বইয়ের নাম : অদ্ভুত সব গল্প
লেখক : হুমায়ূন আহমেদ
লেখার ধরন : অতিপ্রাকৃত ছোটগল্পের সংকলন
প্রকাশনা : পার্ল প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ : ১৯৯৬ ইং
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৫৭
অয়োময় – হুমায়ূন আহমেদ (কাহিনী সংক্ষেপ)
পাঠকদের মনে রাখতে হবে আমার লেখা অন্যসব কাহিনী সংক্ষেপের মতো এই কাহিনী সংক্ষেপটিও স্পয়লার দোষে দুষ্ট। এই কাহিনী সংক্ষেপে সম্পূর্ণ বইয়ের মূল কাহিনীর ধারাবাহিক বর্ননা করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাই এখানে উল্লেখ আছে।
বইটিতে মোট ৫টি গল্প আছে, যথা -
১। গুণীন
২। আয়না
৩। কুদ্দুসের এক দিন
৪। ভাইরাস
৫। নিজাম সাহেবের ভূত
1 minute and 16 seconds after:
১ম গল্প : গুণিন
চান্দ শাহ ফকিরের আসল নাম সেকান্দার আলি, তার স্ত্রীর নাম ফুলবানু। ফুলবানু ৫ বছর যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানায় পরে আছে। চান্দ শাহের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। কোনো আয় রোজগার নেই বললেই চলে। তিনি খুব গল্প করতে ভালোবাসেন। নানান ধরনের ফকিরি গল্প তিনি করেন, সকলকে বলেন তিনি নানান তন্ত্র মন্ত্র জানেন। আসলে সবই বোগাস। তিনি যখনই শোয়ার সময় গল্প শুরু করেন তখনই তার স্ত্রী ভীষণ রেগে যায়। একদিন রাতে তার স্ত্রীর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলে, তারপরেও তার স্ত্রী তাকে রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে বসতে বলল। তিনি বাইরে বসে রইলেন। এমন সময় হঠাত একটা পরী এসে তার সাথে দেখা দিলো। পরী তাকে অনেক কিছুই দিতে পারে, কিন্তু যে কোনো একটা তাকে চাইতে হবে। গুনিন চাইল ফুলবানু যেন সুস্থ হয়ে যায়। পরী ফুলবানু কে সুস্থ করে দিয়ে চলে গেলো। কিন্তু হায় এই সত্যি কথাটা কার স্ত্রী কোনো দিন বিশ্বাস করবে না।
২য় গল্প : আয়না
শওকত সাহেব ছোট একটা আয়নাতে শেভ করেন, আয়নাটা পুরনো হয়ে গিয়ে পারা উঠে গেছে বলে পরিষ্কার দেখা যায় না। শেভ করতে গিয়ে তিনি গাল কেটে ফেললেন, সেই সময় তিনি দেখতে পেলেন আয়নর ভেতরে একটি ছোট্ট মেয়ে দেখা যাচ্ছে। মেয়েটি বলে উঠলো -"আপনার গাল কেটে রক্ত বের হচ্ছে।"
শওকত সাহেবের অফিসে নতুন কম্পিউটার এসেছে, এখন থেকে সব হিসাব কম্পিউটারে করা হবে। তিনি কম্পিউটার মোটেও পছন্দ করেন না। যে ছেলেটি কম্পিউটার শেখাচ্ছে সে সবাইকে শিখিয়ে ফেলেছে শুধু তিনি এখন পর্যন্ত কিছুই শিখতে পারেন নি। এক সময় তিনি হাল ছেড়ে দেন, তার দ্বারা কম্পিউটার শেখা হবে না। কিন্তু ছেলেটি হাল ছাড়ে না, তাকে শেখাতে চেষ্টা করে যেতেই থাকে। এবং এক সময় তিনি কম্পিউটার চালানো শিখে জান।
আয়নায় যে মেয়েটি আছে তার নাম চিত্রলেখা। আয়নার মেয়েটির সাথে তার কথা হয় কিন্তু তিনি মনে করেন তিনি পাগল হয়ে যাচ্ছেন, আয়না আসলে কেউ নেই। মেয়েটার সাথে কথা বলতে বলতে মেয়েটার প্রতি তার খুব মায় জন্মে যায়।
একদিন রাতে অফিস থেকে ফিরে তিনি দেখেন পুরনো হাত আয়নাটা নেই। তার স্ত্রী পুরানাটা ফেলে দিয়ে নতুন আরেকটা কিনে এনেছেন। পুরনোটা যে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে, সেই ডাস্টবিনে গিয়ে ময়লার মাঝে শওকত সাহেব আয়নাটি খুঁজতে থাকেন। তার সারা গা ময়লায় মাখামাখি হয়ে যায়।
৩য় গল্প : কুদ্দুসের এক দিন
কুদ্দুসের মেট্রিক পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে তার বাবাকে সাপে কাটে। বাবা মারা যাওয়ার কারণে তার আর পড়ালেখা করা হয় না।
এখন সে মাঝ বয়সী লোক। নানান ধরনের ছোটোখাটো কাজ করা সে জীবন অতিবাহিত করেছে। বর্তমানে একটা পত্রিকা অফিসে ফাই ফরমাস খাটার চাকুরী করে। একদিন অফিসের বড় সাহেব একটা চিঠি হাতে হাতে পৌঁছে দেয়ার জন্য তাকে পাঠা। যেখানে পৌছাতে হবে সেটা ১০ তালা একটা দালান। কুদ্দুস লিফটে উঠার পরেই সমস্যা শুরু হয়। বিদ্যুৎ চলে গিয়ে আধো অন্ধকার হয়ে লিফট বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে বিদ্যুৎ ছাড়াই লিফটটি শাইশাই করে চলতে শুরু করে। লিফটটি যখন থামে কুদ্দুস তখন লাফ দিয়ে লিফট থেকে বেরিয়ে আসে। বিচিত্র কোনো কারণ লিফটটি কুদ্দুস কে ত্রিমাত্রিক জগত থেকে বেরকরে নিয়ে চতুর্মাত্রিক জগতে নামিয়ে দেয়। চতুর মাত্রিক প্রাণীদের সাথে কুদ্দুস বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে। তারা কুদ্দুসকে বেস পছন্দ করে। যে হেতু চতুর্মাত্রিক প্রাণীদের কাছে সময় স্থির, তাই তারা ঠিক করে কুদ্দুস কে তারা তার বাবাকে সাপে কাটার আগ মূহুর্তে ফেরত পাঠাবে। সে তার বাবাকে সাপে কাটার হাত থেকে বাঁচাবে, পরীক্ষা দিবে। নতুন আরেকটা জীবন পাবে।
৪র্থ গল্প : ভাইরাস
নুরুজ্জামান সাহেব একটি রেস্টুরেন্টে খেতে বসে আরেক ভদ্র লোকের সাথে আলাপ হয়। সেই লোক নিজেকে ভাম্পায়ার বলে দাবি করে। তার বক্তব্য হচ্ছে ভাম্পায়ার একটা ভাইরাসজনিত রোগ। রক্ত বাহি এই ভাইরাস মৃত্যুহীন। যে মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় সেই মানুষ মারা গেলে ভাইরাসগুলিও মারা যাবে বলে ভাইরাসরা কোনো ভাবে সেই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। ভাম্পায়ারদের দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা রোদের দিকে তাকাতে পারে না, তাই তারা সানগ্লাস পরে থাকে, আরা তাদের কোনো ছায়া পরে না। নুরুজ্জামান সাহেবেরও কোনো ছায়া পরে না।
৫ম গল্প : নিজাম সাহেবের ভুত
নিজাম সাহেব রাতে বাসায় ফেরার সময় ট্রাকের নিচে চাপা পরেন। ট্রাকের নিচে চাপা পরার পরেও তিনি কোন ব্যথা পেলেন না। কিন্তু কিছুক্ষণ পররই তিনি বুঝতে পারলেন যে আসলে তিনি মারা গেছেন। তিনি সবাইকে দেখতে পাচ্ছেন কিন্তু কেউই তাকে দেখতে পাচ্ছে না। এমন সময় একজন তাকে ডাকলো, সেও একজন ভুত। দুজনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ কথা বললেন। এক সময় নিজাম সাহেবের ভুত পিঠে এক ধরনের টান অনুভব করলেন। তিনি দেখলেন তার পিঠ থেকে একটা ফিতা বেরিয়ে গেছে মৃতদেহের দিকে। অর্থাৎ নিজাম সাহেব এখনো মারা যাননি, ডাক্তাররা চেষ্টার করছে তাকে বাচাতে।
2 minutes and 39 seconds after:
বই পড়ার সময় এপিগ্রাম গুলি সহজাত ভাবেই আমার চোখে পড়ে, আর সেগুলিকে আলাদা করে টুকে রাখাটা আমার স্বভাব। শত শত বইয়ের এপিগ্রাম লেখা আছে আমার কাছে। এখনও বই পড়ার সময় এই অভ্যাস নিরবে কাজ করে যায়। তারই ফল আজকের এই "অদ্ভুত সব গল্প " বইটির এপিগ্রাম সমুহ।
১। শরম নারীর ভূষণ, পুরুষের কলঙ্ক।
২। সকাল বেলার সময়টা হল ব্যস্ততার সময়।
৩। সবকিছু সবাইকে বলে বেরাতে হবে তাতো না।
৪। অফিসের লোকজন অকাজের কথা বলতেই বেশি পছন্দ করে।
৫। যে যেটা অপছন্দ করে তার কপালে সেটাই জোটে।
৬। মানুষের সবচেয়ে ভাল লাগে অচেনা কোন যায়গা থেকে উপহার পেতে।
৭। মুখদের সবাই স্নেহ করে। বুদ্ধিমানদের কেউ স্নেহ করেনা, ভয় পায়।