন্ট এবং ওল্ড টেস্টামেন্টের রিফ্লেকশনে লেখা। এখানে তথাকথিত শয়তান কর্তৃক স্বীকৃত অশ্লীল/অমানুসিক/অমানবিক/ইম্মোরাল কিছুই নেই। তবে কয়েক জায়গায় কনজুরেশন বা ম্যজিক স্পেল লিখিত আছে যেগুলো এক্সরসিসমে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়েছিলো তাও শয়তান তাড়াতে ডাকতে নয়।
তাহলে কেন ডেভিল'স বাইবেল!
এখন মনে হতে পারে এত ভালো কন্টেন্ট সহ একটি বইকে কেন শয়তানের বাইবেল বলা হবে? আসলে ঘটনা ধরে নেয়া হয় যে কোনো কারণে যাবতজীবন সাজাপ্রাপ্ত এক মংক তার জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে এই বইয়ের জন্ম দেন। তার জীবনে বাঁচার যখন কোনো উপায় ছিলোনা তখন সে ডিসিশন নিয়েছিলো যে এই ডিস্টার্বিংলি বিউটিফুল বইটি লিখে নিজেকে এবং তাঁর মনস্ট্রি স্মরনীয় করে রাখবে যুগের পর যুগ। এবং সেই অনুযায়ী প্রিজনের নিষ্ঠুর দেয়ালের সান্নিধ্যে বসেই কাজ শুরু করেছিলো এই কিতাব লেখার এবং প্রমিস করেছিলো যে এটি এক রাতেই লেখা হবে..!!! এক পর্যায়ে যখন সে উপলদ্ধি করলো যে তার একার পক্ষে এটা শেষ করা সম্ভব নয় তখন সে শয়তানের কাছে নিজের আত্না বিক্রয় করে শয়তানের সান্নিধ্যে শেষ করলো এই সুবিশাল ম্যনুস্ক্রিপ্টের কাজ, এবং এজন্যই এটাকে শয়তানের বাইবেল বলা হয়। তবে ধারণা করা হয় যদি একজনই লিখে থাকেন আস্তে আস্তে তাহলে ৩১০ পৃষ্ঠার এই কিতাবের কাজ সম্পাদনে লাগা উচিত ২০-৩০ বছর!!! সন্দেহজনক ভাবে এই বইটিতে ১০ পৃষ্ঠা মিসিং ধারণা করা হয় সেইগুলা পাতায় তখনকার মনস্ট্রির গোপন বিভিন্ন অংশ তুলে ধরায় পরবর্তিতে সেই তথ্যগুলো নষ্ট করে দেয়া হয়। পলিটিক্সের কবলে পড়ে আরো একটি আর্টের মাইল্ড ধর্ষণ বলা যেতে পারে।
এক নজরে বইটির হাত-বদল:
বোহেমিয়ার মংক কর্তৃক বইটি লিখিত হবার পর কোনো এক পর্যায়ে অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়ে বইটি বিক্রয় করা হয় প্রাগের (বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী) মংকদের কাছে। এবং তারা পরবর্তীতে এক সময় সেটা হস্তান্তর করেন রোমান এম্পেরর রুডলফ ২ এর কাছে। তিনি বইটির কন্টেন্ট নিয়ে ব্যপকভাবে অবসেসড ছিলেন। কারণ এই বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় অলৌকিকভাবে কার্যকরী অনেক ক্যস্ট বা স্পেল পাওয়া গিয়েছিলো। পরে একসময় ভাগ্যের রোষানলে বইটিকে ভয়াবহ এক আগুনের হাতে পরতে হয়েছিলো তবে এই শয়তানের বাইবেল সেই যাত্রায় অবিশ্বাস্য ভাবে বেঁচে যায় এবং সেটি সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় সুইডেনে.. সেই থেকে বইটি সুইডেনেই অবস্থান করছে
শেষকথা:
শয়তানকে মানুষ মনে-প্রাণে ঘৃণা করলেও শয়তান মনে হয় মানুষকে করে না মনে হয়। তাই কিতাবে নিজের পোট্রেটের অপর পাতায় শয়তানের প্ররোচনায় অংকিত আছে স্বর্গের চিত্র। যার মানে দ্বা্ড়ায় ডেইভল এবং হ্যভেন একটা আরেকটার পরিপূরক.. ডেইভল বা হ্যভেন এসব ধারণা সাইড বাই সাইড না থাকলে কোনো স্কৃপচার এবং মহান সত্বা বিশ্বাসেরই অস্তিত্ব থাকেনা
হ্যভেন পোট্রেট
[video (unkown provider)]
ন্যশনাল জিওগ্র্যফির এই ডকুমেন্টরী দ্বারা ইনস্পায়ার্ড