অনেক দিন হয়ে গেল তোমাকে দেখি না। শেষ দেখা ২০০৯ এর ১৮ জুলাই। কতটা বছর এর মধ্যে পার হয়ে গেল। ভাল আছ, থাকার ই কথা। আমিও ভাল আছি। সেই দিনটার কথা আজ ও আমার মনে পড়ে। যেদিন না বুঝেই তোমাকে বলেছিলাম আমি তোমায় ভালবাসি। হয়ত বুঝতাম না ভালবাসা কি।
- ওই শোন।
- হে বল।
- কাল আস নাই কেন?
- বেড়াতে গেসিলাম।
- কাল তোমায় দরকার ছিল।
- কেন?
- একটা কথা বলব।
- কি?
- উহু লজ্জা লাগতেসে।
- বল না প্লীজ।
- কাওকে বললে আমি মাইর খাব। তুমি যদি আমার আম্মুকে বলে দাও?
- প্রমিস আমি বলবনা।
- সত্যি?
- হে সত্যি।
- বলব?
- হিহিহিহি বল।
- আচ্ছা বলি।
- আচ্ছা।
- I LOVE YOU।
- হাহাহাহাহা।
- হাসতেস কেন?
- কাল জসিম ও এই কথা সাবানা রে বলসে।
- এখন তুমিও বল।
- নাহ বলবনা।
- আচ্ছা কাল বইল।
- আচ্ছা আজ তুমি বলস কাল আমি বলব।
তখন আমরা ১১ বছর এর বাচ্চা ছিলাম। বাচ্চা এইজন্য যে আমি বুঝতাম না ভালবাসা কি? তুমি বুঝতে কিনা জানিনা শুধু সেই সুন্দর হাসি টা দিতে। পরদিন তুমি যদি আমায় ভালবাসার কথা টা না বলতে হয়ত আমাদের জীবন এর গল্প টা অন্য রকম হতেও পারত। কিন্তু আমি ৯টি সুন্দর স্বপ্নিল বছর পেতাম না। তখন তোমার প্রতি কিসের আবেগ ছিল জানিনা। কি সেই আবেগের বশে বলেছিলাম ভালবাসি। ষষ্ঠ শ্রেনি থেকে তোমার আমার এই ভালবাসার শুরু। ওই বয়স এই তুমি যখন অন্য কারো সাথে সুন্দর হাসি দিয়ে কথা বলতে আমি হিংসায় জ্বলে মরতাম।
মেয়েরা অনেক তাড়াতাড়ি বড় হয়। তুমি অনেক বড় হয়ে গেলে আমার থেকে। আমাকে শাসন এর মধ্যে রাখার তোমার যে চেষ্টা মনে পরলে আজ ও হাসি পায়।
ভালই ত কাটছিল। ৪টি বছর কত সুন্দর কেটে গেল। একদিন তুমি তোমার নতুন মোবাইল নিয়ে এলে। আমিও বাবার সাথে বায়না করে কিনে নিলাম একটি মোবাইল। কিন্তু মোবাইল এর খরচ চালানোর সামর্থ্য তখন আমার ছিলনা। অগত্যা স্যার এর কাছে পড়া বাদ দিয়ে দিলাম। বিনিময় তোমার সাথে কথা বলতে পারব, এর থেকে বেশি কিছু তখন চাইতাম না। তুমি এস.এস.সি তে অনেক ভাল রেজাল্ট করলে। আমি মানানসই কিছু একটা নিয়ে খুশি রইলাম। কষ্ট পাইনি একটুও। আমি খুশি। তুমি আমার রেজাল্ট শুনে কেদে কেদে বললে সব তোমার দোষ। তোমার জন্যই আমি খারাপ করলাম। তোমার ওই কথায় এত কষ্ট লাগল যে চুখের জল বাধ মানে নি।
সব থেকে কষ্ট বেশি লাগল যখন তুমি এসে বললে তোমার বাবা ট্রান্সফার হয়ে সবাইকে নিয়ে ঢাকা চলে যাচ্ছেন। এর মানে তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে সবাই। আমি তোমাকে যখন খুশি দেখতে পারবনা। তুমি আমাকে মন খারাপ করতে না করলে। তাই আমি মেনে নিলাম। কিন্তু ভিতরে যে কষ্ট ছিল তোমাকে সেদিন বুঝতে দেইনি। নিরবে কাদিনি। কারন তুমি মানা করেছিলে। কান্না নাকি আমাকে মানায় না। সেদিন বিকেলে তুমি চলে যাওয়ার সময় কান্না কে থামিয়ে রাখতে পারিনি। তোমার চুখের কোনে ওই ২ ফোটা জল যে আমার দুই চুখ ভাসিয়ে দিয়ে গেল বাধ ভাঙ্গা নদীর মত। তোমাকে দেখিনা। অনেক দিন দেখিনা। এ কষ্ট কাওকে বলতে পারি নি। ফোন এ কথা বলার সময় মনে হত তুমি আমার পাশেই আছ। কিন্তু তবু কেমন যেন একটা শূন্যতা ছিল। একদিন বাবার ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করে ঢাকা চলে আসলাম। শুধু তোমাকে দেখার জন্য। সেদিন যদি তুমি জিজ্ঞেস করতে কিভাবে এত টাকা পেলাম? হয়ত কোনও উত্তর দিতে পারতাম না। কিংবা সত্যি টাই বলে দিতাম। হয়ত এতে তুমি রাগ করতে। কিন্তু তোমাকে বুঝাতে পারতাম না আমি কেন এমন করলাম।
আস্তে আস্তে তোমাকে না দেখার অভ্যাস টা করে নিয়েছিলাম। মনকে বুঝাতাম একটা সময় তুমি আমার কাছেই আসবে। কেউ তোমাকে দূরে নিয়ে যেতে পারবে না। তুমি আমাকে কত সুন্দর স্বপ্ন দেখাতে। মাঝে মাঝে ভাবতাম তুমি এত সুন্দর স্বপ্ন কোথায় পাও? আমি খুজে পাইনা কেন? তোমার স্বপ্নরা এত সুন্দর কেন?
দেখতে দেখতে আরও ৪ টি বছর কেটে গেল। আমি আর তোমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারিনা। তোমার থেকে ধার করা স্বপ্নরা আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। কিন্তু স্বপ্নরা ধাক্কা খেল যখন বললে তোমার বিয়ের কথা চলছে। ছেলে সুপ্রতিষ্ঠিত। আব্বু আম্মু এক কথায় রাজি। আমাকে এবার কিছু একটা করতে হবে। তুমি আমাকে ছাড়া কারো কথা ভাবতে পারনা। আমি যাতে তোমাকে নিয়ে যাই। বিশ্বাস কর, আমি তখন কিছু ভাবতে পারছিলাম না। আমার ধার করা স্বপ্নরা আমাকে দূরে ঠেলে কোথায় যেন লুকিয়ে গেল। আমি তোমাকে কোথায় নিয়ে যাব। ভাবতে পারছিলাম না কিছুই। মনের মধ্যে অনেক ভাবনা উকি দিল। কিন্তু কোনটাই আমাকে পথ দেখাতে পারলনা। নিজেকে নিয়ে ভাবলাম। তোমাকে নিয়ে ভাবলাম। আমি তোমাকে কি দিতে পারব? হয়ত ভালবাসা। হয়ত অনেক কিছুই। কিন্তু হয়ত এর ভরসা কি? তুমি যে আমার সব। আমি যদি তোমাকে সুখি করতে না পারি?
তোমার সাথে দেখা করতে ঢাকা আসলাম। কিছু কথা বলার আছে। জানিনা বলার পর আমাদের পথ কোন দিকে যাবে। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি যাই করব তোমার জন্য করব। আমার তুমিই যে সব।
-আমি কিছু জানিনা তুমি যেভাবে পার একটা কিছু কর।
- দেখ আমার দ্বারা সম্ভব না।
-মানে কি?
-মানে এইটাই।
-তুমি কি বল এসব?
-আমার মনে হয় আমাদের এইখানেই থেমে যাওয়া উচিৎ। আমাদের সামনে না যাওয়াটা ২জনের জন্যই ভাল।
-আমি কি ৮বছর তোমার সাথে ফাজলামু করসি যে থেমে যাব?
-তুমি কর নাই । আমি করতেসি।
-বিশ্বাস কর আমার ফান ভাল লাগতেসে না।
-একটা কথা তোমাকে বলা হয়নি। আমি আগের মত তোমাকে ভালবাসতে পারতেসিনা। বিরক্ত লাগে কেন জানি তোমাকে। এখন যদি এই অবস্তা হয় তাইলে বল বিয়ে করা কি টিক হবে?
-তুমি যা বলতেস বুঝে বলতেস?
-হ্যাঁ, তাইত দেখা করতে আসলাম তোমার সাথে। মাফ চাইতে । তোমার সাথে এমন করে ভুল করে ফেলসি।
-৮বছর তাইলে কি ছিল?
-আবেগ।
-আর এখন?
-বাস্তবতা।
-আর কিছু বলবে?
-নাহ। তুমি কিছু বলার থাকলে বলে দিতে পার।
আর একটি কথা ও বলনি তুমি। জল ভরা অবাক চুখে তাকিয়ে ছিলে। সেই চুখে ছিল ঘৃণা আর বাধ ভাঙ্গা কান্না। আর ছিল না বলা অভিশাপ। আমার সামনে দিয়ে মাথা নিচু করে চলে গেলে। আমি সফল। আমি যা বুঝাতে চেয়েছি তুমি বুঝে গেছ। এই প্রথম এমন হল। এই শেষ।
আমি আরও অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলাম। বলতে চেয়েছিলাম আমি তোমাকে ছাড়া কিছুইনা। আমি তোমাকে ছাড়া স্বপ্নহীন। আমি তোমাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ।
আজ সেই পথে হাঁটছি আমি। যে পথে দুইজন হাটার স্বপ্ন দেখতাম একসাথে। মনের ভিতরে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমি সেই কষ্ট সামলে নিতে শিখেছি।
বিশ্বাস কর আমি তখন ছিলাম অসহায়। তুমি সুখি হবে বিশ্বাস কর আমায়। আমি আর কোনদিন কাদিনি। সেই অসহায় বিসর্জন এর পর আমি আর কাদিনি। বিসর্জন দিয়ে যে কাদতে নেই। আমাকে কান্না মানায় না।