বলা হয়ে থাকে চলচিত্র হোল জীবনের প্রতিচ্ছবি। জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনার সম্মীলন ফুটে উঠে চলচিত্রের পর্দায়। কিন্তু কয়টি চলচিত্র সার্থকভাবে একজন মানুষকে, মানুষের জীবনে নানা উত্থান পতনকে ফুটিয়ে তুলতে পারে। গুটিকয়েক চলচিত্রই সার্থকভাবে তা পারে – আর তেমনই এক মাষ্টারপিস ফারহান আখতারের এপিক মুভি “ভাগ মিলখা ভাগ”
ইতিহাস নির্ভর ছবির প্রতি বরাবরই একটু এলার্জী আছে। ভাল লাগে কমেডী,এনিমেশন বা আধুনিক ছবি। সেই আমি আজ দ্যার্থহীন কন্ঠে বলতে পারি একজন মুভি লাভারজ হিসেবে আমি সার্থক এই জীবনে ভাগ মিলখা ভাগ মানের একটা মুভি দেখতে পেলাম। ছবিটিকে মুভি বললে ফারহান আখতারের প্রতি অপমান করা হবে। সত্যি কথা হোল তিনি মিলখা সিং হয়ে গিয়েছিলেন ছবিটার সময় আর আমরা দর্শক তার সেই রুপান্তরটাকে দেখার সুযোগ পেয়েছি মাত্র।
পুরো ৩ ঘন্টার চিত্রনাট্য ভাগ মিলখা ভাগ মুভিটি। ভারতের অন্যতম সেরা এ্যাথলেটিক মিলখা সিং এর জীবনের আদ্যোপান্ত জুড়ে ছবিটি। মূলত তার স্বরচিত অটোবায়োগ্রাফীর আদলে হুবুহু মুভিটি নির্মান করা হয়েছে।
আমরা সাধারন চলচিত্র বোদ্ধারা ছবির খুব বেশী কিছু বুঝি না-বুঝতে পারি না বুঝতে চাইও না- আমরা মূলত বিনোদিত হবার আশায় মুভি দেখি, মুভি দেখে দারুন কিছু সময় কাটাই। কিন্তু এই বিশেষ মুভি আপনাকে বারবার মনে করিয়ে দিবে ফারহান আখতার আর অন্যান্য শিল্পীরা কি অসাধারন অভিনয় করেছেন, বার বার আপনি বিষ্মীত হবেন ক্যামেরার কাজ দেখে, অবাক হবেন পরিচালকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডিটেল কাজ দেখে। বিশ্বাষ করুন এসব বুঝতে আপনাকে বিশাল কোন চলচিত্র বোদ্ধা হতে হবে না। কেবল দেখার মতো দুটি চোখ থাকলেই যথেষ্ট।
৩ ঘন্টার ছবিটির প্রায় পৌনে ৩ ঘন্টা জুড়েই কেবল একটি মুখ-ফারহান আখতার। কিছুদিন আগে রাঞ্ঝানা দেখে বলেছিলাম এই বছরে সব পুরষ্কার ধানুষ পাবে। ফারহান আখতার নামের কোন এক পরিচালক কাম অভিনেতা যে এই মানের ছবি করবেন তা আমার ভাবনায় থাকলে এতো বড় ভুল করতাম না। এক ছবির জন্য একজন মানুষের যতোটুকু কষ্ট করা যায় ঠিক ততটুকুই তিনি করেছেন। প্রতিটি দৌড়ের দৃশ্য অনবদ্য হয়ে ফুটে উঠেছে কারন তিনি নিজে কোন অভিনয় করেন নি-নিজে সেই দৌড়গুলোতে অংশ নিয়েছেন।ছবির প্রয়োজনে নিজের শরীর গঠন করেছেন। আর এই অভিনয় দেখবার পর তথাকথিত জনপ্রিয় অভিনেতাদের অতি অভিনয় দেখে অনেক দিন আপনি হতাশ হবেন নিশ্চিত। ভাগ মিলখা ভাগ ছবিতে একজন ফারহান আখতারের মেধার সর্বোচ্চ ব্যাবহার ঘটেছে নিশ্চিত করে বলা যায়।
কারো কারো ছবির শুরুর ১ / দেড় ঘন্টা একটু বোরিং লাগতে পারে কিন্তু ছবির শেষে বোঝা যায় এই ডিটেল কাজগুলোর প্রয়োজন ছিল। ব্যাক্তিগতভাবে আমার এতো বড় মুভি একটু সময়ের জন্য বোরিং লাগে নাই। নাহ ছবিতে কোন টুইষ্ট নেই, নেই কোন আইটেম সং – কিন্তু দারুভাবে আছে একটি অসাধারন মুভি হবার সবগুলো উপাদান। মাষ্টারপিস একটা মুভি কি ভাবে নির্মিত হতে পারে বুঝতে হলে দেখতে হবে ভাগ মিলখা ভাগ। আপনি হয়তো বিনোদন নির্ভর ছবি পছন্দ করেন কিন্তু আপনার মনের গভীরে হয়তো লুকিয়ে আছে একটি অসাধারন কাজ দেখার প্রত্যাশা-সেই প্রত্যাশা পুরোটাই পূরন করে দিবে ভাগ মিলখা ভাগ।
IMDB তে এখন পর্যন্ত ছবিটিকে 8.7 রেটিং দেওয়া হয়েছে। ছবি দেখার আগে আমার কমেন্ট ছিল আবেগী ইন্ডিয়ানগুলোর অতি আবেগের ফসল। ছবিটি দেখবার পর উপলদ্ধী এই ছবিকে ১০ এর নীচে রেটিং দিল কে?কেন?কি কারনে?
বাস্তব জীবনে আপনি কি হতাশ? অনেক পরিশ্রম করার পরো সাফল্য ধরা দিচ্ছে না বলে স্রষ্টার প্রতি অভিমান আছে? জীবনে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তীর Equation মেলাতে পারছেন না? তবে হাতে ৩ ঘন্টা সময় নিয়ে বসে যান। ছবিটি জীবন সম্পর্কে আপনাকে গভীরভাবে ভাবতে শেখাবে, শেখাবে সাফল্যের মূল মন্ত্র। জানতে চান সেই মন্ত্র? তবে ছবির মূল নায়ক যার জীবনছবি এই মুভিটি সেই মিলখা সিং এর কথাটাই শুনুন না- “Hard work, Willpower & Dedication. For a person with these qualities, the sky is the limit”
এই অসাধারন Sports Biopic টি দেখতে ভুলবেন না – এই সদয় অনুরোধ রইল। সাবাশ বলিউড সাবাশ – একটি ভাগ মিলখা ভাগ জন্ম দেবার জন্য...