২০১৬ সালে চালু হয়েছিল এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। শুরু হয়ে গেছে প্রতিযোগিতার ঘোড়দৌড়। এমডিজি বাস্তবায়নে ব্যাপক সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এ দৌড়ে সামনের সারিতে। ২০১৭ সাল এসে গেল। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আগেই যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছে সরকার সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দক্ষিণ বিশ্ব ও বিশেষত মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মধ্যে যে কারণে বাংলাদেশ আলাদা, তা হলো বারবার এ দেশের সরকার পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ একটি দরিদ্র ও নারীবান্ধব নীতি অনুসরণ করে এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখা। বাংলাদেশই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যেখানে প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়েদের ভর্তির হার ছেলেদের তুলনায় বেশি। বর্তমান সরকারের এটি একটি বড় অর্জন। দেশের জনগণের উন্নতির জন্য সরকারের সামাজিক সেবার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ তারাই প্রান্তিক জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। অনেক দেশেই, এমনকি কিছু কিছু উন্নত দেশেও, এসব অকল্পনীয়। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও এটা অনস্বীকার্য যে আর্থিক ও সামাজিকভাবে তা নারীর ক্ষমতায়ন ঘটিয়েছে। এমনকি যে গার্মেন্ট শিল্প আমাদের সবচেয়ে বড় শিল্প এবং অর্থনীতির সাফল্যস্তম্ভ, তাও দাঁড়িয়ে আছে লাখ লাখ নিরলস পরিশ্রমী নারীর ওপর ভর করে। সেজন্য সরকার নারী শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বেশ কিছু সামাজিক ও মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ যে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে, তার বড় কারণ এটি। এমনকি যেসব দেশের আয় ও সরকারি ব্যয় আমাদের চেয়ে অনেক বেশি, তাদেরও আমরা ছাড়িয়ে গেছি, যাচ্ছি এবং সুখবর এখানেই শেষ নয়। বিদেশি দাতাদের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমছে, যেমনটা আমরা পদ্মা সেতুর প্রকল্পে দেখলাম। দাতা ও দ্বিপক্ষীয় সংস্থাগুলোও এখান থেকে সরে গিয়ে আফ্রিকার দেশগুলোতে বিনিয়োগ করছে। ফলে আমাদের ক্রমবর্ধমান হারে নিজস্ব সম্পদ ও বুদ্ধির ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ এখন নানা পণ্য ও সেবার জন্য মুখিয়ে আছে। ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি, প্রান্তিক জনগণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উদ্যোগ বিকশিত হচ্ছে (টেলকো কিংবা ‘বিকাশ’-এর কথা ভাবুন)। স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে এ রকম উদ্যোগ গড়ে তোলার সম্ভাবনা অফুরান। এতে আমাদের অর্থনীতি এমনভাবে বিকশিত হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রাখে, যা একই সঙ্গে সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখতে বাধ্য। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণেরও বাজি ধরেছে। এটা সঠিক পদক্ষেপ। সেবা ডিজিটালাইজ করা মানে সেবার গণতন্ত্রায়ণ ঘটানো। বেসরকারি সহযোগীদের সঙ্গে নিরন্তর কাজ করে সরকার তা অর্জনের চেষ্টা করছে। জাতীয় পরিচয়পত্র পুরোপুরি ডিজিটালাইজ ও বায়োমেট্রিক করার কাজ চলছে। এতে সেবা প্রদান অনেক সহজ ও ত্বরান্বিত হবে। সরকার আইটি পার্ক নির্মাণ ও সফটওয়্যার রপ্তানিরও উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এভাবেই উন্নয়নের চ্যালেঞ্জে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
↧