Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

অভিমান

$
0
0

ভয়ে বুক টা দুর দুর করছে শীতলের।কেন যে সে দেখা করতে চাইলো? এখন রাগে হাত কামড়াতে মন চাইছে তার।সে নীলক্ষেত ছাড়া আর কিছু চেনে না।টিএসসির নাম শুনেছে।২০১৪ তে যে কান্ড হলো,তারপর ওখানে যেতে তার ইচ্ছা করছে না।কিন্তু, লোকটা ওখানে দেখা করবে।সে বললো-"আসুন না,নীলক্ষেত এ দেখা করি।বই দেখা হবে,সাথে কথা ও।"কিন্তু তিনি আসবেন না।তাই সে বাধ্য হয়েছে।একটা কারণ ও আছে।সে তার ভয়ের কথা বলতেই উনি বললেন-
- আমাকে দেখে কি তোমার মেয়ে ঝাপানি পাবলিক মনে হয়?
এই কথা শুনে সে বেশ লজ্জা পেয়েছে।লজ্জা চেপে রেখে বলেছে-
-না না।তেমন টা না।আসলে চিনি না তো।
- রিকশায় উঠবা।রিকশাওয়ালা তোমাকে নিয়ে আসবে।

রিকশাওয়ালা সোহরার্দী উদ্দ্যানের সামনে থামল।ভাড়া মিটিয়ে শীতল ফোন দিলো লোকটাকে।
- কই,আসছো?
- জ্বী।
- থামো,আমি আসছি।
- আচ্ছা।
শীতল এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।হুম।কেউ একজন আসছে।এসেই খুব নিচু স্বরে বললো,
-ভেতরে চলো যাই।
শীতল কোন প্রতিবাদ না করে লোকটার পিছুপিছু চললো।সত্যিই,লোকটা অনেক লম্বা।৬'১" মিথ্যা না।শীতল লোকটার বুকের কাছাকাছি পড়ে আছে।বিশালদেহী একজন মধ্যবয়স্ক লোকের পাশে হাটতে তার লজ্জাই লাগছে।তারা খুব কাছাকাছি,লোকালয়ের মধ্যেই বসলো।সৌরভ বুঝেছিলো মেয়েটা ভয় পাচ্ছে।ভয় ,লজ্জা,কৌতুহল মেশানো মানুষের চেহার দেখতে বেশ ভালোই লাগে।মেয়েটা বলেছিলে,সে তার ছোট।কথাবার্তা শুনে ছোট ই মনে হতো।কিন্তু এ ত এক্কেবারেই বাচ্চা মেয়ে।১৭ বছর বয়সী একটা মেয়ে,কি সরল।ভাবা যায় না।সে ডাক্তারি পাস করে বারডেম এ জব করছে।কাল হঠাৎ মেয়েটা বলে দেখা করবে।সেও কেন জানি রাজি হয়।মেয়েটার সাথে দেখা করা কি পরিচয় কখনই হতো না।কোন মিউচুয়াল ফ্রেন্ড না।হঠাৎ একদিন একটা রিকুয়েস্ট আসলো। শীতল মাহমুদ।নামটা কেন জানি ভালো লাগলো।অ্যাকসেপ্ট করলো।ধীরে ধীরে পরিচয়।খুব কম কথা হত।তবুও কেন দেখা করতে মন চাইলো? সৌরভ বুঝলো না।থাক কিছু কথা না বোঝা।
শীতলের হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ।সৌরভ দিয়েছে।আনন্দে শীতলের চোখে পানি আসছে।কেউ প্রথম তাকে গোলাপ দিলো,তাও এতগুলো।কি সুন্দর ফুলগুলি।শীতলের ভালো লাগছে।
- কাল তুমি বলেছিলে,নীল পান্জাবি পড়তে।আসলে ডাক্তারদের অনেক ফরমালিটি থাকে ত,তাই পড়ে আসতে পারিনি।আমি একটু কালার ব্লাইন্ড।দেখোতো,শার্টটা নীল কি না।মনে ত হলো নীল।
শীতল দেখলো,ডাক্তার নীল,আকাশী মেশানো চেক চেক শার্ট পড়ে এসেছে।হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো শীতল।তার কেন জানি কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।লজ্জা লাগছে খুব।
- তুমি কি ভয় পাচ্ছো?
- না ত।ভয় কেন পাবো?
- না,কাল যা বললে,মনে হলো।হা হা হা।
- আমি আসলে ওভাবে বলিনি।
- বুঝেছি বুঝেছি।আচ্ছা বলো ত,আমাকে দেখে কি ডাক্তার মনে হয়? গুন্ডা গুন্ডা লাগে না?
- না ত।
- ধরো,আমি ডাক্তার না হলাম।মিথ্যা বললাম তোমাকে।ফেশবুকে ত কতজন কত কি বলে।না?
- আপনিই জােনন আপনি কি? আর আমাকে মিথ্যা বলে লাভ টা কি?
- তাও ঠিক।

" সাবধানে যেও।টেক কেয়ার পিচ্চি।" বাসের সিটে বসার পর শীতলকে কথাগুলি বললো সৌরভ।মেয়েটা সুন্দর।খুব হাসে।হাসিটায় কোন খাদ নেই।নির্ভেজাল হাসি এখন আর কেউ হাসে না।বাস যেতেই সৌরভ সিগারেট  ধরালো।ধোয়ার মধ্য দিয়ে সে তার কস্ট দূর করে।

২.
- গল্প শোনান না একটা।
- নতুন গল্প জন্মেনিরে পিচ্চি।
- একটা সত্যি কথা বলবেন?
- হুম।
- আমার সাথে আর কথা বলতে ইচ্ছা করে না,তাই ত?
- আরে,ধুর পাগলী।তা না।
- আমি সেই দুপুর থেকে আপনার জন্য বসে আছি,গল্প করবো বলে।আর আপনি কেন কথাই বলছেন না!
- তুমি বলো,আমি শুনি।
- আমি ত বলিই।
- তুমিই বলো।
- আপনি কিছু বলবেন না,তাই ত?আসলে কথা বলতে চান না।সরাসরি বলে দিন।
- তুমি ছোট মানুষ।
- তুমি ছোট মানুষ,আমি পাগল মানুষ।তোমার আবেগ বেশী।এ কথা আর কত বলবেন?
- পিচ্চি অন ফায়ার।হা হা হা।
- আমি কি চলে যাবো?
- হুম যাও।রাত হয়েছে।ঘুমাও।আমি আছি।
- বুঝেছি।কথা বলতে চান না।বেশ।আপনাকে বিরক্ত করি তো।আর করবো না।কখই না।
- আমি তা বলিনি।
- সব কথা ত আর মুখে বলা যায় না।বুঝে নিতে হয়।আমার যা বোঝার বুঝেছি।


৩.
মানুষ যে এত অভিমানী হয় সৌরভ এই শীতলকে দেখে বুঝলো।ওইদিনের পর শীতলের ফেশবুক,ইমো,হোয়াটস অ্যাপ,ফোন সব অফ।ব্যস্ততার ফাকে ফাকে সে নক করতো ফোনে,ইমোতে।নেই।উধাও।আজ প্রায় ৩ বছর হলো।কোন খোজ নেই।মেয়েটাকে মাঝে মাঝে খুব দেখতে ইচ্ছা করে।কেন জানি? সে ত ভালোই আছে।তবুও মাঝে মাঝে রাস্তায় চুড়ি দেখলে মেয়েটার কথা মনে।খুব পছন্দ করত মেয়েটা।অনেক চুড়ি ছিলো তার।একেকদিন পড়ে আসত এক এক রং এর চুড়ি।টুংটাং শব্দ হতো।কি সুন্দর লাগত ওকে।বৃস্টি হলেই,মেয়েটা মেসেজ আসত ফোনে-
"বাহিরে কি সুন্দর বৃস্টি।অনেক মিস করছি আপানকে ডাক্তার। "
আচ্ছা,মেয়েটা কি এখন ও তাকে মিস করে,বৃস্টি হলে?


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>