গতকাল রাতে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়া হয় নি , তো ভাবলাম সকালে যাব । আমি সধারানত ভোড়ে ঘুম থেকে উঠি না শুধু শহীদদের স্মরন করতে ভোড় বেলা ঘুম থেকে উঠার জন্য ঘরিতে এলার্ম দিয়ে রাখলাম ।ভোড় বেলা ঘুম থেকে উঠেই ছাদে যেয়ে দেখলাম আমার গোলাপ গাছে বেশ কয়েকটা গোলাপ ধরেছে। তো সেখান থেকে খুব যত্ন সহকারে দুইটা গোলাপ তুলে নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাচ্ছিলাম হঠাৎ পথ আগলে দাঁড়ালো রফিক, সালাম, বরকত,শফিউর---
রফিক একটূ মুচকি হাসি দিয়ে প্রশ্ন করল-- কই যাও?
আমি -- জি, শহীদ মিনার যাচ্ছি ফুল দিতে।
এবার সালাম একটু কাছে এসে ঘারে হাত রেখে বলল – ফুল দিয়ে কি হবে?
আমি -- না, মানে আপনাদের স্মরণ করা হল এই আর কি। আপনাদের আত্মা শান্তি পাবে।
বরকত -- হা হা হা, কুরআন হাদিসের কোথাও লেখা আছে, ফুল দিলে আত্মার শান্তি হয়?
কখনো কি তোমরা আমাদের কবর জিয়ারত করেছো? দুই রাকাত নামাজ পড়ে আমাদের জন্য দোয়া করেছো??
আমি -- জি…না, মানে…
রফিক -- হুমম, প্রতি বছর তোমরা কত টাকার ফুল দিয়ে এভাবে শ্রদ্ধা জানাও আমাদের জন্য ?
আমি -- জি, কোটি টাকার উপরে।
শফিউর -- আচ্ছা আমার মা যে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে,কেউ কি খোঁজ নিয়েছে?
সালাম -- আমার আত্মীয় স্বজনরা যে রিকশা চালিয়ে,দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে, তার কি কোন খবর রাখে দেশের কেউ?
আমি -- ভাই, আসলে জীবন তো দিছেন আপনারা। আপনাদের আত্মীয় স্বজন তো দেয় নাই। তাদের খোঁজ কেন নিব?
বরকত – যুদ্ধ তো করছে মুক্তিযোদ্ধারা তাহলে আজ তাদের নাতি পুতিরা এত সুযোগ সুবিধা পায় কেন?
সালাম—আমরা রক্তের বিনিময়ে যে ভাষা এনে দিয়েছিলাম তোমাদের আজ তোমরা সেই ভাষাকে করেছ বিকৃত, তোমাদের নতুন প্রজন্ম আজ বাংলা ভাষা ভুলে বিদেশী কার্টুন দেখে হিন্দিতে কথা বলে ।আজ তোমাদের বাড়ির মা বোনরা হিন্দি সিরিয়াল দেখে।
আমরা তাহলে কি পেলাম বলতে পার ?
আজকি আমরা তোমাদের কাছে শুধুই কি মুখের বুলি মাত্র ?
আমরা কি আজ শুধু ২১শে ফেব্রুয়ারিতেই সীমাবদ্ধ ?
লোক দেখানো ফুলের সমাধিই কি তোমাদের শেষ দায়িত্ব ?
শফিউর -- বাদ দাও তো বরকত !ওদেরকে বেশি উস্কে দিয়ো না।বেশি উস্কালে হয়ত, নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধার মত নতুন প্রজন্মের ভাষা সৈনিক নামেও তারা আরেকটা পার্টি বানাবে।
মনটা খারাপহয়ে গেল। বাসায় ফিরে আসলাম। আর ঠিক করলাম এইবার থেকে আর কোনদিন শহীদ মিনারে ফুলদিতে যাবো না। এইবার থেকে এই দিনে শহীদদের জন্য নফল নামাজ পড়ে দুই হাত তুলে দোয়া করব।