সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এক উজ্জ্বল উদাহরণ। আবহমান কাল ধরে বাংলাদেশের প্রত্যেক ধর্মের মানুষ মুক্ত পরিবেশে নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রতিপালন করে আসছেন। হাজার বছর ধরে এ দেশে প্রতিটি ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করছে। দেশের প্রতিটি সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। আমাদের দেশের জনগণ অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ। তাই বিভিন্ন ধর্মের মানুষের ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠানের সময় গোটা দেশ যেন আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে। দেশের সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ এক সাথে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এখানে যে কোনো ধর্মীয় উৎসবই সকলের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করে। সকল ধর্মের লক্ষ্যই হচ্ছে সৎ ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করা। তাই যে কোনো ধর্মীয় উৎসবে অন্য ধর্মের লোকেরাও যথারীতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন। যারা এ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়, তারা রাষ্ট্র ও সমাজের শত্রু। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে, যাতে তারা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে। যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। কোনো ধর্মই জঙ্গিবাদ, নাশকতা ও সন্ত্রাসকে কখনো সমর্থন করে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠনাদির মধ্যে রয়েছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজানের ধ্বনি, রোজা রাখা, বছরে দুটি ঈদ উদযাপন, কোরবানি ঈদে গরু কোরবানি করা, ঈদে-মিলাদুন্নবী, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহাম, শবে-ই-বরাত, শবে-ই-কদর, মহররমে আশুরা ইত্যাদি। অন্যদিকে হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সার্বজনীন দুর্গাপুজা, কালিপুজা, শ্রকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী অর্থাৎ হিন্দু ধর্মাবলাম্বীদের বারো মাসে তেরো পার্বণের কথা আমরা সবাই জানি। বৌদ্ধদের বৌদ্ধ পূর্ণিমা, খ্রিস্টানদের বড়দিন, ইস্টার সানডেসহ আরো অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ ধর্ম ও বিশ্বাস মতে নির্বিঘ্নে যার যার ধর্ম পালন করে যাচ্ছে সকল ধর্মের অনুসারীরা। আমাদের দেশে একদিকে যেমন সন্ধ্যায় মাগরিবের আজানের শব্দ ভেসে আসে তখন অন্যদিকে মন্দিরে উলুধ্বনির শব্দ শোনা যায়। এইতো গত কয়েক বছর ধরে চান্দ্রমাসিক হিসাবে সময় এগিয়ে আসার কারণে কোরবানির ঈদ ও দুর্গাপূজা প্রায় একই সাথে উদযাপিত হয়েছে। কোন ধরনের উস্কানি বা সমস্যা ছাড়াই নিজ নিজ ধর্নীয় রীতি অনুযায়ী পালিত হয়েছে। বাংলাদেশে ঐতিহ্যগতভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই ধর্মীয় চেতনা সর্বদাই প্রতিধ্বনিত হয়। আমাদের বাংলাদেশই মনে হয় বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে সংখ্যাগুরু মুসলমানদের সাথে তাল মিলিয়ে সংখ্যা লঘু সব ধর্মের অনুসারিরাই বুক ফুলিয়ে এদেশে চলতে পারে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বের সামনে এক অনন্য উদাহরণ বাংলাদেশ, এটাই আমাদের গর্ব।
↧