“সবুজ পাঠশালা’’ পাঠ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক ‘নতুন পন্ডিত’। যথারীতি তার বিচ্ছু ছাত্রদের মাঝে অন্যতম- ঈগল, আশরাফুল, মাটির মানুষ ও বাবু মিয়া। একদিন ক্লাসে-
পন্ডিতমশাই- (হাজিরা ডাকছেন) রোল এক।
ঈগল- আছি পন্ডিতমশাই।
পন্ডিতমশাই- রোল দুই।
আশরাফুল-ইয়েস স্যার।
পন্ডিতমশাই- রোল তিন।
বাবু- চোখে দ্যাখেন না! ক্লাসেই বসে আছি।
পন্ডিতমশাই- কত্ত বড় বেয়াদ্দপ! তোকে দেখতে হবে!!
ঈগল- ও ঠিকই বলেছে স্যার, আপনি কি দিনকানা নাকি? আপনার সামনেই ও বইসে আছে, তারপরেও জিগান ক্যান?
পন্ডিতমশাই- এই ঈগল তুই দাঁড়া, তুই বল পানামা কনে (কোথায়)?
ঈগল- স্যার, পানামা চেয়ারের নিচে অবস্থিত।
পন্ডিতমশাই- মানে!!
ঈগল- স্যার, চেয়ারের উপরে পা রাখলে হয় ‘পা-উঠা’, আর চেয়ারের নীচে পা নামালে হয় ‘পা-নামা’, তাইনে স্যার?
পন্ডিতমশাই- বুঝেছি তোর বিদ্যে! এই আশরাফুল তুই বল, কানাডা কনে?
আশরাফুল- স্যার, কানাডা টয়লেটে।
পন্ডিতমশাই- গাধা, কানাডা কি টয়লেটে অবস্থিত!!
আশরাফুল- স্যার, আমাদের সলিম কানার কথা বলেছেন না, ওতো আপনার সামনে দিয়েই টয়লেটে গেল।
পন্ডিতমশাই- তোদের দিয়ে কিসসু হবে না। এবার আমরা বাংলা সাহিত্য পড়বো। রবীন্দ্রনাথ একজন বড় কবি ছিলেন। তিনি ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ লিখেছিলেন।
ঈগল- স্যার, ঐরকম আমিও লিখতি পারি।
পন্ডিতমশাই- তুমিও লিখতি পার, তাহলে বল দেখি!
ঈগল- ‘ডাব পড়ে, মাটি নড়ে’। কেমুন হইছে স্যার?
পন্ডিতমশাই- এইটে (এটা) কোন কবিতা হলো!
বাবু- ক্যান সার, ওতো ঠিকই লিখিছে। রবীন্দ্রনাথ যদি জল ফেলে পাতা নাড়াতে পারেন, তাহলে ঈগল কেন ডাব ফেলে মাটি কাঁপাতে বা নাড়াতে পারবেনা।
পন্ডিতমশাই- এবার তোরা সব্বাই ঐ কবিতাটা পড়। ঐ যে-
“ঝড়ের দিনে মামার বাড়ি আম কুড়োতে সুখ
পাকা জামের শাঁখায় উঠে, রঙিন করি মুখ।’’
ঈগল- স্যার, এ কবিতা আমি পড়তি (পড়তে) পারবোনা।
পন্ডিতমশাই- ক্যান, তোর কি হলো?
ঈগল- স্যার, আমার কোন মামার বাড়ি নেই, আমার শুধু খালা আছে। তাই আমার হবে খালার বাড়ি।
পন্ডিতমশাই- তাহলে, খালার বাড়ি দিয়ে পড়ো!
ঈগল- এতেও কতা (কথা) আছে স্যার।
পন্ডিতমশাই- আবার কি কথা!!
ঈগল- স্যার, আমার দুই খালা। এক খালা থাকেন লন্ডনে। ওখানে ভিসা দিয়ে গিয়ে আম কুড়োতে পারবো না স্যার। তারপরে আরেক খালা থাকেন ঢাকাতে ফিলাট (ফ্লাট) বাড়িতে, ওখানে কি আমগাছ আছে না নাই! কে জানে!!
পন্ডিতমশাই- হইছে, তাহলে তুই ছাড়া বাকি সব্বাই পড়।
বাবু- স্যার আমারো কতা আছে।
পন্ডিতমশাই- তোকে কি চুলকাচ্ছে? কি কথা?
বাবু- স্যার ঐযে বললেন- ‘পাকা জামের শাঁখায় উঠে, রঙিন করি মুখ’, স্যার মুখ রাঙাতে গেলে জামায় দাগ পড়ে যাবে। মা বলেছে, এইবার জামা নষ্ট হলে ঈদে জামা কিনে দিবেনে (দিবে না)। তাই আমি এই কবিতা পড়তি (পড়তে) পারবো না।
পন্ডিতমশাই- তোদের আর বাংলা পড়তি (পড়তে) হবে না। এবার তোদের অংক ধরবো। এই ঈগল, ধর তোকে আমি ৫টা আম দিলুম।
ঈগল- কই স্যার, আম দেন। অনেকদিন খাইনি।
পন্ডিতমশাই- আরে, মনে কর তোকে আমি ৫টা আম দিলুম, সেখান থেকে তুই বাবুকে ২টা আম দিলি, তাহলে তোর কয়টা আম থাকলো?
ঈগল- কি বললেন স্যার! বাবুকে আম দিতে হবে! সেদিন ও বাদাম খায় আর বলে, ‘আমি বাদাম খাই, তুই খোসা খা।’ আর ওরে আমি আম দেবো!! কখখোনা না... কখখোনা না। ওই ৫টা আম আমি নিজেই খাব।
পন্ডিতমশাই- তুই বস, তোকে দিয়ে হবে না। এই আশরাফুল, ধর তোর বাবা তোকে ১০০ টাকা বাজারের জন্যে দিল, সেখান থেকে তুই ৫০ টাকার মাছ কিনলি, তাহলে তোর বাবা তোর কাছ থেকে কত টাকা পাবে?
আশরাফুল- এক টাকাও পাবে না স্যার। আমি কি বলদ নাকি! বাবাকে বলবো, মাছের দাম ১০০টাকা, আর বাকি ৫০ টাকা মেরে দেবো... হি.. হি..।
পন্ডিতমশাই- ওরে এইবার ইংরেজী বই খোল।
ঈগল- স্যার, ইংরাজী (ইংরেজী) ধরবেন না। আপনি... আপনি লজ্জিত হবেন স্যার। আমি যে ইংরেজী জানি তা আপনি কোন ডিসকোনারীতে (ডিকশনারী) পাবেন না।
পন্ডিতমশাই- কি! এত্ত বড় বেয়াদপ তুই!! দেখি কি ইংরেজী জানিস!
ঈগল- স্যার, বলেনতো ‘হোয়াট ইষ্টিং ফট’ মানে কি?
পন্ডিতমশাই- ওরে বাবা! এ ইংরেজী আমি জীবনেও শুনিনি।
ঈগল- স্যার বললাম না! আমি যে ইংরেজী জানি তা আপনি কোন ডিসকোনারীতে খুঁজে পাবেন না।
পন্ডিতমশাই- আচ্ছা, এবার তোদের সাধারন জ্ঞাণ পাড়াবো। এই আশরাফুল তুই বল, বেনানা কাকে বলে?
আশরাফুল- স্যার, যার কোনো নানা নেই তাকে বেনানা বলে।
পন্ডিতমশাই- এবার বাবু এক কথায় প্রকাশ কর- ‘আকাশে চরে যে’
বাবু- স্যার, বিমান।
পন্ডিতমশাই- আশারাফুল বল, টাকা আয়ের সহজ উপায় কোনটি?
আশরাফুল- স্যার, বাবার পকেট কাটা।
পন্ডিতমশাই- ছি! ছি! তোর ভবিষ্যত আমি অন্ধকার দেখতেছি।
ঈগল- স্যার, এইটা ভুল বললেন, ওর বাবা সেদিনো ২টা টর্চলাইট কিনে আনলেন, ভবিষ্যত অন্ধকার হলে আপনার হবে, ওর ভবিষ্যত পুরা ফক-ফকা।
পন্ডিতমশাই- ওরে! ওর ভবিষ্যত পুরা আলোয় আলোয় ভইরে উঠিছে..। এই মাটির মানুষ, তুই দাঁড়া।
ঈগল- স্যার ও দাঁড়াতে পারবেনা।
পন্ডিতমশাই- কেন! ওকি নবাবজাদা হয়েছে?
ঈগল- না স্যার, ওর প্যান্টের চেইন নেই স্যার।
পন্ডিতমশাই- এই খবরদার বাবা, তুই দাঁড়াসনে... তুই দাঁড়াসনে। তুই বসেই থাক।
ঈগল- স্যার, আফনে তো অনেক প্রশ্ন করলেন। এবার আমার কিছু জানার ছিল। প্রশ্ন করি?
পন্ডিতমশাই- এতক্ষনে ভাল বলেছিস, তা প্রশ্ন করতে পারিস।
ঈগল- স্যার, আমাদের গাঁয়ের ধারে যে নদী চলে গ্যাছে, সেটা কেটেছিল কে?
পন্ডিতমশাই- (রেগে গিয়ে) সেটা তোর দাদা আর আমি কেটেছিলুম, বাঁদর কোথাকার!
ঈগল- তাইলে এত্ত মাটি ফেলেছিলেন কোথায়?
পন্ডিতমশাই- এত্ত মাটি আমি খেয়েছিলুম, শালার ইতুড়ে ছাত্র কোথাকার।
ঈগল- স্যার, মাটি খাওয়ার সময় দাঁতে কিচ্ কিচ্ করেছিল না?
পন্ডিতমশাই- (প্রচন্ড রেগে) ওরে তোরা আমার মাথায় বাড়ি মার!!
আশরাফুল- স্যার কি দিয়ে মারবো?
ঈগল- এই বাবু, চেয়ারের পায়া ভেঙে ফেল, স্যারের মাথায় বাড়ি দিতি হবে..... স্যারের আদেশ।
বাবু- স্যার, চেয়ারের পায়ার বদলে ক্লাসের ঘন্টা দিয়ে বাড়ি মারি!!
(ততক্ষনে একপাটি জুতো রেখে কষে দৌড় দিয়েছেন আমাদের পন্ডিত মশাই- ‘নতুন পন্ডিত)
(সমাপ্ত)