Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

টোটেম (৩য় অংশ)

$
0
0

( পূর্বকথা...
সেতুর মাঝামাঝি না আসতেই শেওলায় আমার পা পিছলে গেল। কোন রেলিঙও ছিলনা যে ধরব। নিচে ঠিক খাল ছিলনা, তবে বর্ষা কাল জন্যে প্রায় হাঁটু পানি তো ছিলই। আমি তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলাম। আর মোটর সাইকেলটাও সঙ্গে পড়ে গিয়ে তার পিছনের চাকাটা সজোরে আমার পাঁজরের উপর গিয়ে আড়াআড়িভাবে পড়ল। নিজেই টের পেলাম পাঁজরের অনেকগুলা হাড় একসাথে ভেঙ্গে গেল। প্রচন্ড ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে সঙ্গেসঙ্গেই জ্ঞান হারালাম।...)


পরে আমি কমলের কাছ থেকে এই অংশটুকু শুনি। আমাকে পড়ে যেতে দেখে সে নাকি ছুটে আসে। কোনমতে শুধু মোটর সাইকেলটা সরাতে পারে। দেখে যে খুব খারাপ ভাবে আমি আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি। কি করবে বুঝতে না পেরে সে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে আবার চৈতন মিয়ার কাছে ফেরত যায়। উনি তখন প্রায় ঘুমিয়ে পড়বার আয়োজন করছিলেন। কমলের ধাক্কাধাক্কিতে দরজা খুলে বেড়িয়ে আমার অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি ভেতরে নিয়ে গেলেন। একটু পরীক্ষা করেই দেখা গেল আমার পাঁজরের হাড়গুলো ভেঙ্গে ফুসফুসে ঢুকে গেছে। এক্ষনই হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যাবে কিনা সন্দেহ। কমল বেশ ঘাবড়ে যায়। কিভাবে আমাকে হাসপাতালে নেবে বুঝে উঠতে পারেনা। হঠাৎ তার কি মনে হতেই সে চৈতন মিয়াকে বলে যে তাঁরই তো এসব ক্ষমতা আছে, তিনিই কেন আমাকে সারিয়ে তুলছেন না। চৈতন মিয়া নাকি এসময় প্রচন্ড রেগে যান। তিনি সাধারনত এক দিনে দুটো রোগী দেখতেননা, আর এসব এক্সিডেন্ট এর রোগী থেকে পারতপক্ষে দূরে থাকতেন। কিন্তু কমল নাছোড়বান্দা হয়ে প্রায় তাঁর পায়ে ধরে বসে। এদিকে আমার শ্বাসপ্রশ্বাসও নাকি ধীরে ধীরে কমে আসছিল।

অগত্যা চৈতন মিয়া বাধ্য হয়ে আমাকে তার চিকিৎসার ঘরে নিয়ে যান। কতক্ষন ওখানে ছিলাম জানিনা। তবে অনুমান করতে পারি তার আধাঘন্টার ভিতরে আমার জ্ঞান একবারের জন্য ফিরে আসে। আমি কোন মতে একবার চোখটা মেলি। ঠিক মত শ্বাস নিতে পারছিলামনা। বুকে প্রচন্ড ব্যাথা। পা দুটোতে কোন সাড়া বোধ করছিলামনা। ঘরে দুটা মোমবাতি জ্বলছিল। তার আলোয় আমি দেখি চৈতন মিয়া চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বসে আছে আর প্রচন্ড ঘামছে। পরে মনে হল ওটা ঠিক ঘাম নয়, কেমন যেন তেলের মত। আর ঠিক যেন তার কান বা নাক এসব জায়গার আশেপাশে জমা হয়ে আছে। হঠাৎ আমি যা দেখলাম তাতে আমার ওই অবস্থাতেও শিউরে না উঠে পারলামনা। চৈতন মিয়া আচমকা নড়েচড়ে বসে তার চোখ মেলল, দেখলাম তাঁর চোখের সাদা অংশ যেন গলে গলে বের হয়ে গাল বেয়ে গড়িয়ে আসছে, আর তিনি দুই হাতে তা গাল থেকে তুলে তুলে নিয়ে হাতে জমা করে দুই হাত দিয়ে টিপে টিপে মন্ডের মত বানাচ্ছেন। তবে খোলা চোখ দিয়েও কিছু দেখতে পাচ্ছেন বলে আমার মনে হলনা। কিছুটা মনে হল যেন কোন ট্রান্স-স্টেট অবস্থায় আছেন আর একটু একটু সামনে পিছনে দুলছেন। হঠাৎ মন্ডটা এক পাশে রেখে তিনি দুই হাত দিয়ে সজোরে আমার পাঁজর চেপে ধরলেন। তীব্র ব্যাথায় আমি আবার জ্ঞান হারালাম।

এর কতক্ষন পর আমার জ্ঞান ফেরে আমি ঠিক জানিনা। অনুমান করি তিন, চার ঘন্টা হবে। চোখ মেলে দেখি ঘরের মোমবাতি গলে শেষ হয়ে গেছে। আবছা একটা আলো ঘরে দেখা যাচ্ছে। মনে হয় বাইরে ভোর হয়ে গেছে। পাশে তাকিয়ে দেখি চৈতন মিয়া অস্বাভাবিক ভাবে শুয়ে আছে। আমি একটু ঘাবরে গেলাম, মারা গিয়েছে নাকি? কাছে গিয়ে দেখলাম না শ্বাস নিচ্ছে। হঠাৎ আমার মনে হল মারা যাওয়ার কথা তো আমার। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি কিসের পাঁজর ভাঙ্গা, কিসের কি, পুরোপুরি ঠিক আছে। হাত দিয়ে টিপেটুপে দেখলাম সামান্য ব্যাথাও নেই। পায়েও জোর পাচ্ছি। নিজেই উঁঠে দাঁড়ালাম। একটু হাঁটাচলা করে দেখলাম নাহ্‌, নিজেকে তো পুরোপুরি ঠিকই মনে হচ্ছে। শুধু মাথায় একটা ভোঁতা ব্যাথা। স্বপ্ন দেখছি নাকি?

যাই হোক, কি করব বুঝতে না পেরে যে মাদুরে শুয়ে ছিলাম ওখানেই এসে বসলাম। হঠাৎ দেখি চৈতন মিয়ার বসার যায়গার পাশে একটা কাঠের বাক্স। মানুষের জিনিস, না বলে খোলা ঠিক হয় কিনা, কিন্তু কৌতূহল সামলাতে না পেরে আমি বাক্সটা খুললাম। ভেতরে দেখি চারটা ছোট ছোট মোমবাতির মত কি যেন। একটা বের করে হাতে নিলাম। বেশ ভারী। এক চিলতে আলো যে আসছে তার সামনে নিয়ে মনে হল মোমবাতি না, একটা মূর্তির মতন, দেখে মনে হয় সাদা রঙের কোন নরম পাথর দিয়ে তৈরী। কিছুটা স্বচ্ছ মনে হল। জিনিসটা আরেকটু ভাল মত দেখতে যাব এমন সময় চমকে খেয়াল করলাম চৈতন মিয়া উঠে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কখন জেগেছে টেরই পাইনি। আমার দিকে তাকিয়েই বলল
- জিনিসটা রেখে দেন।
আমি জিনিসটা রেখে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করেই বসলাম
- কি এটা।
- কেন? এত কাছ থেকে দেখলেন, বুঝা উচিৎ ছিল, ওইটা কি।
- বুঝলামনাতো!
- আগেই বলছিলাম, সব জিনিস সবার বুঝার মত না। চলেন, বাইরে চলেন।
- শুনেন, আমার ভাঙ্গা পাঁজর কিভাবে সারাইছেন তা আপনিই জানেন, শুধু বলেন কাল আপনার চোখ থেকে কি জানি বের হতে দেখেছি, আপনি হাতে জমা করছিলেন, ওইটা কি ছিল?
চৈতন মিয়া খানিকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর বললেন
- ওইটা কি জিনিস আমি নিজেও জানিনা। ওই সময় আমার মাথা ঠিক কাজ করেনা। প্রত্যেকবার রোগী সেরে উঠার পর আমার হাতে দেখি একটা মূর্তি আছে। যেই জিনিসটা বাইর হয় সেইটা দিয়া মূর্তিটা আমিই হয়তো বানাইছি, কিন্তু মনে থাকেনা। আমি ওইগুলা বাক্সে জমায় রাখি।
- তার মানে ওই বাক্সটার ভিতর আমার আর কমলের মূর্তি আছে!! এতদিন ধরে এতগুলা মানুষের চিকিৎসা করছেন, নিশ্চই বাকি সবারই মূর্তি আছে। কিন্তু বাক্সে তো মাত্র চারটা।
- অন্যগুলা যার যার মূর্তি, তার তার কাছে গেছে।
- তাইলে অন্য গুলা যদি বাকিদের দিয়ে থাকেন তাইলে আমাদের ওইগুলাও আমাদের দিয়ে দেন!!
চৈতন মিয়া একটু বাঁকা হেসে বললেন
- পাইবেন, সময় হইলে ঠিকই পাইবেন।
- মানে? কোন সময়, কখন পাব?
- শুনেন, আমি যেইগুলা করি এইগুলা বে’দাতি কাম, আল্লা আমারে জীবনেও মাফ করবনা। মাইন্‌ষের জান নেওয়ার জন্যে তিনি আজরাইলরে পাঠান, আমি তারে ফিরায় দেই। আজরাইল ফেরত যাওয়া পছন্দ করেনা। হে একসময় আবার ঠিকই ফিরা আইব।
- জন্মালে মরতে হবে, এতো সবাই জানে।
- হ, সবাই-ই মরব। এখন উঠেন। আবার বৃষ্টি আইতে পারে। সকাল সকাল রওনা দিয়া দেন।

বাইরে দেখি আমার মোটর সাইকেলটা দাঁড়িয়ে আছে। বাইরের ঘরে কমল ঘুমাচ্ছে। তাকে ডেকে তুললাম। আমি পুরোপুরি ভাল আছি দেখে সে কিছুটা অবাক হলেও খুশিই হয়ে উঠল। উঠে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে এসে বলল যে মোটর সাইকেলের বেশী কিছু হয়নি, আবার চালানো যাবে। আমরা আর দেরী না করে রওনা দিয়ে দিলাম। এবার আর সাঁকোর কাছে না গিয়ে ঘুর পথে গিয়ে শেষ পর্যন্ত রতনগড়ে ফেরত গেলাম।


চলবে...


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>