Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

চুক্তি শেষ পর্ব

$
0
0

চুক্তি পর্ব-১৩
আগের পর্বের শেষের কিছু অংশ হতে..
মঈনও এগিয়ে আসেন। নিশির মাথায় হাত রেখে বলেন – মা রে, পারলে আমাদের ক্ষমা করে দিস মা। সুভাও এসে দাঁড়ায়। কেমন তৃষ্ণার্তের মত তাকিয়ে থাকে। সে নিশি ছাড়া কাউকেই ভালো করে চেনে নি! বাবা না, মা-কেও না। একটা অদ্ভুত জড়তা কাজ করে।
রেহানা তাঁর ছোট মেয়েটাকে টেনে নেন – আয়, এদিকে আয়। নিশি আর সুভা – দুই বোনকে ঘিরে জড়িয়ে থাকেন মঈন আর রেহানা। সবার চোখই ভেজা।
পাশেই এই স্বর্গীয় দৃশ্যটা বিহ্বল হয়ে দেখতে থাকে আসগর পরিবার। অভিভূত মিরানা আপ্লুত হয়ে ক্ষমাই করে দিলেন মঈনকে। তাঁর আর কোনো অনুযোগ রইল না। 

শেষ পর্ব

মঈন সাহেব তাঁর নতুন করে ফিরে পাওয়া স্ত্রী-কন্যা নিয়ে ফিরে গেছেন বেশ আগে। পুরো ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে অনিমিখ। মঈন আহমেদকে দেখে মায়ের চমকে যাওয়াটা চোখ এড়ায় নি ওর। ওঁরা কি তবে পরিচিত ছিলেন একে অপরের? মিরানার অশ্রুবিজড়িত নিপুণ সামলে যাওয়াটাও দেখেছে সে। আশ্চর্য হয়ে ভাবে, কোনো অজানা গল্প কি ঘুমিয়ে ছিলো এতদিন! কিন্তু পরক্ষণে মনে হয় – থাক, সেসব জেনে আর কী লাভ? কিছু কিছু একেবারে না জানাই হয়তো ভালো। অজ্ঞতা কখনো কখনো জীবনকে বড় সোজা করে দেয়। এই সময়ে তার নিজের জীবন যে ক্রাইসিস দিয়ে যাচ্ছে, তাতে বিগত দিনের নাম না জানা অস্বস্তি ঢোকানোর কোনো মানে নেই!

নিশির পরিবারের পূনর্মিলনটা চোখে লেগে আছে। বুক ভরে গেছে অনিমিখের। নিশির জন্য বড় ভালো লাগতে থাকে। কষ্ট পাচ্ছিলো মেয়েটা। ক্ষতবিক্ষত পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকেই তো এই চুক্তি নাটকের উৎপত্তি। তবে, এখন তো প্রয়োজন ফুরিয়ে এলো। এই বোধহয় হয় – একদিকে গড়ে তো আরেক দিকে ভাঙ্গে। অবশ্য মিথ্যার উপর যে সম্পর্কের গোড়াপত্তন, তাতে ভাঙ্গন তো অনিবার্যই ছিলো! সেই ভাঙ্গনে কার কী আসে যায়? কারো বুক কি পুড়বে তাতে? কেউ কি নীরবে ক’ফোঁটা জল ফেলবে তার জন্যে?

পিছনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো রি-ওয়াইণ্ড করে দেখে নেয় অনিমিখ। হঠাত করে পুরো ব্যাপারটার অসারত্ব এবং ছেলেমানুষিতাটা প্রকট হয়ে ওঠে। সে যেন বিবেচনা ফিরে পায়। তারপর বিষাদমাখা হাসি হাসতে থাকে। এ তো হওয়ারই ছিলো!

ভালো নেই নিশিও। চলে যাওয়ার আগে একান্তে বাপির কয়েকটা কথা কেবলি অনুরণিত হচ্ছে – ইয়াং লেডি, আর ইয়্যু হ্যাপি? ডোন্ট ব্লুউ ইট আপ দিস টাইম, মাই ডিয়ার! কারণ যাই হোক কিংবা যে উপায়ে হোক, যা শুরু করেছো, লেগে থাকো, কেমন? একটা অদ্ভুত প্রশ্রয়ী এবং আন্তরিক হাসি হেসেছিলেন মঈন সাহেব। বাবা কি জানেন সব?

অবশ্য এখন আর কী যায় আসে তাতে? সিদ্ধান্ত তো সে নিয়েই ফেলেছে। তবুও পোড়া মনটা কাঁদে! বুকে অবুঝ কিছু ব্যথা উথলে উঠতে চায়। কেন বারে বারে তাকে এত মিজ্‌রেব্যল হতে হয়?

নিশি অন্যমনস্কভাবে ব্যাগ গুছাতে থাকে। যাবার সময় হয়ে এলো... ম্যাক্স হয়তো প্রতীক্ষা করছে...

অনিমিখও খেয়াল করে। সব বুঝেও তার বুকটা ধ্বক করে ওঠে।

কোথায় যাচ্ছো, নিশি?
জবাব দেয় না নিশি। একমনে গুছিয়ে চলে। অনিমিখ ব্যাগটা আটকে ধরে। নিশি ছাড়িয়ে নিতে চাইলে অনিমিখ ওর হাতটা ধরে ফেলে।
যেও না, নিশি! প্লিজ যেও না।
ঘুরে দাঁড়িয়ে জলভরা চোখে চেয়ে থাকে নিশি।
তা আর হয় না, অনিমিখ! বড় দেরি হয়ে গেছে।
কেন হয় না? সত্যি করে বলতো আমাকে কখনো ভালোবাসো নি?
সে কথার জবাব দেয় না নিশি। ঠোঁট কামড়ে চোখ নামিয়ে নেয়।
আমি চুক্তিটা ভেঙ্গে দিচ্ছি। এটার আর দরকার নেই আর। ইয়্যু আর আ ফ্রী ম্যান নাও। শেষ কিস্তির চেকটা লিখে দিয়েছি। বুঝে নেবেন। আর আপনার ঋণ মনে হয় কখনো শোধ করতে পারবো না!
ঋণ? আমি কাউকে কোনো ঋণ দেই নি। সওদা করেছি সওদা। উন্মত্তের মত হাসতে থাকে অনিমিখ।
হাসছেন কেন?
হাসবো না? মুক্তির আনন্দে হাসছি... আজ থেকে আমি মুক্ত হা হা হা।
আপনাকে আর রুবানাকে কিন্তু খুব মানাবে। দেখবেন, আপনারা সুখি হবেন।
রেগে ওঠে অনিমিখ – সুখ? কে চেয়েছে সুখ? আমার সুখের দরকার নেই। আমি তোমাকে নিয়ে অসুখীই হতে চাই, নিশি!
মানে? প্লিজ এসব বলে আমাকে আর দুর্বল করে দিবেন না...
অবশ্য আমার মত মানুষ হয়তো তোমার যোগ্যই নই। একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনিমিখ। বুক এফোঁড়-ওফোঁড় করা চোখে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে... অনুনয়ী সে চোখে বিচ্ছেদি ব্যথা, হতাশা, ব্যর্থতা, অভিমান সর্বপরি এক বুক অপার ভালোবাসা নিস্ফল আকুতি হয়ে ঝরতে থাকে।
নিশি ছুটে গিয়ে আলতোভাবে অনিমিখের মুখে হাতচাপা দেয় – ইস, এভাবে বলো না!
বলবো না? একশ’বার বলবো... কেন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?
ও তুমি বুঝবে না, অনিমিখ!
তুমি নিজেই বোঝো নাকি? আমরা কি চুক্তিটা নবায়ন করতে পারি না? ধর, আজীবনের জন্য?
প্লিজ অনিমিখ...জোর করো না...আমি যে কাউকে কথা দিয়ে ফেলেছি। কাঁদতে থাকে নিশি।
আশ্চর্য হয়ে যায় অনিমিখ – কাকে!!
ম্যাক্স। ও আমার জন্যই দেশে এসেছে।
বিনা মেঘে যেন ব্জ্রপাত ঘটে – ম্যাক্স!!

অনিমিখ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলে না। আসলে বলার কিছু থাকে না। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া! কখনো কখনো জোর স্রেফ খাটে না! কিছুতেই খাটে না...কিছুতেই না... 

নিশি চলে যেতে থাকে। হঠাত ঘুরে গিয়ে বলে – আমাকে একটু আদর করে দেবে না? শেষবারের মত...

অনিমিখ নিশির মুখটা দু’হাতে তুলে নেয়। অঝোর ধারায় জল ঝরছে। অনিমিখ খুব কাছে নিয়ে আসে মুখটা। নিশির মদির ঠোঁটের উত্তাপ কত কাছে, অথচ কী ভীষণ অধরা!! আহ্‌, কী নিদারুণ অবিচার! ঈশ্বর আর কত বঞ্চনা রেখেছেন অনিমিখের কপালে?

অনিমিখ ঠোঁটে ছোঁয় না নিশিকে। তবে আলতো করে গাঢ় গলায় বলে – ভালো থেকো, যেখানেই থাকো। তোমাকে খুব মিস করবো নিশি।

অধরের যদি কোনো হৃদয় থাকতো, তবে নিশ্চিত সেটা নিশির এই মুহুর্তের উন্নদ্ধ কামনা এবং একেবারে অপ্রত্যাশিত বঞ্চনার আঘাতে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যেত!

অনিমিখ ভাবছে – থাকুক, এই অপ্রাপ্তিটুকুই স্মৃতি হয়ে থাকুক। হয়তো আর কিছু না হোক সেই অপ্রাপ্তির মাঝেই অনাগত কালে অনিমিখ বেঁচে থাকবে নিশির বুকে, তার জ্বরতপ্ত ঠোঁটে!

অনিমিখ সহসা বলে – দাঁড়াও। খসখস করে কাগজে কী একটা লিখে। তারপর একটা খামে ভরে দিতে দিতে বলে – এখন খুলবে না। পরে সময় করে খুলো... যদি...কখনো সময় পাও...কোনো এক দিন।


নিশি চলে গেলো।
সবাই জানে নিশি বাপের বাড়ি যাচ্ছে। সত্যটা কেবল অনিমিখই জানে। হা-মুখ ব্যর্থতার অশ্রুজলে এবারে ঝুল বারান্দাটার বুক প্লাবিত হতে থাকে।

প্রায় ছ’মাস পর...

টেমস্‌মুখি ফ্লাটটার জানালা দিয়ে পড়ন্ত বিকেলের আলোহাওয়া দুদ্দাড় ঢুকে পড়ছে। পুরোনো কাগজের একটা স্তূপ উড়ে গেলে ঝপাত করে একটা খাম পড়ে গেলো। কুড়িয়ে নিতেই নিশি থমকে গেলো। এই চিঠিটাকে সে যে ইচ্ছে করেই খোলে নি।

জানলা দিয়ে হাওয়ার তোড়ে নিশির এলো চুল তিরতির উড়ে। কাঁপা কাঁপা হাতে নিশি ছিঁড়ে ফেলে খামটা। উপুড় করতেই তিনটা সাইনড্‌ চেক পড়ে গেলো মেঝেতে...নিশি স্তব্ধ হয়ে যায়। অনিমিখ টাকাগুলো নেয় নি! ফিরিয়ে দিয়েছে। কী আশ্চর্য! একটা কান্না দলা পাকাতে থাকে কণ্ঠে। চিঠিটা ছোট্ট। অল্প ক’টা কথা লেখাঃ

নিশি অরণি,

আমার জীবনের অনিঃশেষ আঁধারে এক অনবদ্য প্রেম জাগানিয়া পাথর... তোমাকে ইচ্ছে করেই এই বঞ্চনাটুকু দিলাম। আমাদের প্রেম যদি সত্যি হয়ে থাকে, এই অপ্রাপ্তিটুকুতেই আমরা বেঁচে থাকবো যতদিন বাঁচি। এই অপার তৃষ্ণাটুকুতেই খুব অলখে খুঁজে পাবো এক অপরকে। দেখে নিও। যেখানেই থাকো, খুব ভালো থাকো। আর কিছু না পারি এই চুক্তিটুকুতে তোমাকে আজীবন বন্দী করে নিলাম। পারলে এই অনধিকার চর্চাটা ক্ষমা করে দিও!!

অনিমিখ

পাথর হয়ে অস্তগামি সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে নিশি। ঠিক সে সময়ে ম্যাক্স এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিশিকে – ওয়াসস্‌ আপ, হানি? এনিথিং রং? লুক সো স্যড!
নাথিং, জাস্ট ফেল্ট লোন্‌লি ফ্যর আ হোয়াইল!
ম্যাক্স নিশিকে ঘুরিয়ে মুখটা বাড়িয়ে আনে... কিন্তু নিশি সাড়া দেয় না।
স্যরি, ফরগিভ মি... আই ক্যান ডু এনিথিং এক্সেপ্ট দ্যট ওয়ান! সে ম্যাক্সের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে।

ওপাশে সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে...

ডিম লাইটের মৃদু নীল আলোয় একান্ত অন্তরঙ্গ মুহুর্তের প্রাক্কালে রুবানাকে বরাবরের মত হতাশ করে অনিমিখ। ঠোঁটজোড়া যে আর কারো হতে দিতে পারবে না সে এ জনমে। কিছুতেই পারবে না!

অলিখিত সেই নীরব প্রেমের চুক্তি বোধহয় এমনি করেই যার যার আপাত পূর্ণ বাকী জীবনটাতেও জারী থেকে যাবে।


☼সমাপ্ত☼


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>