মুসলিম দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ডোম অফ দ্যা রক গুরত্বপূর্ন এক স্থাপনা। ডোম অফ দ্যা রক হচ্ছে মুসলিম মাজার। আরবীতে বলা হয় কুব্বাতুল শাখরা (পাথরখন্ডের গম্বুজ)। এই মাজারকে অনেকে মসজিদ বলে ভুল করে। এটা মসজিদ না। এর সামান্য দূরে অবস্থিত মসজিদুল আকসা। মহানবী মোহাম্মদ (সাঃ) যেই স্থানে যাত্রা বিরতি করে পঙ্খিরাজ ঘোড়ার উপরে চড়ে উড়ে যান জান্নাতের উদ্দেশ্যে সেই স্থানটিকে স্মরনীয় করে রাখতে জেরুজালেমে ৬৯১ খ্রিস্টাব্দে কুব্বাতুল শাখরা তীর্থ স্থাপনা নির্মান করেন উমাইয়াত খলিফা আবদুল মালেক। এই মাজারের অবস্থান মসজিদুল আকসার পাশে। ডোম অফ দ্যা রক যেখানে অবস্থিত সেই জায়গা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের কাছেও মহা পবিত্র স্থান। ইহুদি ও খ্রিষ্টান মতে আব্রাহাম (ইব্রাহীম) এখানেই ছোট ছেলে আইজ্যাক (ইসহাক) / মুসলিম মতে বড় ছেলে ইসমাঈলকে জবাই দিতে গেলে ছেলের জায়গায় ভেড়া জবাই হয়ে যায়। এই স্থান হলো ইহুদিদের কিবলা। তাদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান। তারা তাদের প্রার্থনা করার সময় এই স্থানের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে। জেরুজালেমের ইহুদিরা ডোম অফ দ্যা রকের জায়গার দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে আর ইসরায়েলের বাইরে থাকলে ইসরায়েলের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে। আর খ্রিষ্টানেরা আরো একটি কারনে এই স্থানকে পবিত্র মনে করেন। যীশু খ্রিষ্ট (ঈশা) এর শৈশব কেটেছে এই জায়গায় আর এখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে কতিপয় বিপথগামী ইহুদিরা রোম শাসকদের সাথে হাত মিলিয়ে তাকে শূলে চড়ায়।
এই মাজারটি মুসলিম নিয়ন্ত্রিত মাজার শরীফ তাই ইহুদিদের এখানে প্রার্থনা করতে দেয়া হয় না তবে এই নিয়ে মাঝে মাঝে বিবাদ হয় মুসলিম ও ইহুদিদের মাঝে। মুসলিমরা বলে এটা তাদের মাজার কুব্বাতুল শাখরা আর ইহুদিরা বলে এটা তাদের মঠ টেমপল মাউন্ট। লাগে মারামারি। মুসলিম ও ইহুদিদের মধ্যে সমজোতার ভিত্তিতে এই জায়গা ভাগ করে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিলো কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
ডোম অফ দ্যা রকের জায়গাটিকে হারাম আশ-শরীফ বলা হয়। ইংরেজিতে বলা হয় টেমপল মাউন্ট। ডোম অফ দ্যা রক মুসলিম তীর্থস্থান তবে বাংলাদেশের কিছু হুজুরেরা মসজিদুল আকসা হিসেবে এই মাজারটিকে ছাপিয়ে দেয় বিভিন্ন প্রকাশনায়। যেমন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাদের প্রকাশনায় ডোম অফ দ্যা রকের ছবি ছাপিয়ে এটাকে মসজিদুল আকসা হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে। শুধু তারা নয় আরো অনেক প্রকাশনায় মসজিদুল আকসার জায়গায় ছবি দিয়ে দেয় ডোম অফ দ্যা রকের।
মসজিদুল আকসা হচ্ছে কুব্বাতুল শাখরা থেকে কিছু দূরে।
মসজিদুল আকসা হচ্ছে মুসলমানদের প্রথম কিবলা। এভাবে মসজিদুল আকসার ছবির জায়গায় কুব্বাতুল শাখরা মাজারের ছবি দেয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। দুটো আলাদা স্থাপনা। বর্তমানে ডোম অফ দ্যা রক শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। ইহুদিরা এর ভিতরে যেতে পারে না। পুলিশের কড়া পাহারা থাকে এর চারপাশে যাদের মুসলিম ও ইহুদি সংঘর্ষ না হয়।
মাজার , মিউজিয়াম হচ্ছে কুব্বাতুল শাখরা কিন্তু একে মসজিদে কুব্বাতুল শাখরা নামে অনেকে ডাকে তবে এটা মসজিদ না। এখানে কেউ নামাজ পড়ে না। নামাজ পড়ে পাশে অবস্থিত মসজিদুল আকসায়। কুব্বাতুল শাখরা দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত। তাজমহল যেমন মসজিদ নয় কিন্তু মুসলিম স্থাপনা তেমনি কুব্বাতুল শাখরাও মসজিদ নয়, মুসলিম স্থাপনা। শুধু পার্থক্য হচ্ছে তাজমহলের সাথে কোনো ধর্মীয় তাৎপর্য নেই কিন্তু কুব্বাতুল শাখরার সাথে আছে তাই কুব্বাতুল শাখরাকে মাজার বা মুসলিম জাদুঘর বলা যেতে পারে।