আগের পর্বের শেষের কিছু অংশ হতে...
এবার সুচির খাবি খাওয়ার পালা। লজ্জা পেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি হাত দু’টো ছেড়ে দিয়ে, ‘ যান, যান। মেলা বকেছেন। ইস, কী বিরাট লাইন পড়ে গেছে!’
রাদিন চলে যেতে থাকে। তবে শেষ মুহুর্তে কী মনে করে পেছন ফিরে তাকায়। আর ঠিক তখুনি একটা অদ্ভুত কৌতুহলে সুচিও যুবকটির দিকে বড় বড় দু’চোখ মেলে তাকিয়ে ফেলে। কী সুন্দর অনবদ্য বাঙ্ময় চোখ! রাদিন সন্তর্পনে একটা শ্বাস ফেলে – এ চোখজোড়া যে স্রেফ হন্তারক! এ কী থেকে কী হয়ে গেলো ওর?
পর্ব-২
সকাল বেলা। নাশতার টেবলে টুনির মুখ প্রায় ইঞ্চি দুয়েক হা হয়ে ঝুলে পড়লো। আধা খাওয়া বাটারড্ টোস্টখানা পড়েই গেলো। সামনে বসা রাদিনের বেশবাস দেখে হাসির দমকে সে খেতেই পারছে না!
‘ ভাইয়া, এ কী বেশ ধরেছো? মম, দেখো কাঁধে একটা ব্যাগও ঝুলিয়েছে! পাঞ্জাবিটা এমন ড্যরটি দেখাচ্ছে কেন?’
‘ এ তুমি বুঝবে না টুনটুনি পাখি, খাবারটাও ঠিকমত খেতে শিখিস নি – মুখ থেকে পড়ে যাচ্ছে। বাচ্চাই রয়ে গেলি!’
‘অ্যাই, আমাকে বাচ্চা বলবে না, এই জ্যানুয়ারিতে নাইন্টিন হয়েছি...হ্যাঁ...’
‘উরেব্বাস, এ তো বিরাট হয়ে গেছিস!’ বলেই নাকটা টিপে দিয়েই বেরিয়ে যাচ্ছিল। অমনি রুবিনা হেসে বলে উঠলেন, ‘ তা টুনি ভুল কিছু বলে নি। সত্যিই তোমাকে প্রায় চেনাই যাচ্ছে না! ব্রেকফাস্টটা না করে যাচ্ছো কোথায়?’
‘কাকী, ভুলতে তো পারি না এটাতেই একসময় কেমন স্বচ্ছন্দ ছিলাম! তাই তোমাদের এখানে এলেই পুরনো অভ্যাসটা কেমন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। আর একটু তাড়া আছে, নাশতাটা করতে পারলাম না। কিছু জিনিস খুঁজতে বেরোতে হবে। স্যরি, কিছু মনে করো না’
‘জিনিস খুঁজবে, নাকি কাউকে খুঁজতে বের হবে? ঠিক করে বলো? আমি কিন্তু তোমার মোবাইল...’ শেষের কথাটা উহ্যই থেকে যায়। মুখ টিপে হাসতে থাকে টুনি।
‘কাকু, দেখেছো তোমার মেয়ের কাণ্ড! লাই দিয়ে মাথায় তুলছো – মানুষের প্রাইভেসি বলে একটা ব্যাপার আছে তো নাকি?’
ওসমান সাহেব খেতে খেতেই চোখ নাচিয়ে বললেন, ‘ তা ওরকম কিছু একটা আছে বলে শুনেছিলাম মনে হয়। এখন মনে পড়ছে না! কী দেখেছিস রে মা?’
‘কাকু তুমিও...তোমরা বাপ-বেটিতে কিন্তু আমার পিছু লেগেছো...এর ফল ভালো হবে না’
‘আহা, কেন তোমরা ছেলেটাকে জ্বালাচ্ছো? টুনি, এ তোর ভারী অন্যায়’ রুবিনা বললেন।
‘ বাদ দাও কাকী, ফিরে এসে এদের দেখে নেবো। আর টুনি গোয়েন্দা, তুমি একটু এদিকে আসো তো?’
‘ড্যডি, আমাকে বাঁচাও...’ টুনি চেঁচাতে থাকে। ‘আরে যা, যা কুছ পরোয়া নেহি। দেখ কী বলে, চিরকুমার সেজেছে, বদ কাঁহাকার!’ ওসমান সাহেব আশ্বাস দেন।
একটু তফাতে যেতেই খপ করে টুনির পনি-টেলটা ধরে ঝাঁকাতে থাকে রাদিন – ‘বল, আবার দেখবি আমার মোবাইল? মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো’
টুনিও কম যায় না, ‘বারে, তুমি এত ক্যালাস কেন - লক স্ক্রীণে কার পিক্স দিয়ে রেখেছো? তোমার পাসওয়ার্ড এত সোজা কেন? তুমি আমাকে এত ছোট মনে করো কেন? তুমি কি সত্যিই এত অবুঝ? দেখেছি – আরো একশ’বার দেখবো’
পনি-টেলটা ধরা অবস্থায় খুব অল্প সময়ের জন্য চোখাচোখি হয় ওদের। সদ্য কৈশোর পেরোনো একটা মেয়ের চোখে একটা অদ্ভুত অভিমান খেলে যায় যাকে ছুঁতে চাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব রাদিনের পক্ষে! তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিয়ে বলে, ‘ যা, ভেতরে যা। মোবাইলের কথাটা বলিস না, কেমন? প্রতিদানে যা চাইবি, পাবি’
‘প্রমিস করছো যা চাব তাই দেবে?’
‘হ্যাঁ রে বাবা, প্রমিস!’ একটু শংকিত বোধ করে রাদিন। কে জানে কী চেয়ে বসে? এই বয়সটা মারাত্মক!
‘লায়ার, ইয়্যু শুড নেভা(র) মেইক ফলস প্রমিস টু সামওয়ান হু ডিয়ারলী লংস ফর ইয়্যু’
‘অ্যাঁ, কী বললি?’ কথাটা আর শোনা হয় না টুনির - সে ভেতরে চলে গেছে।
ঘর থেকে বেরিয়েই একটু উদ্দেশ্যবিহীন হাঁটতে থাকে রাদিন রওনক। টুনির কথাগুলি অনুরণিত হতে থাকে। না, সে তো অবুঝটি আর নেই। এই তো বোধহয় বুঝতে পারছে টুনির যন্ত্রণাটা। সেটা কি না পাবার ব্যথা? হবে হয়তো। ঠিক ক’দিন আগেই এই বেদনার বীজ উপ্ত হয়েছে তার উদাসীন বুকে। শূন্যতায় তরতর বাড়ছে আকাঙ্খার অদ্ভুত যে বৃক্ষটি, তার পাতায় পাতায় সেই চপলা মেয়েটির কথা মৃদুমন্দ ছন্দে দোল খাচ্ছে। এতোটা একা তো তার আর কখনো লাগে নি!
তক্ষুণি মনে পড়ে যায় – আরে, সে তো অচেনাকে চিনতেই আজ বের হয়েছে। কিন্তু কোথায় পাওয়া যাবে তাকে? প্রায় কিছুই জানা নেই শুধু চুরি করে মোবাইলে তোলা ছবিগুলো ছাড়া। অনুমতিহীন তোলা হয়েছে – ক্ষমাও চাওয়া উচিত। কোথায় থাকে কে জানে? টুনির কথাই ঠিক – ক্যালাস! দরকারি ইনফরমেশনগুলো নেয়ার কথা তার কখনোই মনে থাকতে চায় না। এখন কী করা যায়? আচ্ছা, ঐ শপিং মলটায় আবার গেলে কেমন হয়? এমনও তো হতে সে ওখানেই কোথাও কাজ করে। দুর্বল আইডিয়া – নিঃসন্দেহে! কিন্তু আপাতত এটাকেই বেশ ভালো হেড স্টার্ট বলে মনে হচ্ছে!
ভাবতে ভাবতেই দেখলো যে বাসখানায় উঠবে ভেবেছিলো তা বাই বাই জানিয়ে কেটে পড়ছে – ধুস! শালা!
চলবে...