আমি বাংলাদেশী হতে পেরে গর্বিত। আর গর্ব করবোই না কেন? যা এদেশে সম্ভব তা আর কোথাও কি সম্ভব? কিছু ঘটনা বলি-
১। আমি ট্রাফিক সিগনাল ভেঙ্গে গাড়ি চালাতে পছন্দ করি, সর্বচ্চ গতি সীমা ৪০ হলেও মাঝে মাঝে ৮০+ গতি তুলে রেস খেলি। দুর্ভাগ্যক্রমে লাল বাতি জ্বলে গেলেও জেব্রা ক্রসিং পার করে পারলে মোড়ের উপর গাড়ি থামাই। আর এটা একমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব।
২। আমি রাস্তা পারাপারে একটুও অপেক্ষা করতে পছন্দ করি না, প্রয়োজনে হাত তুলে গাড়ি দাড় করিয়ে ট্রাফিক জ্যাম তৈরি করে হলেও রাস্তা পারাপার করি। আর এটা এই সোনার বাংলাদেশেই সম্ভব।
৩। লোক ভর্তি গাড়ির দরজায় ঝুলে চলাচলের মত এডভেঞ্চার আর কোথাও আছে নাকি? প্রতিটা মুহূর্তে জীবণমৃত্যুর দোলা দোলে। উফ কি রোমাঞ্চকর, আর কোন দেশে পাওয়া যাবে বলুন?
৪। ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার আমার একদম পছন্দ না, আমি কি ডায়াবেটিসের রোগী নাকি? আর কার হাতে এত সময় আছে? রাস্তায় জ্যাম লেগে যাক তাতে আমার কি? আমি নীচ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হবই।
৫। ঘুষ যেমন খাই তেমন দেই। ফাইল আটকে সেদিন একজনের কাছ থেকে ১০,০০০ নিলাম, দুদিন আগে আবার আমার কাজের জন্য এক কর্মকর্তার টেবিলের নিচ দিয়ে ৫,০০০ দিয়ে এলাম আর বলে এলাম জরুরী, কাজটা দুদিনের মধ্যে করে দেবেন প্লিজ।
৬। আর লাইন ধরতে আমার একদম পছন্দ নয়, এই যে সেদিন ব্যাংকে বিদ্যুৎ বিল দিতে গেলাম সেখানে গিয়ে দেখি বিশাল লাইন, আমার তাড়া নেই বুঝি? গেট-ম্যানকে ৩০ টাকা দিয়ে বিলটা ধরিয়ে দিলাম কাজ হয়ে গেল। কার ভালো লাগে এই গরমে লাইন ধরতে?
৭। সেদিন অনেক কষ্টে বাস পেলাম না, একটা অটোরিকশা ডাকলাম সে বলল মিটার থেকে ৩০ টাকা বেশি দিতে হবে? চিন্তা করে দেখলাম মিটারে গেলে ব্যাটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বেশি ভাড়া তুলে নেবে এরচেয়ে বরং দড়াদড়ি করেই যাই। সময় বাঁচবে। জানি বেআইনি, কিন্তু আইন না ভাঙ্গলে মনে হবে বাংলাদেশে আছি? বাংলাদেশী বলে আমার একটা কর্তব্য আছে না?
৮। সেদিন একটা ঝামেলা হয়েছিলো এলাকার ছোটভাই একটা মারামারি করতে গিয়ে ফেঁসে গেছে, থানায় নিয়ে গেছে। এলাকার ছোটভাই ভুল করে ফেলেছে একটা দায়িত্ব আছে না, এলাকার সংসদ সদস্য সাহেব আবার পরিচিত, তাকে ফোন করলাম তিনি থানায় একটা ফোন করে দিলেন ব্যাস কেল্লা ফতে, যদিও চা পানির খরচা হিসেবে ৫,০০০ পুলিশকে দিতেই হল। এটা এখানে চলছেই।
৯। আমি সরকারী কর্মকর্তা, আমার একটা দাম আছে না, আমার ছেলে মেয়ে গাড়ি ছাড়া স্কুল কলেজে যাবে, অফিসের গাড়ি আছে কেন? আরে তেল, মেইনটেনেন্স খরচা সব তো সরকার ই দিচ্ছে নিজের গাড়ির মত ব্যবহার করাই তো আমার কাজ, হাজার হোক আমরা বাংলাদেশী তো, ভাবছেন ড্রাইভারটাকে দিনে রাতে খাটিয়ে অন্যায় করছি? ধুর আপনি কিছুই জানেন না, ঐব্যাটা তেল বেঁচে ওভারটাইম পুষিয়ে নিচ্ছে। সাথে মাসে উপরি থেকে কিছু তো ওকে দিচ্ছিই।
১০। আর হ্যাঁ সেদিনের ঘটনা তো বলাই হয়নি, আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স করা হয়ে উঠেনি সময়ের অভাবে। তো সেদিন গাড়ি নিয়ে বেরোলাম, রাস্তায় চেক পোষ্টে থামার সিগনাল দিলো থামলাম না, স্পিড বাড়িয়ে দিলাম, কিন্তু সার্জেন্ট ব্যাটা পিছু নিলো, ঢাকা শহর তো ট্রাফিক জ্যামে আটকাতেই হলো। ধরা পরলাম, অগত্যা কি আর করা বলুন, ১০০০ টাকার মামলা দেওয়ার হুমকি দিল। কিন্তু জানেন ই তো উপায় আছে, বাংলাদেশ বলে কথা, ৫০০ তেই দফা রফা হয়ে গেল সার্জেন্ট ও খুশি আমিও খুশি, দেশ গোল্লায় যাক, আমি ভালো থাকলেই হল।
১১। আরে দাদা সেদিন একটা মেয়ে দেখলাম রাস্তায়, উফ ** ছিল একটা, জিন্স টি-শার্ট পরা ছিল। বোঝেন ই তো, যতই বই পুস্তকে পরি না কেন মেয়েদের সম্মান দেওয়ার কথা, এসময় একটু শিষ তালি না হলে চলে। ইভ টিজিংয়ের আইন আছে তো কি হয়েছে? মেয়েরা তেঁতুলের মত জিভে জ্বল তো আসবেই। বোরকা পরলেই বা কি? ওই যে গান শোনেন নি “বোরকা পরা মাইয়া তোমার নাম....”।
এতো গেল ১১ টা কারণ আরও কোটি কোটি কারণ আছে মশাই। শুধুই গর্ব করি বাংলাদেশী বলে, আরে এদেশে প্রতিদিন খবরের কাগজে ১০ টা ধর্ষণ ৫ টা খুনের খবর বেরোলেও এদেশের মানুষ দিব্যি আছে। এখানে ১০০ টাকায় লোক ভাড়া করা যায় গাড়ি ভাঙ্গার জন্য, ১০০০০ টাকায় ভাড়াটে খুনি পাওয়া যায়। আরে এগুলো আমাদের রক্তে মিশে গেছে মশাই, আমাদের রক্ত পরীক্ষা করলে আমাদের রক্তের গ্রুপ ও বেরোবে “বাংলাদেশী-”। আর এত সুযোগ সুবিধা আছে বলেই আমি গর্ব করি আমি বাংলাদেশী।
আর সেদিন দেখুন কুয়ালালামপুরে রাস্তায় হাটতে হাটতে ভুলে একটু থুথু ফেললাম রাস্তায়, দু পা এগোতে পারলাম না, পুলিশ ধরল!! আর কি আইন! কি হেনস্তাটাই না করলো! এত নিয়ম কানুনে টেকা যায় বলুন। ভাগ্যিস থুথুর উপর দিয়ে গেছে অন্য আইন ভাঙলে কি হতো কে জানে।