পৃথিবী ভূমিকম্পের ধাক্কা কতবার সহ্য করেছে তা যেমন বিরাট গবেষণার বিষয়, ভূমিকম্প ও তার জন্য আমাদের কি করা উচিত অনুচিত তা নিয়ে যে নচিহৎ কিছুদিন পর পর বয়ান করা হয়েছে তার সঠিক মাপযোক নির্ণয়েও প্রত্নতাত্ত্বিক ও গণিতবিদদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। একই সাথে আমি এও মনে করি এ সম্পর্কে আরও কিছু বয়ান কারও পাকা ধানে মই দিবেনা। যেহেতু সবাই সবকিছু বলে ফেলছে আমার নতুন করে কিছুই বলার নাই, তাই এই পোস্টের অনেক কিছু আমি সরাসরি অন্যদের থেকে ধার করেছি। কৃতজ্ঞতাস্বীকার অংশে আমার পাওনাদারগণের নাম ঠিকানা আপনার পাবেন। কোথাও কোন সংশোধনী আনার প্রয়োজন হলে দয়া করে জানাবেন।
আসুন আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
প্রকৃতির বিভিন্ন কারণে ভূ-আলোড়নের ফলে ভূ-পৃষ্ঠের কোন কোন অংশে আকষ্কিক কম্পনের সৃষ্ঠি হলে তাকে ভূমিকম্প বলে। বিজ্ঞানিরা ভূমিকম্পের বিভিন্ন কারণ নির্ধারণ করেছেন। যেমন:
- ভূ-আলোড়নের ফলে ভূ-ত্বকের কোন স্থানে শিলা ধ্বসে পড়লে বা শিলাচ্যুতি ঘটলে ভূমিকম্প হয়।
- ভূ-ত্বক তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হলে ভূ-নিম্নস্থ শিলাস্থরের ভারে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে বহির্ভাগে ও অভ্যন্তরে ফাটল বা ভাজেঁর সৃষ্ঠি হয়, তখন ভূ-পৃষ্ট কেঁপে উঠে।
- পৃথিবীর অভ্যন্তরে অত্যাধিক তাপের জন্য উত্তপ্ত বাষ্প/শিলারাজির চাপে নিকটবর্তী স্থানে ভূমিকম্প হয়।
- আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের সময় উর্ধ্বমুখী উত্তপ্ত বাষ্প/শিলারাজির চাপে নিকটবর্তী স্থানে ভূমিকম্প হয়।
পরিমাপ
ভূমিকম্পের মাত্রা দুভাবে নির্ধারণ করা হয়।
১. ম্যাগনেচুড (মাত্রা)
২. ইনটেনসিটি (তীব্রতা)
ম্যাগনেচুড (মাত্রা): সাধারণ রিখটার স্কেলেই ম্যাগনেচুড (মাত্রা) মাপা হয়। স্কেলের এককের সীমা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। রিখটার স্কেলে মাত্রা পাঁচের বেশি হওয়া মানে ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা।
রিখটার স্কেলে প্রতি ১ মাত্রা বৃদ্ধি মানে ভূকম্পনের শক্তি প্রায় ৩২ গুণ বেড়ে যাওয়া। এটি ভূমিকম্প সৃষ্টির প্রধান নিয়ামক। ভূমিকম্পের বিভিন্ন স্তরের পরিবর্তনের কারণে শক্তির যে নিঃসরণ ঘটে, এর সঙ্গে এটি সরাসরি জড়িত।
ইনটেনসিটি (তীব্রতা): সাধারণত সংশোধিত মার্কেলিং স্কেলে এটি মাপা হয়। মানুষের অনুভূতি, গৌণ কাঠামো ও কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের ওপর এটি নির্ভরশীল। এর এককগুলো প্রকাশ করা হয় রোমান সংখ্যায়, অর্থাত্ I থেকে XII পর্যন্ত। ইনটেনসিটি বেশি হলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। একটি নির্দিষ্ট ভূমিকম্পের জন্য জায়গাভেদে এর পরিমাত্রা ভিন্ন হয়।
ভূমির কম্পন এবং এর মাত্রার তীব্রতা নিরুপনের জন্য সাধারণত সিসমোগ্রাফ এবং রিক্টারস্কেল ব্যবহৃত হয়। সিসমোগ্রাফের সাহায্যে ভূ-কম্পনের অনুলিপি প্রস্তুত এবং রিক্টারস্কেলের সাহায্যে ভূ-কম্পনের মাত্রা নিরুপন করা হয়।
সিসমোগ্রাফের কার্যপদ্ধতি ও আউটপুট নিচের ছবি দুটোতে খেয়াল করুন।
১৯৩৫ সালে সি.এফ.রিক্টার ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপের একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক স্কেল প্রবর্তন করেন। তাঁর নামানুসারে একে রিক্টার স্কেল নামে অভিহিত করা হয়।
ভূমিকম্পন প্রবণ এলাকা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
বাংলাদেশের অবস্থান তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি এবং ইন্ডিয়ান প্লেটের উপর। অন্য দুটি প্লেট হলো ইউরেশিয়ান (ইউরোপ+এশিয়ান) প্লেট এবং বার্মিজ প্লেট। এই তিনটি প্লেট মোটামুটি ইন্টারলকিং (দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত এবং কম নড়াচড়া বিদ্যমান) অবস্থায় আছে। এই লক খুলে গেলে বিরাট মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে।
ভূমিকম্পন এর প্রবণতার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ভূমিকম্প সমিতির সহসভাপতি মেহেদী আহম্মদ আনসারী বলেন,
"ভূমিকম্পের ইতিহাস ও ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ—ভূমিকম্প-প্রবণতার দিক থেকে বাংলাদেশকে এমন তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে পড়েছে।অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি তৈরি, নিম্নমানের নির্মাণ-উপকরণের ব্যবহার, জাতীয় ভবন নির্মাণ আইন মেনে না চলা ইত্যাদি কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এসব অঞ্চলে।"
ভূমিকম্পে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি
একটি ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি এর তীব্রতা ও প্রচন্ডতার উপর নির্ভরশীল। একটি বিপর্যয়কর ভূমিকম্পে ক্ষয়-ক্ষতির ধরন সাধারণত নিম্নরূপ হয়ে থাকে:
- ভবনাদি ধ্বসে/ভেঙ্গে পড়ে এবং অগ্নিকান্ড ঘটে।
- বিধ্বস্ত হয়ে পড়া ভবনাদির নীচে মানুষ ও গবাদি পশু আটকা পড়ে।
- গ্যাস লাইন কেটে যায়/বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে/পানি ও পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ধ্বংস হয়।
- যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটে।
- ক্লিনিক/হাসপাতাল ভবনাদি ধ্বসে/ভেঙ্গে পড়ে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটে।
- বহুবিধ মৃত্যু ঘটে।
- রাসায়নিক দ্রব্যাদি নির্গত ও বিস্ফোরিত হয়।
- রাস্তা-ঘাট, সেতু-কালভার্ট ধ্বংস হয়ে জরুরী যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।
- নদী বা সমুদ্র উপকূলে জলোচ্ছ্বাস হয়।
ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতি
ঘরের প্রস্তুতি
আশ্চর্য মনে হলেও সত্যি যে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মূল কারণ বিল্ডিং ধসে পড়া নয়। বরং আসবাব, ভঙ্গুর কাঠামো অথবা তৈজসপত্রের কারণেই বেশিরভাগ ক্ষতি হয়ে থাকে। জোরাল ভূমিকম্পের সময় মেঝের আগে-পিছে ঝাকুনি সেকেন্ডে কয়েক ফুট পর্যন্ত হতে পারে যার কারণে ঘর থেকে বের হওয়া দুস্কর হয়ে পড়ে এবং ঘরেরমাঝে ছুটন্ত বস্তুর আঘাতেই আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা প্রবল থাকে। এর থেকে রক্ষা পেতে হলে -
- শেলফ ও আলমারিতে বড় ও ভারি মালপত্র নিচের দিকে রাখুন।
- ভঙ্গুর তৈজসপত্র যেমন বোতল, গ্লাস, কাপ, প্লেট ইত্যাদি বন্ধ ক্যাবিনেটে রাখুন।
- দেয়ালে ঝোলানো ভারি শো-পিস যেমন ছবির ফ্রেম, আয়না ইত্যাদি বিছানা, সোফা অথবা অন্য কোন বসার স্থান থেকে দূরে রাখুন।
- ত্রুটিযুক্ত বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং এবং গ্যাসের লাইন মেরামত করে নিন। এসব স্থান থেকে সহজে আগুন ধরতে পারে।
- দেয়ালে বা সিলিং এ ফাটল থাকলে মেরামত করে নিন; এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত নেয়ার দরকার হতে পারে।
- যেসব বিল্ডিং এখনো তৈরি হয়নি সেগুলো যথাযথ বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করুন।
ঘরে-বাইরে ভূমিকম্প হতে নিরাপদ স্থানসমূহ চিহ্নিত করুন
- ভারি টেবিল বা মজবুত চৌকি বা খাটের নিচে।
- ভিতরের দিকের দেয়ালের পাশে (সীমানার দিকের দেয়াল ও জানালার কাছে থাকা বিপজ্জনক)।
- জানালা, ছবির ফ্রেম বা আয়না জাতীয় ভঙ্গুর কাঠামো এবং ঝাকুনিতে পড়ে যেতে পারে এমন ভারি আসবাব থেকে দূরে।
- ঘরের বাইরে খোলা এলাকা - যা কোন বিল্ডিং এবং বৈদ্যুতিক লাইন থেকে দূরে।
নিজে ও পরিবারের সবাই সচেতন হোন
- ভূমিকম্পের আগে, ভূমিকম্পের সময় ও এর পরে কি করণীয় সে বিষয়ে সচেতনতা।
- ভূমিকম্প হতে নিরাপদ স্থানগুলো চিহ্নিত করার যোগ্যতা যাচাই।
- ভূমিকম্পের সময় কি করতে হবে তার মহড়া।
শুধু নিজে নয়, অপরকেও এসব জানতে সাহায্য করুন
- পোস্টার, বিলবোর্ডের মাধ্যমে।
- ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।
- স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ঘরে ঘরে অথবা স্কুল-কলেজে প্রচারের মাধ্যমে।
ভূমিকম্পের সময় করনীয়
ভূমিকম্পের সময় চলাফেরা কঠিন ও বিপজ্জনক। তাই যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়া প্রয়োজন। দৌড়ে বের হওয়া তখনই উচিত হবে যখন আপনি বাড়ির গেট এর কাছে থাকবেন এবং বাইরে বিল্ডিং ও বৈদ্যুতিক লাইন থেকে দূরে যাওয়া খুব অল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব। কাজেই, বাইরে বের হওয়া সম্ভব না হলে ঘরের নিরাপদ আশ্রয় ব্যবহার করা প্রয়োজন।
বাড়ির ভিতরে থাকলে
- মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে বসে পড়ুন, ভারি টেবিল বা খাটের নিচে আশ্রয় নিন এবং খাট বা টেবিলের পায়া ধরে রাখুন যাতে করে ঝাকুনিতে তা সরতে না পারে। এই পদ্ধতিকে বলে ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন’ বা ‘ডাক-কাভার’ পদ্ধতি।
এই সম্পর্কিত একটি ভিডিও দেখুন যেখানে লস এঞ্জেলস ফায়ার ডিপার্টমেন্টের Battalion Chief Larry Collins ডাক-কাভার পদ্ধতি শিখাচ্ছেন।
উন্নত বিশ্বে যেখানে বিল্ডিং কলাপস হয় কম কিন্তু আশেপাশের বিভিন্ন জিনিষ বা ফার্নিচার গায়ের উপর পড়ে নেক-হেড-চেস্ট ইনজুরি হয় বেশি সেখানে এগুলো থেকে রক্ষার জন্য কোন শক্ত ডেস্ক বা এরকম কিছুর নীচে ঢুকে কাভার নেয়া বেশি জরুরী। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশে এই পদ্ধতি কতটুকু কাজ দেবে তা বিবেচনা করা উচিত কেননা উদ্ধার কর্মীদের মতে বিল্ডিং কলাপস করলে ‘ডাক-কাভার’ পদ্ধতি একটি মরণ ফাদেঁ পরিণত হবে। তাই সেটা না করে কোন বড় অবজেক্ট যেটা কম কম্পপ্যাক্ট করবে যেমন সোফা ইত্যাদির পাশে আশ্রয় নিলে যে void তৈরী হবে, তাতে বাঁচার সম্ভাবনা বেশী থাকবে।
আমেরিকান রেডক্রসের পরামর্শ অনুযায়ী ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল ‘ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন’ বা ‘ডাক-কাভার’ পদ্ধতি। তবে যেহেতু আমেরিকায় বিল্ডিং কলাপ্স হবার সম্ভাবনা কম, তাই তাদের ‘ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন’ পদ্ধতিই বিভিন্ন বস্তুর আঘাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য সবচেয়ে উত্তম। তাই দু’টো ব্যাপারই মাথায় রাখা সর্বোত্তম হবে।
উদ্ধার কর্মীরা আরো লক্ষ্য করেছেন- বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ার সময় সিলিং যখন কোন অবজেক্টের ওপর পড়ে একে গুঁড়িয়ে দেয়, ঠিক তার পাশেই ছোট্ট একটি খালি জায়গা বা void-এর সৃষ্টি হয়। একে তারা বলছেন ‘সেফটি জোন’ বা ‘ট্রায়াঙ্গল অফ লাইফ’। তাই ভূমিকম্পের সময় বড় কোন সোফা বা বড় কোন অবজেক্ট যেটা কম কম্প্রেস করবে- এরকম কিছুর পাশে আশ্রয় নিলে বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ছোট্ট একটু void-ই যথেষ্ট। বিপন্ন অবস্থায় কুকুর, বিড়াল এবং শিশুদের একটা সহজাত প্রবৃত্তি হল কুন্ডলি করে গুটিশুটি হয়ে যাওয়া। ভূমিকম্পের সময় মানুষেরও এটা অনুসরণ করা উচিত। তাহলে বিভিন্ন অবজেক্টের পাশে গুটিশুটি করে আশ্রয় নিলে এগুলো ভূমিকম্পের সময় যে ছোট void-এর সৃষ্টি করবে তাতে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
এখানে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, এই "triangle of life" বা "void" থিউরি কয়েকটি অনুমানের ভিত্তির উপর দাড়াঁনো যাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখান করেছেন Earthquake Country Alliance.
অনুমানগুলো আর তার জবাব নিচে সরাসরি উদ্ধৃতি দিচ্ছি Earthquake Country Alliance এর ওয়েবসাইট থেকে। (http://earthquakecountry.info/dropcoverholdon/)
- buildings always collapse in earthquakes (wrong- especially in developed nations, and flat "pancake" collapse is rare anywhere);
- when buildings collapse they always crush all furniture inside (wrong- people DO survive under furniture or other shelters);
- people can always anticipate how their building might collapse and anticipate the location of survivable void spaces (wrong- the direction of shaking and unique structural aspects of the building make this nearly impossible) ; and
- during strong shaking people can move to a desired location (wrong- strong shaking can make moving very difficult and dangerous).
- নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে না পারলে হাত দিয়ে মাথা ঢেকে ভেতরের দিকের কোন দেয়াল বা কোনায় বা কলামের গোড়ায় হামাগুড়ি দিয়ে বসে পড়ুন।
চেষ্টা করুন বাসার একেবারে ভিতরের দিকের রুমে না থেকে বাইরের ওয়ালের কাছাকাছি আশ্রয় নিতে। বিল্ডিং-এর ভেতরের দিকে থাকলে সবকিছু ভেঙ্গে পড়ার পর আপনার ‘উদ্ধার পাবার রাস্তা’ ব্লক হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাইরের ওয়ালের কাছাকাছি থাকলে ব্লক কম থাকবে, তাড়াতাড়ি উদ্ধার পাবার সম্ভাবনাও বেশি থাকবে।
- পতনশীল ভারি আসবাব, ছবির ফ্রেম, আয়না, জানালা থেকে দূরে থাকুন।
- বিছানায় শোওয়া অবস্থায় থাকলে বিছানা থেকে বেশি দূরে যাবার চেষ্টা করবেননা। নিকটতম নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন।
- দরজার নীচে আশ্রয় নেয়ার আগে ভেবে দেখুন এটা আপনাকে সাহায্য করবে নাকি আপনার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াঁবে। FEMA (Federal Emergency Management Agency) -এর পরামর্শ হচ্ছে, যদি আপনি দরজার কাছাকাছি থাকেন এবং আপনার যদি জানা থাকে এটা সিলিং এর ওজন বহন করার পক্ষে যথেষ্ট টেকসই তবে এর নিচে আশ্রয় নিতে পারেন। নতুব দরজার নীচে বা পাশে থাকলে নির্ঘাত মারা পড়বেন। যদি দরজার নীচে থাকেন তবে সিলিং-এর নীচে চাপা পড়ে মারা পড়বেন আর যদি পাশে থাকেন দরজা আপনাকে দু’ভাগ করে কেটে ভেঙ্গে পড়বে।
- লিফট বা এলিভেটর ব্যবহার করবেননা।
-সিড়িঁর নিচে কখনোই আশ্রয় নিবেন না। কেননা সিঁড়ির ‘মোমেন্ট অফ ফ্রিকোয়েন্সী’ বিল্ডিং-এর চাইতে ভিন্ন হয় এবং অনেক সময় বিল্ডিং ভেঙ্গে না পড়লেও সিঁড়ি দ্রুত ভেঙ্গে পড়ে।
- মনে রাখবেন, বিদ্যুত সরবরাহ ব্যহত হতে পারে যা কিনা আপনার চলাফেরাকেও ব্যহত করতে পারে।
বাড়ির বাইরে বা গাড়িতে থাকলে
- বিল্ডিং, বৈদ্যুতিক লাইন, ল্যাম্পপোস্ট থেকে দূরে থাকুন।
- বড় ভূমিকম্পের পরেও কয়েক দফা মৃদু কম্পন হতে পারে। কাজেই ঝাকুনি শেষ হওয়ার পরেও কিছুক্ষণ বাইরে অপেক্ষা করুন।
ভেঙ্গে পড়া বাড়িতে আটকা পড়লে
- আগুন জ্বালাবেননা। গ্যাস লাইন লিক করে থাকলে তা আগ্নিকান্ডের সূত্রপাত করতে পারে।
- ধীরে নড়াচড়া করুন।
- কাপড় বা রুমাল দিয়ে নাকমুখ ডেকে নিন ও উদ্ধারের অপেক্ষায় থাকুন।
ভূমিকম্পের পর করণীয়
- বড় ভূমিকম্পের পর পুনঃ পুনঃ ভূমিকম্প হবার আশংকা থাকে। তাই অন্ততঃ ৭২ ঘন্টা সর্তক ও নিরাপদে থাকুন।
- বাড়ির অবস্থা (দেয়াল, বীম/কলাম) পরীক্ষা করে ঘরে প্রবেশ করুন।
- বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন লাইন বিছিন্ন থাকলে পুনঃ সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করুন।
- বিপদজনক জিনিসপত্র পরিষ্কার করুন।
- বেতার/টিভি সংবাদ শুনুন ও বিস্তারিত তথ্য জানুন।
- উদ্ধার-অপসারণ, প্রাথমিক চিকিৎসা ও ত্রাণ কাজে আত্মনিয়োগ/সহযোগিতা করুন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করুন।
- প্রধান/আঞ্চলিক বিদ্যুৎ মেইন সুইচ ও গ্যাস নির্গমন সুইচ দ্রুত বন্ধ করুন।
- দূর্ঘটনার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে দ্রুত উদ্ধার দল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদি প্রেরনের তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- প্রয়োজনীয় ত্রাণ, ঔষধ, ডাক্তার, নার্স প্রেরণ করুন।
- বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করুন।
- হাসপাতাল/ক্লিনিকে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা প্রদান। প্রয়োজনে অস্থায়ী/মোবাইল হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।
- রাস্তা-ঘাটের প্রতিবন্ধকতা দ্রুত দূর করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।
- প্রয়োজনীয় যানবাহন ও এ্যাম্বুলেন্স প্রেরণ করুন।
- ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্য জরিপ দলকে সহায়তা করুন।
- পরিস্থিতি ভয়াবহ ও আয়ত্বের বাইরে চলে গেলে বাইরের সাহায্যের আবেদন জানান।
- ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বিধানের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা প্রদান করুন।
- রেডিও ও টেলিভিশনে সম্প্রচারের জন্য ও সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের জন্য সঠিক তথ্য সরবরাহ করুন।
ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ কথা সার্বজনীন যে, আপদ হ্রাস এবং বিপদাপন্নতা প্রশমিত করার পরিমাণের উপর দুর্যোগের ব্যাপ্তি নির্ভরশীল। কাজেই নির্ভয়ে বলা যায়, আমাদের সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করছে আমাদের ভালমন্দ। কিছু বাড়তি ব্যয় করে বাড়ি নির্মাণ ও কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই পারে অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র এবং কৃতজ্ঞতা স্বীকার
১। যুব রেড ক্রিসেন্ট, চট্টগ্রাম কর্তৃক প্রকাশিত "রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট মৌলিক প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা"
২। Earthquake Country Alliance
লিংক : http://earthquakecountry.info/dropcoverholdon/
৩। FEMA
লিংক : http://www.fema.gov/hazard/earthquake/index.shtm
৪। উইকিপিডিয়া
লিংক : http://en.wikipedia.org/wiki/Earthquake
৫। মামুর হোসাইন
লিংক : http://on.fb.me/I1M9Qz
৬। সায়েম মুন
লিংক : http://www.somewhereinblog.net/blog/say
y/29140865
৭। প্রথম আলো
লিংক : http://www.prothom-alo.com/detail/date/
/news/8476
৮। স্বর্পরাজ
লিংক : http://www.somewhereinblog.net/blog/sorporaz/29450595
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ওহ্ হো আরেকটি কথা বলতে ভুলে গেছি। লেখাটি যুব রেড ক্রিসেন্টের একটি সাইটে আগে প্রকাশিত হয়েছে।
লিংক : http://www.rainbow-digital.co.uk/nhqrcy
=8&t=7