Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

২৩ জুলাই একটা ব্যার্থ অভিযান এবং কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা

$
0
0

ঘটনা -১
সকালে ঘুম থেকে উঠে ঝটপট নাস্তা সেরে নিয়ে হাটতে হাটতে স্টেশনের দিকে গেলাম উদ্দ্যেশ্য ঢাকগামী ধুমকেতুর টিকিট করতে হবে ।গতকাল রাতে বাবার সাফ কথা সে করায়ে দিতে পারবে না নিজের কাজ নিজেকে করতে হবে, এইটা বাবার একটা গেম এরকম সে এর আগেও বিভিন্ন কাজে অনেক বার এমন করেছে ।স্টেশনের এসি কাউন্টারে এসে দাড়ালাম দেখি একখান মাইয়া বসে আছে , দেখতে যেমন তেমন দাঁতগুলো সেইরাম ভয়ঙ্কর । মনে হয় কেউ হাতুড়ি দিয়ে বাইরাইয়া দাঁতগুলা ভেঙ্গে দিছে।এই প্রথম লাইনে দাঁড়িয়েছি ট্রেনের টিকিট করার জন্য এর আগে বাবা করাই রাখতো,  আরামসে যাইতাম ।
যাইহোক সামনের একলোকের সাথে দেখি মাইয়ার সেইরাম গন্ডগোল লাগছে , লোকটা কই থেকে একটা রিজার্ভেশন ফর্ম আমদানি কইরা আনছে সেটা কেমনে পুরন করতে হয় জানে না আর মাইয়া ফর্ম পুরণ না করলে জমা নিবে না ।
মাইয়াঃ আপনি ফর্ম পুরণ করে নিয়ে আসেন তারপরে দেখবো।
লোকঃকি লিখতে হবে সেটা একটু বলে দিবেন না।
মাইয়াঃ না , আমার অতো সময় নাই আপনি পড়ে দেখেন।
লোকঃ কি লিখতে হবে সেইটা না বললে কিভাবে কি লিখবো ?
মাইয়াঃ আপনি পড়তে জানেনতো নাকি ? পড়েতো দেখেন একটা কিছুতো চাইবে
লোকঃএকটা কিছু কি চাইবে ?
মাইয়াঃ এইবার মাইয়া সেইরাম রেগে যেয়ে  “ আমাকে চাইবে ”
যাইহোক এইভাবে আরো কিছুক্ষণ চললো ...... আমার লাইন আসলো কিন্তু টিকিট নাই।আব্বু যেহেতু বলেছে নিজের কাজ নিজেরে করতে একবার ভাবলাম বাসের টিকিট করে ফেলি , কিন্তু আব্বুরে না জানায়ে করলে খবর কইরা ছেড়ে দিবে তাই আব্বুরে ফোন দিলাম , আব্বু দাঁড়াইতে বললো ।
একটু পর একটা অপরিচীত নাম্বার থেকে ফোন আসলো ধরতে যাবো দেখি একলোক এগিয়ে এসে জিগাইলো আপনি অমুক স্যারের ছেলে ?

আপনি আমার সাথে আসেন
উনার সাথে স্টেশন সুপারেন্টেডেন্টের রুমে গেলাম , উনি হাসি মুখে হ্যান্ড শেক করলেন , তারপর কিছুক্ষন বাকআলাপের মাথায় পিয়ন এসে টিকিট দিয়ে গেলো । টিকিট দেখে চান্দি গরম হয়ে গেল মাগার বাবার খাতিরে চিল্লা-পাল্লা না করে ঠান্ডা কথায় ঝারি দিলাম ।
আচ্ছা , এইমাত্র যে কাউন্টারে বললো টিকিট নাই , এখন টিকিটতো আইলো তো আইলোই সাথে সিটো আছে কেমনে কি ?
জানতাম কোন উত্তর পাবো না ,  একখান হাসি দিয়ে রেখে দিলো।
এখানে আমি যদি সাধারণ কেউ হতাম অবশ্যই টিকিট পাইতাম না , এর কারণ কি ? সাধারণ পাবলিকরে কি মানুষ মনে হয় না আপনাদের ?  না তারা টাকা কম দেয় ?
বুঝতে পারলাম মাথা গরম হতে শুরু করেছে , বেশিক্ষন থাকলে খবর আছে তাই উঠতে যাবো , উনার রিকোয়েস্ট একটু বসে চা না খেলে নাকি সে কষ্ট পাবে ।এমনিতেই ঝারি দিছি খামাখা আর কষ্ট না দিয়ে আয়েশ করে চা-সিঙ্গারা খেয়ে হাটা ধরলাম।
ঘটনা-২
রাতে বাসা থেকে বের হবো এমন সময় চশমাটা বিছানার উপরে রেখে ব্যাগ গুছাচ্ছি এর মধ্যে ভাগিনীর চশমার উপরে উঠে ভাঙ্গা শেষ ।ড্রয়রে অপশনলাল আরেকটা চশমা থাকায় সেটা নিয়েই বের হলাম । নিচে সিড়িঘরে যেয়ে মানিব্যাগ থেকে গেটের তালার  চাবি বের করতে যেয়ে দেখি আমার চাবি গায়েব
হাতে চাবি খোঁজার মতন সময়ো নাই , নীচতলার আন্টির কাছ থেকে চাবি নিয়ে বের হলাম।
রাত এগারোটাই মনে হচ্ছিল রাস্তাটা যেন শন শন করছে কোথাও রিক্সার বালাই নাই , কি আর করার হাটা ধরলাম একটু হাতটেই শুরু হলো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি । বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই স্টেশনে এসে পৌছালাম।
[ঘটনা-৩
স্টেশনে যাওয়ার কিছুক্ষন পর ট্রেন লাইনে প্লেস হলো । আমি যা করি আমার বগীটা খুঁজে নিয়ে বগীর গেটের সামনে বসে থাকি ট্রেন ছাড়লে টুপ করে উঠে পড়ি , ‘ঝ’ বগী খুঁজে নিয়ে বগীর গেটের সামনে বসে পড়লাম অন্যদের হুড়াহুড়ি দেখতে ভালোই লাগে।
কিছুক্ষন পর ট্রেন ছাড়লে টুপ করে ট্রেনে উঠে পড়ে ৪৭ নাম্বার সিটটা খুঁজা শুরু করলাম , সিটটা পেয়ে আমার চোঁখতো চরাগ গাছ । সিল্কসিটি-ধুমকেতুর সিটগুলো হয় সামনে পেছনে চেয়ার সিস্টেম কিছু বগিতে মাঝের কিছু সিটের মাঝে অনেকটা রাউন্ডের মতো ফাঁকা জায়গা থাকে ৪৭ নাম্বার সিটটা সেইখানে কিন্ত চোঁখ চরাগ গাছে উঠার কারণ সেইটা না। জানালার পাশের সিটটা আমার বরাবরই প্রিয় কিন্তু তখন মনে হচ্ছিল জানালার পাশে না পড়াটাই ভালো ছিল কারণ আমার সিট জানালার পাশে , পাশের সিটে একটা মাইয়া , সামনের সিটে আরো দুইটা । কারো সাথে যে চেঞ্জ করব তেমন কাউকেও পেলাম না।
কি আর করা ভদ্রভাবে ব্যাগটা রেখে চুপচাপ বসে পড়লাম ।জুতা-মোজা খুলে সিটের নিচে ঢুকায়ে দিলাম। পরে এই তিনটা যা শুরু করল তা কোন ছেলে করলে ইভটিজিং এর ধারায় পড়তো আর সেটা এডামটিজিং এর উপরে যদি কিছু থাকে সেই ধারায় পড়ার কথা।
সামনের দুইটা পায়ের উপরে পা তুলে দিয়ে সুড়সুড়ি দেয় , আবার প্যন্টের ভেতর দিয়ে বুড়া আঙ্গুল ঢুকায়ে দিয়ে প্যান্ট ধরে টানে আর এইটা ঘুমের ভান ধরে এমন ভাবে করছে যাতে মনে হয় ঘুমের ঘোরে করছে । পা সরাইয়ে নিলেও কিছুক্ষন পর আবার পা তুলে দেয় ,আর পাশেরটা ঘারের উপর মাথা ফেলায়ে দিয়ে ঘুমাইতেছে ।তার নাকের গরম নিঃশ্বাস আমার গলার উপরে এসে পড়ছে বার দুয়েক সরাইতে বললাম একটু সরালেও পরে আবার যা তাই।আর সামনের দুইটা শরীরের যে ভাজ ভুজ দিয়ে ঘুমের পোজ দিচ্ছিল তাতে কোন কিছু আর দেখার বাকি থাকল না। এই সিচুয়েশনে একজন পুরুষের কন্ট্রোলে থাকাটা অনেক কষ্টের আর ট্রেন আমার জন্য এমন একটা জায়গা যা আমার জন্য চুড়ান্ত রিক্সের কারণ এমন অনেকে আছে আমি চিনি না কিন্তু তারা আমারে চিনে একটু উলটাপালটা কিছু দেখছেতো সোজা বাবার কাছে রিপোর্ট ।এতো ভিড় , উঠে যে একটু হাটাহাটি করবো সেই অবস্থাও নাই ।এক ফাঁকে কাজি আলি নুর ভাইয়ের সাথে একটু মেসেজিং করে ফেললাম। না আর তো পারা যায় না ফাজিলগুলার একটা ব্যবস্থা করতে হবে মনে মনে ঠিক করলাম লাইটটা অফকরে দিয়ে পাশেরদারে জড়ায়ে ধরে ঘুমাবো tongue
কিন্তু সাহসে কুলাইলো না যদি চিল্লা-পাল্লা করে তাইলেতো শেষ ।কি আর করা মুখ বুজে সারারাত ধরে অত্যাচার সহ্য করলাম।
সাড়ে পাঁচটাই ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে ঢুকলো
নামার আগে ফাজিলগুলা কই , আমাদের নাম্বার নিবেন না ?
নাম্বার লইয়া করুম কি ?
আমাদের সাথে কথা বলবেন
আমি ক্যারেক্টার লুজ মাইয়াগো লগে কথা কই না । বলে ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম।
ঘটনা-৪
কমলাপুর স্টেশনের দোতলায় রেলওয়ের স্টাফদের রেস্ট রুম আছে । এক ভাই আছে স্টেশনে যেয়ে তারে ফোন দিলে তিনি রুমের চাবি দিয়ে দেন । রুমে যেয়ে ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে বিছানায় একটু গড়া গড়ি দিয়ে পরে ধিরে সুস্থে কাজে বের হই।রুমটা বেশ ভালো এসি , টিভি এককথায় ভিআইপি রুম বলতে যা বুঝায় তার সব ব্যবস্থায় আছে।
সব ঘাটের মরা সেইদিন মরতে শুরু করেছে আর সে মরবে না এইটা কোন কথা হইলো ।
তারে ফোন দিলাম সে ফোন ধরেই হ্যানো-ত্যানো-প্যানো গীত গেয়ে যা বললেন তা হইলো তিনি
শবে-বরাতের ছুটিতে বাড়ি গেছেন তার জায়গাই  আরেকজন আছেন তার নাম্বার , রুম নাম্বার সব বলে দিলেন ।
দোতলায় যেয়ে ঐ ভদ্রলোকের রুমে বার কয়েক নক করলাম কিন্তু ব্যাটা মনে হয় মরাঘুম ঘুমাইছিলো কোন সাড়া শব্দ পাইলাম না।একবার ফোন দিতে যেয়ে আর দিলাম না , থাক ! ঘুমাক । নিচে স্টেশনে ঢুকেই প্রথম সাড়িতে কিছু অফিস রুম আছে সেখানে গেলেই চলবে।তো অফিস রুমে গিয়ে টয়লেটে যেয়ে হাতে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম , বসে বসে পপকর্ন খাইতে থাকলাম এর ফাঁকে ফেবুতে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে দিলাম “ অনেকদিন পর ঢাকা আসলাম”
ঘটনা-৫
সাড়ে সাতটা দিকে স্টেশন থেকে বের হলাম । জোনাকিতে বসে নাস্তা সেরে হাটতে হাটতে শাপলা চত্বরে গেলাম উদ্দ্যেশ্য এক বন্ধুর সাথে দেখা করা । আমি সাধারণত তেমন কারো সাথে দেখা করি না , জীবনে একবার একজনের সাথে করেছিলাম তারপর তার যে কমপ্লিমেন্ট পাইছিলাম শোনার মতোন , আজো মনে হলে ভালো লাগে।এই মাইয়ার অনেকদিন ধরে অনেক আনুতি মিনতির পর আজকে দেখা করতে আসা ।যাই হোক  আটটার দিকে শাপলা চত্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের একটা চায়ের দোকানে বসে বসে একের পর এক কাপ চা খাচ্ছি আর একটু পর পর ফোনে সেই  বন্ধুর কাহিণী শুনছি “এই বের হচ্ছি ,  মেয়েদের বের হতেতো একটু সময় লাগবে সেটাতো বুঝতে হবে নাকি ”
এইভাবে ঘন্টা খানিক থাকার পর মাইয়া ফোন দিল “ একটা ঝামেলা বেঁধে গেছে, আজকে যেতে পারবো না , বাবার সাথে একটু বের হতে হবে । প্লিজ রাগ করো না গ্যানো-ম্যানো-ত্যানো ”
তোমার রাগের গুষ্টি কিলাই , আইতে কইলা তুমি , জায়গা তোমার এতক্ষন ধরে কাহিণী করলা , আইবা নাতো এত্ত রঙ ঢঙ করার কি আছে আর আমার ১ টা ঘন্টা খাইলা কেন এই-সেই-তেই মাইয়ার চৌদ্দ গুষ্টিরে উদ্ধার করে হাটা ধরলাম রিক্সার জন্য।

ঘটনা-৬
তিনটা রিক্সা পাইলাম মতিঝিল থেকে কাকরাইল জামু একেকজনের ভাড়া চাওয়ার যে বাতিক দেখলাম । এক ব্যাটার সাথে ক্যাচাল ম্যাচাল করে অবশেষে ৩৫ টাকা মিটায়ে রিক্সায় উঠলাম। সারারাত তিন ফাজিলের অত্যাচারে ঘুম হয়নি তাই রিক্সাতে কিছুক্ষন বসে থাকতেই তন্দ্রাই চলে গেলাম।চারপাশের গাড়ির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো দেখি রিক্সা গুলিস্তানে নিয়ে যেয়ে ব্যাটা আমার দিকে তাকায়ে আছে ।
জিগাইলাম কিগো মামা যাইবা কাকরাইল গুলিস্তান আইলা কেন ? সরকার গুলিস্তানরে কাকরাইল বানায়ে দিল নাকি ?
মামা রাস্তা চিনি না , কোনদিক দিয়ে যাবো একটু বলে দেন না
আমিও ভান করলাম আমিও চিনি না , ও ! রাস্তা চিনেন না তাইলে কেমনে হবে আমিওতো চিনি না । এক কাজ করেন ট্রাফিক ব্যাটারে জিগান তারপর যাইতে থাকেন রাস্তার শেষ মাথায় যেয়ে কাউরে জিগাইলেই হবে কোনদিকে যাবেন।
রিক্সা যাইতে থাকলো এদিক দিয়ে সেদিক দিয়ে আমিও আবার তন্দ্রাই চলে গেলাম ।রিক্সায় বসে চোঁখ বন্ধ করে থাকতে ভালোই লাগে , হুমায়ুন স্যারের “ছেলেটা” বইয়ে পড়েছিলাম মেঘে ভেসে থাকার আনন্দ পাওয়া যায় এর পর থেকে ইচ্ছা হলেই আমি এই কাজটা করি বেশ ভালোই লাগে।
চোঁখ খুলে দেখি সাড়ে দশটা বাঁজে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় পার , আর সময় নষ্ট করা যাবে না।তোপখালের ভেতর দিয়ে কাকরাইল এসে একটা কনফেকশনারি দোকানের সামনে নেমে রিক্সা সাইড করে রাখতে বললাম , তারপর দোকানদার কে একটা বার্গার আর একটা স্লাইস দিতে বললাম । রিক্সাচালক অভিভুত , আমিও জানতাম এমনটা হবে । মাঝে মাঝে এইভাবে খাওয়াইতে খুব ভালো লাগে।
বহু চেষ্টা করেও তারে দিয়ে বার্গার উচ্চারণ করাইতে পারলাম না , সস দিয়ে কেমনে খাইতে হবে বলে দিলাম।স্লাইস খেয়ে কই মামা এতো আমের রস ।
আমি কইলাম হুম !
এর ফাঁকে একটু বাকআলাপ সেরে ফেললাম , এই যেমন ঢাকায় কয় মাস হলো আসা , আগে কোথায় ছিল , বাড়ি কোথায় , পোলা-মাইয়া কয়দা , পোলা-মাইয়া কি করে ইত্যাদি ইত্যাদি।
কথাবার্তা শেষে তারে ১০০ টাকার একটা নোট দিয়ে ছাইড়া দিলাম।

ঘটনা-৭
এরপর শুরু হলো ঠিকান খোঁজা , আমি এই জিনিসটা বহুবার দেখেছি ঢাকা শহড়ে কাউকে যদি বলা হয় ভাই এই এড্রেস/এতো নাম্বার বাসাটা কোনদিকে উত্তর একটাই জানি না। আপনি যদি ৬৯/১ নাম্বারে যেয়ে জিগান ভাই ৭০/১ টা কোনদিকে তাও একই উত্তর ।এরা আসলেই জানে না , নাকি জেনেও বলতে চাইনা আমার জানানাই তবে এটা ঠিক ঢাকার মানুষের ভেতরে সাহাজ্য-সহোযোগীতার মনমানসিকতা খুব কম।যা আমাদের রাজশাহীতে নাই, রাজশাহীর কাউকে যদি জিগান ভাই এই ঠিকানাটা কই তখন সে পারলে সাথে করে নিয়ে যেতে পারলে খুশি।
যাইহোক অনেকক্ষন ধরে এদিক অদিক ঘুরে নিজে নিজেই ঠিকানা খুঁজে বের করলাম ।গেটে ঢুকতেই দাড়োয়ানের আগমন স্যার কোথায় যাবেন ?
কোথায় যাবো জানি না , তবে কার কাছে যাবো তা যানি অমুক স্যারের কাছে যাবো।
স্যারতো এখনো আসেন নি
আসবে না ?
তাতো আসার কথা , আসলেতো ১২টার পরে আসেন ।
এই ফাঁকে অমুক স্যারের ডেজিগনেশনটা জিগাইলাম প্রথম জন জানে না আরেক জন কইলো দাড়ান একটা লিস্ট আছে অখানে সব লেখা আছে , বলেই একটা লিস্ট বের করল দেখলাম অমুক স্যার ম্যানেজিং ডিরেক্টর । আজব কারবার কোম্পানির এমডিরে চিনে না তাইলে এরা কি করে । আমি এই প্রর্যন্ত কম করে হলেও ১৫-১৬ জন এমডির সাথে সাখ্যাত করেছি সেই অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা এই এমডি চেয়্যারমেন ব্যাটাদের এই অভ্যাসটা বেশ ভালো কাউকেই লাঞ্চ টাইমের আগে অফিসে পাওয়া যায় না।
এরপর রেজিস্টার খাতায়  একে একে নাম , ঠিকানা ,আগমনের কারণ ইত্যাদি লিখে লিফটের সাহায্যে অফিসে চলে গেলাম। ঢুকতেই সুন্দর গোছানো পরিপাটি গেস্টরুম।এখানে ইনফর্ম করে সোফার এক পাশে যেয়ে বসলাম।এদের আপ্যায়নতা তেমন নাই অন্য অফিসগুলাই গেলে বসার পর এককাপ চা দিয়ে যায় আর আমি বসে বসে বেশ আয়েশ করে চা খায়।
এর এক ফাঁকে আমার এক বন্ধুরে ফোন করে ইউনাইটেডে পাঠাইয়ে ডাক্তারের সাথে বাবার প্রোগ্রামটা ফিক্সড করায়ে নিলাম।
এদিকে ১২ টা বেঁজে পার অমুক স্যারের দেখা নাই । যারেই জিগায় বলে আসবে একটু বসেন।
১২টা৪০ এর দিকে বাবা ফোন দিয়ে জানালো অমুক স্যারের সাথে তার কথা হয়েছে অমুক স্যার ঢাকার বাইরে আছেন । মেজাজতো গেলো গরম হয়ে তাইলে এরা এতক্ষন বসাইয়ে রাখল কেন আজবতো !!
একজনরে ডেকে জিগাইলাম ভাইয়া এমডি স্যার কি অফিসে এসেছেন ?
নাতো , বসেন আসবেন ।
সেতো বুঝলাম কিন্তু সেটা কবে ?
ব্যাটাই একটু রেগে গেলো কিন্তু কিছু বললো না।
তারপর ঠান্ডা মাথায় জ্ঞাণ বুদ্ধি দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে গেলাম।

ঘটনা – ৮
রাজমনি সিনেমা হলের সামনে থেকে এক রিক্সাচালক কইলাম কমলাপুর যাইবা ?
কথা বার্তার মুহুর্তে সে যা ভাড়া চাইলো আমি স্পষ্ট শুনলাম ২৫ টাকা বগরা বাঁধল কমলাপুর নেমে , সে নাকি ৪০ টাকা বলেছে এদিকে অলরেডি আরেক পেসেঞ্জার উঠায়ে ফেলাইছে তাই আর চিল্লা-পাল্লা না করে ৪০ টাকা দিয়ে দিলাম।এইবার গেলাম লাঞ্চ করতে কমলাপুরের সামনে একটা চাপা গোলির মতোন দেখলার সেখানে অনেক অফিস স্টাফরা খাচ্ছে ।এর আগে বনানীতে এমন চিপাগোলীর রাস্তায় খাওয়া-দাওয়া করেছি বেশ ভালো ভুনা খিচুড়ি পাওয়া যেতো । যাই হোক এদের খাবার দাবারো ভালোই লাগল মনে খটকা লাগল দাম দিতে যেয়ে ফুল প্লেট বিরিয়ানী ৪৫ টাকা কেমনে হয় বুঝলাম না চিকেন হইলে না হয় বুঝতাম কাউয়া বিরিয়ানী কিন্তু গরুর ক্ষেত্রে কোনটা খাটে মরা গরু নাকি অন্য কিছু আল্লাহ মালুম কি খাইতে কি খাইছি ।পাশের দোকানে আইসক্রিম কিনতে যেয়ে দেখি এক প্রিমো ছাড়া আর কোন আইসক্রিম নাই কি আর করার একটা প্রিমো চকবার নিয়ে খাইতে খাইতে স্টেশনে যেয়ে ঢুকলাম বেশ কিছুক্ষন বসে আয়েশ করে আইসক্রিমটা খাইলাম দেখি সামনের কয়েকজন শারুখের ফ্রুটো খাওয়া দেখার মতো তাকায়ে আছে । আমি এই ফাঁকে মোবাইলটা বের করে ফেবুতে ঢুকে একজনের স্ট্যাটাসগুলা দেখে নিলাম। এরপরে হঠাৎ মাথায় যেটা আসলো তা হলো আরে ! আজতো রবিবার আজকেতো মনে হয় সিল্কসিটি নাই ।বড়দুলারে ফোন দিলাম , ভাইয়া জানাইলো সিল্কসিটি নাই খোঁজ নিয়ে দেখার জন্য ফাইভ-আপ আছে না গেছে ।অফিসরুমে ঢুকে দেখি এক আঙ্কেল বসে আছেন আমার পূর্ব পরিচীত সালাম দিয়ে তার সাথে কথা বার্তা বলে জানতে পারলাম ফাইভ-আপো চলে গেছে । যাইহোক আঙ্কেলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে স্টেশন থেকে বের হয়ে আসলাম উদ্দ্যেশ্য শাপলা চত্বর।

ঘটনা – ৯
কমলাপুর থেকে শাপলা চত্বর এতটুকু রাস্তা কিন্তু রিক্সা ভাড়া শুনে মনে হলো বিশাল দূর । ঢাকার রিক্সা বলে কিছু কইলাম না আমাগো রাজশাহীর হইলে বাইরায়ে সোজা করে ফেলতাম।যাই হোক হাটতে হাটতে শাপলা চত্বরে গেলাম উদ্দ্যেশ্য কল্যানপুর যেয়ে বাস ধরবো ।দাঁড়ায়ে থাকতে থাকতে অস্থির , পাশে দেখি লেবু পানি বিক্রি করছে জিগাইলাম কতো , কই ৫ টাকা , বললাম ৫ টাকার জায়গায় ২০ টাকা দিবো কিন্তু যেটা করতে হবে গ্লাস ভালোভাবে ধুয়ে , নতুন লেবু কেটে ফার্স্টক্লাস করে বানায়ে দিতে হবে।লেবু পানি খেয়ে দেখি ভোলভো যাচ্ছে , তো ভোলভোতে উঠে দোতলায় চলে গেলাম । অনেকদিন দোতলায় বসে যাওয়া হয়নি বেশ ভালো লাগে ঘুরতে।
ওমা ! একটু পর দেখি মিছিলে মিছিলে সব রাস্তা বন্ধ কারণ শেখ রাজ্যের জন্মদিন । কি আর করা বাস ঘুরায়ে ঘুরায়ে যাইতে থাকল ।ভাড়া দিতে যেয়ে দেখি খুচরা টাকা নাই ১০০ টাকার নোট দিলাম বাকিটা ফেরত দিচ্ছি বলে হেল্পার নিচে নেমে গেলো।
কল্যাণপুর নেমে মনে হলো ব্যাটাই আমার ১০০ টাকা নিয়ে ভাগছে মনে করে আর ব্যাকই নেওয়া হয় নি।

ঘটনা-১০
দেশ ট্রাভেলস নতুন সার্ভিস শুরু করেছে , এদের সার্ভিস কেমন দেখার জন্য দেশের টিকিট করে ফেললাম।
এর মধ্যে আম্মার ফোন বাবার শরীর খুব খারাপ ; স্প্রে অফিসে ফেলে রেখে এসেছে ,বলেই ধরা খাইলো । জিগাইলাম যা হয়ছে ক্লিয়ার বলবা কোন কিছু লুকাইবে না  , কথা হলো সকালে বাবারে আম্মা-আপু আটকাইতে পারেনি সে অফিসে গেছিলো আর অফিসে যেয়ে যে কি করছে তা আর বুঝতে বাকি থাকল না ,  এখন কয়টা সিগারেট যে খেয়েছে তা বাবাই ভালো জানে ।রেগে গিয়ে বললাম আমি জানি না তোমাদের যা ভালো লাগে তাই করো  angry আর বাবা বলে সুস্থ কিছুই হয় নি । সে এখনো ফিট রেলক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলতে পারবে   hairpull তাইলে তারে পাঠাও ফুটবল খেলে আসুক বিছানাই শোয়ায়ে রাখছো কেন ?
পরে বাবার অফিসের এক বড়ভাইরে বলে স্প্রেটা বাসায় পাঠানোর ব্যাবস্থা করলাম।
বাবাই পোলা আর পোলাই বাবার জায়গাই থাকলে কি যে  অবস্থা হয় এই অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারাই ভালো বুঝবে।
আমি এ যাবত যতগুলা সার্ভিসে যাতায়ত করেছি দেশের মতোন খারাপ দেখি নি বিশেষ করে ড্রাইভিংটা এতো খারাপ বাস সবসময় ঝাকুনি খায়।
একটু পরে বিরিয়ানী খাওয়ার ফল টের পেলাম , গলা শুকায়ে কাঠ হয়ে গেছে তাড়া হুড়ো করতে যেয়ে দেখি পানির বোতলটাও নিতে ভুলে গেছি । এমন সিচুয়েশনে আমার সহজ বুদ্ধি ঘুমায়ে যাওয়া  এর ভেতর সুপারভাইজার ব্যাটা একটা নাটক লাগায়েছে একটু পর পর টেনে টুনে আবার প্রথম থেক শুরু করছে এমনিতেই এদের সার্ভিসে মেজাজ খারাপ , তারউপরে আবার টানাটানি দিলাম ব্যাটারে ঝাড়ি দেখাইলে ভালোভাবে দেখাইবা আর না হলে বন্ধ করে সবাইরে ঘুমাইতে দাও তো দেখলাম ঝাড়িতে কাজ হইছে।এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ পৌছে গেলাম।নেমে ঝটপট একটা স্পিড খেয়ে নিলাম । এরপর একটা মামের বোতল , একটা কোকের বোতল আর স্যান্ডউইচ নিয়ে বাসে উঠে পাশের জনের সাথে গল্প শুরু করলাম তিনি ঢাকা ক্যাডেট কলেজের প্রোফেসর যাবেন বনপাড়া এর পর ত্যানা প্যাচাইতে প্যাচাইতে যা দাড়ালো তিনি আমার রিলেটিভ।যাইহোক তিনি বনপাড়া নেমে গেলেন । আমি যেটা তেড় পেলাম আমার হাড়-হাড্ডি সব ব্যাথা হয়ে গেছে।অবশেষে রাত সাড়ে দশটার সময় বাস রাজশাহী এসে পৌছালো।
রিক্সা নিলাম কিন্তু সারাদিনের রেশ এতো তারাতারি কেটে যাবে রিক্সা একটু যেতেই রিক্সার টায়ার বার্স্ট হয়ে গেলো আর কি করার ভাড়া দিয়ে হাটতে শুরু করলাম ।বাসায় এসে দেখি গেট ভেতর থেকে লক করা । মোবাইল বের করে দেখি একটাই ব্যালেন্স নাই আরেকটা চার্জ নীল হয়ে সুইচ অফ হয়ে গেছে।
মোবাইলের ক্যাসিং খুলে সিম আল্টারচেঞ্জ করে নিলাম।তারপর আম্মারে ফোন দিলাম। আম্মা এসে গেট খুলে দিলো ভেতরে ঢুকতেই কারেন্ট চলে গেল।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>