মাইক্রোসফটের এ সময়কার বহুল আলোচিত প্রোডাক্ট হচ্ছে তাদের উইন্ডোজ ফ্যামিলির সর্বশেষ সংস্করন "উইন্ডোজ এইট" মাস দুয়েক আগে ডেভলপার প্রিভিউ" রিলিজ করার মাধ্যমে তারা সাধারন ইউজারদের মধ্যে নতুন এই অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে আইডিয়া দেয়। ধারাবাহিকতায় ২৯ফেব্রুয়ারীতে তারা রিলিজ করে পাবলিক বেটা বা কনজ্যুমার প্রিভিউ। ব্যাক্তিগত ব্যাস্ততায় সময় হয়ে উঠেনি বলে নিজের জিনিসটা নেড়েচেড়ে দেখতে বেশ সময় লাগলো। শেষ পর্যন্ত গতকাল রাতে ডাউনলোড+বার্ণ করে সেটাপ করার মত সময় পাওয়া গেছে।
তো উইন্ডোজ এইট সম্পর্কে ব্যাক্তিগত অভিমত / অভিজ্ঞতাটুকু শেয়ার করার প্রয়াসেই এই টপিকঃ
আমি নিজে এইচপির ল্যাপটপ ব্যাবহার করি, কনফিগারেশন বলতে কোর আই ৫ ফার্স্ট জেনারেশন, ৬গিগ র্যাম, বিল্ট ইন এইচডি গ্রাফিক্স চিপ, এইচএম৫৭ চিপসেট বোর্ড। আমার হার্ডডিস্ক জিপিটি স্টাইলে ফরম্যাট করা কাজেই ৬৪বিটটাই নামালাম, তাছাড়া ৬গিগা র্যামটাও ইস্যু ছিল একটা। নামাতে গিয়ে যেটা আবিস্কার করলাম ডিরেক্ট ডাউনলোডে পুরোটা ডাউনলোড হয় না। ৯৯.৭% এর মতো হয়, বাধ্য হয়ে টরেন্ট রিচেক করে কমপ্লিট করতে হলো।
মাইক্রোসফট একটা টরেন্ট দিলেও দিতে পারতো!
বার্ণ করেছি ডিভিডি R/W তে। যেহেতু জিপিটি ডিস্ক, কাজেই EFI বুট করতে হবে, EFI বুট ছাড়া GPT ডিস্কে সিস্টেম ইনস্টল করতে দেয় না। যাহোক, বুট করার পর মার্কামারা একখান এরর কোড দিলো, দেখেই মেজাজ পুরো খারাপ, কিন্তু এন্টার মারার পরই দেখি সেটাপ প্রসিডিউর কন্টিনিউ করলো! গতানুগতিক ভাবেই ইনস্টলেশন হলো, যথেষ্ঠ সময় লাগলো যদিও। সেটিংস কাস্টমাইজ করে ডেক্সটপ আসার পর খানিকটা WoW ভাবই মনে এসেছিল। ডেভলপার প্রিভিউ থেকে অনেক ইমপ্রুভ করেছে (সেটাই স্বাভাবিক, আলফা সবসময়ই জঘন্য হয়, বেটা হয় বেটার, বেটি কেমন হয় জানি না, তবে ফাইনাল রিলিজেও বাগ থাকেই)
আর ঘোড়ারোগ বা যে রোগের কারনেই হোক, আমি উইন্ডোজ এইট কে ডুয়াল বুট করি নি। ফ্রেশ এবং একমাত্র সিস্টেম সফটয়্যার হিসেবে সেটাপ করেছি।
জিপিটি বুটের জন্য বুটে কি ধরনের চেঞ্জ এনেছে দেখতে পারলাম না। জিপিটি বুটে সেই উইন্ডোজ ভিস্তার মতই লোডিং বার দেখায় (উইন্ডোজ সেভেনেও সেটাই দেখাতো), তবে বুট দ্রুত হয় (জিপিটির কারনে হোক কিংবা সিস্টেমের কারনে)
মেট্রো স্টার্ট মেনুকেই ব্যবহার করা হয়েছে, ডেক্সটপ বা নন টাচ সিস্টেমের জন্য অল্টারনেটিভ রাখা হয় নি। এমনকি আগে মেট্রো ডিজ্যাবল করা যেত, এখন সেটাও উইন্ডোজ বন্ধ করে দিয়েছে। মন্দ হয় নি, এটা যদি নাই থাকতো তাহলে এটাকে উইন্ডোজ ৭ বলেই মনে হতো আসলে। (আসলে কি খুব বেশী পার্থক্য ? Windows 7 ছিল ভার্সন 7.1, আর এইট হচ্ছে 7.2, পুরাই বেহুদা কাজকারবার!!)
প্রথমেই যেটা চোখে পড়ার মত, সেটা হচ্ছে পারফর্মেন্স! প্রচন্ড স্পিডি মনে হয়েছে, উইন্ডোজ সেভেন এর থেকে মূল পার্থক্য এটাই গড়ে দিয়েছে বলা যায়) ৬গিগা র্যামে আমি উইন্ডোজ সেভেনে ফ্রেশ ইনস্টলের পরেও যে স্পিড পেয়েছি এখন একগাদা সফটয়্যার থাকার পরও তার থেকে বেশী ফাস্ট মনে হয়েছে (এটা এখনও বেটা, সামনেই ধাপ করে স্লো হতেই পারে), সিস্টেম রেটিং চেক করতে গিয়ে দেখা গেল পারফর্মেন্স খানিকটা বেড়েছে, ৪.২ থেকে বেজ স্কোর ৪.৫ এ উন্নীত হয়েছে। খুশি হওয়ার আগেই খেয়াল করলাম, উইন্ডোজ সেভেন মেজার করতো ৮ এর স্কেলে, এইট মেজার করে ১০ এর স্কেলে। অর্থাৎ সামনের হাই এন্ড টেকনোলজীগুলোকেও মাথায় রেখেই এগুচ্ছে এরা। নতুন টেকনোলজীর জন্য ৮.০ থেকে ৯.৯ পর্যন্ত এক্সট্রা স্কেল থাকছে।
অনেকেরই রিপোর্ট পেয়েছি সিস্টেম ভাল হয় নি, বেশীরভাগ কমন রিপোর্ট ছিল ডিভিডি রম কাজ করে না। আমার এমন কোন সমস্যা পাই নি, ঠিকমতই কাজ করছে সবকিছু, প্রতিটা ডিভাইসই ডিটেক্ট করছে, যথাযথ ভাবেই কাজ করছে। শুধু একটাই সমস্যা পেলাম সিস্টেমে, প্রয়োজন না থাকলে প্রসেসরকে স্লো করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি স্লো করে দিচ্ছে। সাধারনত আমার ২.৪গিগাহার্জ প্রসেসর আইডল স্টেটে ১.২ গিগাহার্জে নেমে আসে। কিন্তু এইট আমাকে ৬০০ মেগাহার্জ এ নামিয়ে দিচ্ছে। ভয়াবহ অবস্থা হয় তখন!!!
*
এ্যাপ স্টোর, মেট্রো নিয়ে বহু কথা হয়েছে কাজেই নতুন কিছু বলার নেই। তবে শেষ পর্যন্ত মেট্রো যথেষ্ঠ ভালো লেগেছে। এপ্লিকেশন সোয়াপ চমৎকার করেছে। মেট্রো এ্যাপগুলো এখন টাস্ক ম্যানেজার ছাড়াই ক্লোজ করা যাচ্ছে বেশ সহজে। জা্স্ট রাইট ক্লিক করে ক্লোজ করলেই হলো।
স্টোরে এ্যাপ্লিকেশনের পরিমান দেখে বড় আহত হয়েছি। পুরো সিস্টেম ঘেটে একটাই গেম নামিয়েছি, "কাট দ্যা রোপ" এন্ড্রয়েডে গেমটা পেইড হলেও এটাতে ফ্রী। ধূমায়ে খেলে শেষ করে দিলাম একবারেই ! ওয়ার্ডপ্রেস টা ইনস্টল করবো ভেবেও করলাম না। মেইল এ্যাপটা খুবই কাজের আমার জন্য (বিল্টইন ভাবে থাকার কারনে ভালই লাগে) তবে টুইটার এ্যাপ না থাকায় মেজাজ খারাপ হয়েছে।
মিউজিক, ভিডিও ইত্যাদির জন্য মেট্রো এ্যাপ যোগ করা হয়েছে যদিও, ভাল লাগে নি। মিউজিক/ভিডিও প্লে করা ছাড়া আর কোন এডভান্স অপশনই নেই। তবে তাই বলে বাদ দেয়া হয় নি উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ার কে। আপাতত সেটাকেই ডিফল্ট করে চালাচ্ছি আমি, সাথে আইটিউনস তো আছেই।
মেট্রো এ্যাপ হিসেবে Zune কে এ্যাড করলে আসলে ভাল করতো। কিন্তু কে বোঝাবে ঐ পাবলিকদের এটা ?
সিস্টেম সেটিংস ভাল করেছে, পাওয়ার ফীচার আগের তুলনায় সহজ করে দিয়েছে। ড্রাইভার বলতে কেবল মাত্র এক্সটেন্ডেড সাপোর্টের জন্য দিতে হয়েছে। গ্রাফিক্স এর ড্রাইভার এক্সেপ্ট করে নি, শুধু গ্রাফিক্স এর টার্বো বুস্ট ড্রাইভার ইনস্টল করে খালাস! বাদবাকী ভালই কাজ করছে।
ফন্ট রেন্ডারিং বেটার! বাংলার জন্য ভালই সাপোর্ট বলা যায়। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ১০ বেটাও যথেষ্ঠ ফাস্ট। ইনফ্যাক্ট যথেষ্ঠই ফাস্ট!!! কে যেন রিপোর্ট করেছিল ক্লিয়ার টাইপ সেটিংস নেই। তথ্যটা ভুল। ক্লিয়ার টাইপ আছে, এবং ভালভাবেই কাজ করে।
সিস্টেমটুলস গুলো আগে সহজে পাওয়া যেত, এখন এইসব এডভান্স লেভেলের কাজগুলো করার জন্য একটু এডভান্সড হয়েই এগুতে হচ্ছে। তবে সার্চ অপশনটার কারনে কোন কিছুই খুঁজে পাওয়া কস্টকর হচ্ছে না।
Windows Update এ ভাল ইমপ্রুভমেন্ট করসে এখন একটা। আপডেট নেয়ার পর রিস্টার্ট দরকার হইলে মেসেজ বলে "তুমি যদি এখন রিস্টার্ট না দাও, তাইলে দুইদিন পর রিস্টার্ট নিবেই" কি হুমকি রে বাপ! ডরাইসি দেইখা!! (তবে বেটারা টের পাইসে মনে হয় যে ল্যাপটপ ওয়ালারা উইন্ডোজ শাটডাউন করে না।)
যাইহোক, যতই ভাল হোক মন্দ হোক, তারপরও হাজার হাজার ইউজাররা ঠিকই উইন্ডোজ এইট ইউজ করতেই দৌড়াবে, এইটা আমার বিশ্বাস না, এইটা চিরাচরিত স্বভাব!
পুনঃ আরেকটা চেঞ্জলগ পেলাম। উইন্ডোজ সেভেন এ আইটিউনস কে ডক করা যেত না। উইন্ডোজ এইটে আবার সেইটা করা যাচ্ছে । আগে ভিস্তাতে যেত। কিন্তু উইন্ডোজ সেভেনে করতে পারি নি কখণো।