পরের দিকের পাঠকদের জন্য ঃ মাটির মানুষ (আবারো সায়েন্স ফিকশান)
‘মাটির মানুষ’ প্রজেক্টকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো শেষ হয়ে গেছে মাস তিনেক হলো। অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর মিমো আজো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তার দৈনন্দিন কাজে। লেকচার দেয়া, পরীক্ষা নেয়া, পেপার চেক করা, রেজাল্ট দেয়া। সব আগের রুটিন। তবে এগুলোর সাথে যোগ হয়েছে আরও নতুন কিছু কাজ। প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম আর মেডিটেশন। একটা নতুন ধরনের গবেষণার কাজও করছে মিমো। এটা সফল হলে টেলিকমিউনিকেশনের সেক্টরে একটা বিপ্লব তৈরী হবে।
অ্যাডভান্সড ইলেকট্রনিক্সের ক্লাস নেয়ার সময় মিমো বেশ ভালো রকমের বিরক্তি বোধ করলো। অটো-হোয়াইট বোর্ডগুলো ম্যালফাংশন করছে। ‘ক্লিয়ার দ্যা বোর্ড’ বলার সাথে সাথেই বোর্ডে লেখা কালো কালিগুলো মুছে গিয়ে ঝকঝকে হয়ে যাবার কথা। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে প্রতিবারই এই কথাটা বলার সাথে সাথেই বোর্ড পরিস্কার হবার পরিবর্তে উল্টো লেখা উঠছে ‘হোয়াই ডোন্ট ইউ ক্লিয়ার ইট বাই ইউরসেলফ বস?’। কোন স্টুডেন্টের সস্তা ধরনের রসিকতা হবে হয়তো। মিমো বাধ্য হয়ে প্রতিবার লেখার পরে পকেটে থাকা রুমাল বের করে তা মুছে ফেলছে। এই ধরনের কাজ তার শিক্ষকতার ক্যারিয়ারে এই প্রথম করতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর এই ধরনের কাজ করা কষ্টকর এবং বিরক্তিকর বৈকি। মান্ধাত্যা আমলের শিক্ষকরা যে কিভাবে এই কাজ দিনের পর দিন করে যেত খোদা জানে। এইসব চিন্তা করতে করতেই ক্লাসের দরজায় এক অপরিচিত মুখের উদয়। কালো রংয়ের স্যুট আর চোখে কালো গগলস পরিহিত দীর্ঘদেহী মানুষটা দরজা খুলে ঢুকে গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো।
- মাফ করবেন প্রফেসর মিমো। লেকচারের মাঝখানে আপনাকে বিরক্ত করলাম।
- তা করেছেন বৈকি। বিরক্ত যখন করেই ফেলেছেন তখন কারণটাও বলে ফেলেন।
- আমি রেহমান। ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স। আপনার সাথে আমাদের একটু জরুরী দরকার ছিলো। আপনি কি আমাদের একটু সময় দিতে পারবেন।
- নাহ। সময় দিতে পারবোনা। দেখছেন না ক্লাস নিচ্ছি। ১৫ মিনিট পরে।
- আচ্ছা স্যার। আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি।
মিমোর চিন্তা হচ্ছে। কি হলো আবার? একেবারে ইন্টেলিজেন্সওয়ালাদের আগমন!! আর আমরা কথার মানে কি? সাথে মনেহয় কোন চ্যালাচামুন্ডাকে নিয়ে আসছে ব্যাটা। কি চায় ব্যাটারা? ধুর! এত চিন্তা করে লাভ কি? ১৫ মিনিট পরেতো জানা যাবেই, তাই না? নিজের মনকে বোঝায় মিমো আর লেকচার শেষ করার দিকে মনোযোগ দেয়।
লেকচার শেষ করে বের হয় মিমো। করিডোরের এক মাথায় দেখতে পায় এজেন্টদের। দূর থেকে রেহমানের সাথের জনকে মেয়ে মনে হচ্ছে। পিছন ফিরে কারো সাথে কথা বলছে মনেহয় কমিউনিকেশন মডিউলে। কাছে গিয়ে বেশ রুক্ষ স্বরে মিমো বললো,
- বলেন কি বলবেন।
রেহমানের সঙ্গিনী এজেন্ট এবার সামনে ফিরে তাকিয়ে হাসিমুখে তাকিয়ে জবাব দেয়,
- হ্যালো মিমো, কেমন আছো?
কিছুটা অবাক হলেও সেটা চেহারায় প্রকাশ হতে দেয় না মিমো (টিপিক্যাল মিমো অ্যাটিটুড)। তারপর বলে ওঠে,
- ভালো বা খারাপ জিনিসটা আপেক্ষিক। কাজেই আমি শুধু ভালো আছি বা শুধু খারাপ আছি বললে কোনটাই পুরো সত্য হবে না।
- আমি নিশ্চিত যে তুমি ভালো আছো। খারাপ থাকলে তুমি এরকম প্যাচ মেরে একটা সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে না। হাতে এত কালিঝুলি কেন? টিচিং ছেড়ে কি এখন বাইভারবালের মেকানিক হয়েছো নাকি?
- (মুখে একটা তাচ্ছিল্যভাব)হাতে কালিঝুলি থাকলেই কি মানুষ বাইভারবালের মেকানিক হয়ে যায়? রোবটের মেকানিকও তো হইতে পারি? এইসব আজাইরা প্যাচাল ছাড়ো তানো ওয়াজ। কেন আসছো সেটা বলো।
- তোমাকে আমাদের খুব দরকার মিমো। সরকার একটা কাজে তোমার সাহায্য চায়।
- এইটা কি নির্দেশ নাকি অনুরোধ?
- অনুরোধ। তোমার ইচ্ছে না হলে তোমাকে জোর করা হবে না। তবে আমার অনুরোধ থাকবে যে তুমি অন্তত শোনো কাজটা কি।
- আচ্ছা। বলো কি কাজ।
- তোমাকে ডেথ ভ্যালীতে যেতে হবে।
(চলবে)