Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

আটপৌরে প্রলাপঃ ৩

$
0
0

এই এক একটা দিন আসে, আপনার কিছুই ভালো লাগবে না। সকল কাজ, প্রার্থনার সকল সময় শুন্য মনে হবে – পন্ড মনে হবে। আপনি ঘুম থেকে জেগেই আবিস্কার করবেন, এই এক অর্থহীন দিন এলো! অসীমের এক নিঃসঙ্গতা জাপটে ধরবে আপনাকে। সারাদিনের কাজ, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, যৌনতা... সবকিছুই অর্থহীন মনে হবে সেদিন। আবার অদ্ভুত ব্যাপার, বেশিরভাগ মানুষের এই অনুভূতিই হয় না... তারা এই অর্থহীন নিঃসঙ্গতা বুঝতেই পারে না। আপনার এই অনুভূতি কখনও যদি হয়, আপনি দুর্ভাগা! সৌভাগ্যবান মানুষগুলো কিন্তু এই অনুভূতি ছাড়াই বেঁচে থাকে, নিঃশ্বাস নেয়, খায়-ঘুমায়, রতি ক্রিয়া করে।


আমি কি একটা আহামরি জীবনের স্বপ্ন দেখে এসেছি একত্রিশটি বছর? বরং জীবনে সবচেয়ে বেশি যা চেয়েছি, তা বোধহয় বৈচিত্র্য। হায়... সেই আমিই ভীষণ এক বৈচিত্র্যহীন জীবন নিয়ত যাপন করি। ঘুম, জেগে ওঠা, অফিস, খাওয়া, বাড়ি, আবার ঘুম, অফিস... চমৎকার জীবন!


ফেইসবুকে সেদিন কথা হচ্ছিলো সুস্মিতার সাথে। ছোটবেলার সহপাঠিনী মেয়েটি আর তো ছোট নেই, স্বামীর সাথে সুদূর অস্ট্রেলিয়ার নিউ ওয়েলসে বসবাস তার... নিজেদের গাড়ি, বাড়ি। দারুন গানের গলা। স্বামী হয়েই আছে, খুব জলদি তারও নাগরিকত্ব পেয়ে যাওয়ার কথা। ভালোই আছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্যে পরীক্ষা দিতে গিয়ে সে খুবই উত্তেজিত। আমি বলি, “একটা অতিথি আনো বাড়িতে, খা খা করে না?”


সুস্মিতা লাজুক ইমোটিকন পাঠায়, তারপর উত্তর করে, “ইশ... দেরী আছে। আমরা এখনও কিডস্!”


আমি হাসি... মাসখানেক পর বয়স হবে বত্রিশ। গালের কয়েকটা দাড়ি আর মাথার অসংখ্য পেকে যাওয়া চুল, বয়সের সাক্ষ্য দিয়ে বেড়ায়। সুস্মিতা হাসে খিলখিল করে... ইমোকটিনে, টেক্সটে। তারপর সিরিয়াস হয়, “বিয়ে কর বালক। মিষ্টি একটা মেয়ে দেখে, বিয়ে করে ফেলো।"


আমিও সিরিয়াস হই, “তা না হয় করলাম। কিন্তু বিয়ে করে ফেলে দেবো? এটা কি বললা?”


সুস্মিতা রেগে যায়, “আমি ফাজলামো করছি? বয়স কত হলো খেয়াল আছে? এখনও বিয়ে না করলে কবে করবা আর? বুড়া হইলে?”


আমি লিখি, “ঠিকই তো! এখনও যদি না করি কবে আর? বেলা বয়ে যায় গো মাঝি!”


সুস্মিতা অগ্নিশর্মা হয়ে যাওয়ার একটা ইমো দিয়ে অফলাইনে চলে যায়।


একটা সিগারেট ধরিয়ে ভাবতে বসি। বিয়েটা দরকার বটে। শরীরের দাবীদাওয়া-চাহিদার জন্যে... রাত বিরেতে গল্প করার জন্যে। গিটার বাজিয়ে অখাদ্য গান খাওয়ানোর জন্যে... একসাথে বসে ভাত খাওয়ার জন্য। রাত করে বাড়ি ফিরলে অভিমানী হাতে দরজা খুলে দেয়ার জন্যে। চোখে চোখ রেখে বন্ধুকে দিয়ে ছবি তুলিয়ে ফেইসবুকের কভার ফটো করার জন্যে। তারপর? দিনের পাহাড়সম বাকিটা? আমি ভেবে পাই না।


মায়ের জোরাজুরি বাড়ছে। ছেলে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে, অথচ ফরজ কাজটা করা হলো না। আমি তাকে বলি, “আম্মা, বিয়ে করবো তো। এখন না। আমার আরও সময় চাই।"


আম্মা প্রতিবাদ করতে করতে আজকাল আর কিছু বলেন না... কিছুই না। শুধু চাচী, খালা, কিংবা কাজিনদের কল করলে তারা কুশলদি বিনিময়ের পরই বিয়ে প্রসংগে চলে আসেন। খালাতো বড় বোনটা নাকি দারুন সুন্দরী এক মেয়ে দেখেছেন। পছন্দ না হলে নাকি আমার রুচিই নেই। আপাকে বলতে যাই, “দুলাভাইকেই না হয় আরেকবার...!”


আমার ধরটাতে মাথাতো একটাই... তাই তাকে বলি, “আপা, আমারে একটা এলিয়েন গাড়ি উপহার দেবেন তো শশুরসাহেব? না না, যৌতুক তো নয়... এটা উপহার বলতে পারেন।“ বলেই হাসতে থাকি হা হা করে।


আপা চুপ করে থাকেন, তারপর উত্তর দেন “ তুই তো এমন ফাজিল ছিলি না? দেশের বাইরে থেকে থেকে তুই নষ্ট হয়ে গেছিস! যৌতুক বা উপহার দিলেও তো বিয়ে করবি না, জানি। বাজে কথা বলিস কেন?”


একটু থেমে আপা আবার যোগ করেন, “আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করি? তুই কি কাউকে...”


কান থেকে ফোনটা সরিয়ে হ্যালো হ্যালো করি কিছুক্ষন। তারপর লাইনটা কেটে দেই। নেটওয়ার্কের বড় দুঃসময় যাচ্ছে আজকাল।


ওভারটাইমের কাঁথা **িশ পুড়িয়ে অফিস থেকে বেড়িয়ে পরি। আজ আকাশের মন খারাপ... ফিরবে না বাড়ি!


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>