ছোটো বেলা থেকে এমন পরিবেশে বড় হয়েছি যে মেয়ে বলে গর্ববোধ হতো। আমাদের পরিবারে মেয়েসন্তান প্রীতি এতোটাই বেশি যে ভাইদের অবস্থা দেখলে খারাপই লাগতো। কৈশোরে অনাকাংখিত ঘটনার মুখোমুখি আর এক - আধটা প্রেমের প্রস্তাব পায়নি, অথবা বাসায় ফোনকল আসে নি এমন মেয়ে কমই আছে। আমি আমার বাবার কাছে কৃতজ্ঞ, কারণ আমাকে কখনো শুনতে হয়নি 'খালি তোর কাছেই কেন ফোন আসে, এক হাতে তো আর তালি বাজে না?'
কিন্তু বড় হয়ে জেনেছি আমার চারপাশ এতোটা ভালো না যতোটা আমি ভেবে এসেছি।সমাজ ব্যাবস্থাটাই এমন যে বাড়ির বাইরে থাকলে মাগরিবের আজান পড়াটা একধরণের সতর্কবানী,-"তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরো"।
মেয়ে মাত্রই জানে মেলা বা ভীরভাট্টা মানে তার জন্য কি দুর্ভোগ!তারপরও মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে কখনো আফসোস হয়নি এর আগে।কিছুদিন আগে বাবা ঢাকা যাচ্ছিল, তিন চারটা ব্যাগ বাবার জন্য বেশিই ভারি হয়ে যাচ্ছিল, তখন প্রথম আফসোস লেগেছে কেন ছেলে হলাম না ভেবে।ছেলে হলে অন্তত স্টেশন পর্যন্ত তো দিয়ে আসতে পারতাম।এই সমাজে মেয়ে মানুষের দাম শুধু বিজ্ঞাপনে, আর তাদের বংশরক্ষায়।রাস্তাঘাটে হয়তো আপনি ধর্ষিত হওয়া থেকে বেঁচে যাবেন, কিন্তু মানসিক ভাবে প্রতিনিয়তই ধর্ষিত হবেন। এর পেছনে আবার এদের একশো একটা অজুহাত থাকে, 'নিশ্চয়ই মেয়ের গায়ের কাপড় ঠিক নাই, অথবা সে উগ্র, তাও যদি না হয় তাহলে সে বোরখার ভিতরে খেমটা নাচে!' সম্মানিত স্যারদেরও দেখা যায় স্টুডেন্টের পশ্চাদ্দেশের ছবি তুলতে, আর সহপাঠি বা ছোটো ভাইদের কথা নাইবা বললাম।এরা কি কখনো মেয়ের বাবা হবে না??নাকি এদের মেয়ের দিকেও ওরা সেই দৃষ্টিতেই তাকাবে যেভাবে ওরা বাকিদের দেখে??
↧
নারীজন্ম
↧