Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

মুভি রিভিউঃ গয়নার বাক্স (২০১৩)

$
0
0

http://www.filmlinks4u.net/wp-content/uploads/2013/05/Goynar-Baksho-2013-Bengali-Movie-Watch-Online.jpg

"গয়নার বাক্স (২০১৩)" নামের একটা কলকাতার মুভি দেখলাম অনেক প্রশংসা শোনার পর। অপর্ণা সেনের এই মুভিটায় এপ্রিশিয়েবল বলতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সাপোর্ট করাটা দেখানো হয়েছে।

ফেসবুকের একটা গ্রুপে এই মুভি সম্পর্কে কেউ একজন বেশ চটে গিয়ে লিখেছে, অপর্ণা সেন গয়নার বাক্সের গয়না বেচে মুক্তিযোদ্ধাদের হেল্প করাটা দেখানোর মাধ্যমে প্রতীকি ভাবে দেখাতে চেয়েছেন যে আসলে ভারতের দয়াতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সে তার এই বক্তব্যের সাপোর্টে মুভির একটি দৃশ্যের কথাও বলেছেন যেখানে দেখা যায়, চৈতালী নামের একটি চরিত্র বলছে, "এরা মুক্তিযুদ্ধটা বোধহয় আর বেশিদিন চালাতে পারবে না ঠাকুরমা, সম্বল বড় কম, মুক্তিযোদ্ধারা শুধু মরছে খানসেনাদের হাতে, ডাক্তার নেই আর্মস নেই ওষুধ নেই ..."
একটু পরেই আরেকটা দৃশ্যে দেখা যায়, আরেকটি চরিত্র বলছে, "আমার গয়নার বাক্স তো আছে, তুই ওই বাক্সটা নিয়া মুক্তিযোদ্ধাগো দিয়া দে, যদি ওই ফরিদপুরের বাড়িটা বাঁচাইতে পারি ..."
সুতরাং উনি ধরে নিয়েছেন যে, অপর্ণা সেন এই দৃশ্যের মাধ্যমে আসলে পরোক্ষভাবে বলতে চেয়েছেন যে ভারতের দয়া ছাড়া বাংলাদেশ বেশিদিন মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে নিয়ে যেতে পারত না।

তবে এধরনের কনক্লুশন আমার কাছে পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার মত মনে হয়। ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের সাহায্য করেছে এটা অস্বীকার করার কিছু নেই যদিও এর পেছনে ভারতের অনেক স্বার্থ ও কূটনৈতিক কারণ ছিল, এবং ১৯৭১ থেকে আজ পর্যন্ত ভারত আমাদেরকে যে বাঁশ দিয়ে যাচ্ছে, সেইসব প্যাঁচালে না যাই এখন।

কলকাতা এই মুভিটায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বেশ পজেটিভ ভাবেই দেখিয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে, সেটাকে এখন এই গয়নার বাক্সের একটা দৃশ্যের কথা বলে এর ভেতর অপমান খুঁজে পাওয়াটা এক ধরনের নোংরামি বলেই আমার বিশ্বাস। ওরা সাপোর্ট করেছে মুক্তিযুদ্ধকে, একটা মুভির ভেতরে অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই মুক্তিযুদ্ধকে, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে তুলে ধরেছে, আমরা সেটাকে অ্যাপ্রেশিয়েট করতে শিখি, সেটার ভেতরে কোন দুরভিসন্ধি না খুঁজে বেড়াই।

তবে এই মুভিটাতে যে আরো কিছু নেগেটিভ জিনিস প্রোমোট করা হয়েছে সেগুলো কোন ভাবেই ইগনোর করা সম্ভব নয়।

চাইল্ড ন্যুডিটিঃ ছবিটির প্রথম দশ মিনিটেই যেই ১২ বছরের মেয়েটির চাইল্ড ন্যুডিটির দৃশ্যটা ছিল, সেটি ছিল সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়। এটি না দেখালে মুভির কোন ক্ষতি হত না, বরং দেখিয়ে কিছুটা কন্ট্রোভার্সির (নাকি পাবলিসিটির?) চেষ্টা করা হয়েছে, যেটা পুরাই Attention Whore টাইপের মেন্টালিটি। তবে অপর্ণা সেন যেভাবে সারাটা জীবন আড়ালে থেকে গিয়েছেন, এই মেন্টালিটি যে তার নয়, ডিরেক্টর কিংবা অন্য কারো সেটা ধরে নেয়া যায়। এবার শুনুন, অপর্ণা সেন নিজেই ডিরেক্টার এই মুভির।

চুরিঃ গয়নার বাক্সটি চুরি করে কেন্দ্রীয় চরিত্র সোমলতা। এরপর সেটাকে লুকিয়ে রাখে সিন্দুকের ভেতর। কিন্তু মুভিতে ব্যাপারটাকে এমন ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে ব্যাপারটি আপনার কাছে মহান কোন কর্ম বলে মনে হবে।

পরকীয়াঃ "কি হবে সতী থেকে" কিংবা "ভালবাসা তো দোষের কিছু না, মনের ওপর তো আর জোর চলে না গো" কিংবা "যৌবন জীবনে একবারই আসে, সময় থাকতে কিছু করে নে" কিংবা "পুরুষ মানুষের রক্ষিতা থাকতে পারলে মেয়েমানুষের কেন থাকতে পারবে না গো, আমাদের কি সাধ আল্লাদ নেই?" ........ এসব ডায়লগের পাশাপাশি স্বামী কাছে না থাকলে অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক করা খারাপ কিছু নয়, এধরণের একটি মেসেজ দিতে চেষ্টা করা হয়েছে একাধিক বার। একটি পরকীয়ার প্রেমের সম্পর্ক যেটা শেষ পর্যন্ত পরিণতি পায় না বলে সেটাকে মুভির শেষ দৃশ্য পর্যন্ত অনেক মহান ভাবে দেখানো হয়েছে। পরকীয়া প্রেমিকের চিঠিগুলো নিয়ে মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্রটিকে কাঁদতে দেখা যায়, ব্যাকগ্রাউন্ডে বিরহের মিউজিক বাজতে থাকে। খোদ পশ্চিমারাও এখনো এতটা উদার (নাকি আধুনিক?) হতে পারে নি, ম্যাডাম অপর্ণা সেন যতটা হতে পেরেছেন। পরকীয়াকে বৈধতা দেবার আন্দোলনে রোকেয়া প্রাচী এগিয়ে এসে বাংলাদেশের কিছুটা হলেও মুখ রক্ষা করছেন ইদানিং।

নাস্তিকতাঃ "ছবির একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র বলে, সতী থেকে কি হবে, পাপ পূণ্যি বলে কিছু নেই গো, এই যে আমি মরে গিয়ে ভূত হয়ে বলছি, আমার কাছ থেকে শোন, এক্কেবারে ফার্স্ট হ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স।" নাস্তিকতা ভাল না খারাপ সেই ক্যাঁচালে এখন আর না যাই, আমি নেগেটিভলি নিছি সেইটা বললাম।

সংলাপঃ মুভির সংলাপে অনেকবার বাংলাদেশীদেরকে ঘটি, ছোটলোক, হাঘরে ইত্যাদি বলা হলেও এটাকে আমি নেগেটিভ হিসেবে দেখছি না, কারণ এটা ফ্যাক্ট যে ছবির পটভূমি ১৯৪ সাল থেকেই কলকাতায় এটা প্রচলিত। যেটা বাস্তব অপর্ণা সেন সেটাকেই তুলে ধরেছেন। শুয়ার, বেহায়া **** সহ অনেক গালি থাকলেও সেটাও নেগেটিভ দিকের মধ্যে পড়ে না, কারণ এগুলোও বাস্তব। সংলাপের নেগেটিভ দিক হিসেবে আমি যেটাকে দেখছি সেটা হল, অপ্রয়োজনীয় অশ্লীল ইঙ্গিতপূর্ণ সংলাপ। "দেহে বান ডেকেছে লো, মরদটাকে ধরে এনে পিষে মার, চিবিয়ে খা..." এইধরণের ডায়লগও পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় ছিল বলে আমার মনে হয়েছে।

এটা একটা ক্রাইম মুভি হলে চুরি, ব্ল্যাকমেইলিং, ন্যুডিটি কিংবা গালাগালি/সংলাপ মুভির পজেটিভ দিক হিসেবেই ধরে নিতাম।

লেখা অনেক বড় হয়ে গেছে, অফ যাই।

মুভি হিসেবে রেটিং ৫/১০
গল্পের রেটিং ২/১০


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>