Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

দূরে দূরে

$
0
0

বাহিরে তুমুল বৃস্টি।মা কত করে বললো,যাস না কলেজ যাস না।সত্যিই।মা বাবার কথা না শুনলে এমন বিপদে পড়তে হয়।" ইস্, শাড়িটা ভিজে একাকার হলো।ধ্যাত!"।মনে মনে বলছে,আর শাড়ি ঠিক করছে দোলা।আশিকের ওপর খুব রাগ হচ্ছে তার।মানুষটা কি কোন দিনও একটু আগে আসতে পারে না? বলেছে ৯ টায় আসতে।সে ঠিক পৌছে যাবে।এখন ৯.৩৪ বাজে।কেন খবর নেই।এটা ত সামান্য। একবার সে তিন ঘন্টা বসে ছিলো,৯ টা থেকে ১১ টা।শেষমেষ রাগে দুঃখে চলে যাওয়ার সময় সাহেব
হাজির হলেন।
- একটু দেরি হলো।কি অবস্থা তোমার?
মন খারাপ ভালো হয়ে গেলো দোলার।আশ্চর্য, এই মানুষটার মুখের দিকে তাকালে মন খারাপ ভালো হয়ে যায়।আচ্ছা,এটাই কি ভালেবাসা?
আশিক আর দোলার সম্পর্ক কি তা দোলা নিজেও জানে না।একদিন আশিক বলছিলো
- আচ্ছা,ছেলে মেয়েতে কি বন্ধুত্ব হয়? আমার বেলায় ত কখনও হয়নি!
শুনে কেপে উঠেছিলে দোলা।সামলে নিয়ে বলেছে,
- হয়।কত দেখেছি।
- আমি ত দেখিনি।
- সবাই ত সব জানে না,দেখে না।
- কথা সত্যি।
- আমি সত্যিই বলি।
আশিক দোলার কথা শুনে হেসেছিলো।১৯ বছর বয়সী মেয়ে,কিন্তু তা শরীরেই।মনের দিক থেকে ১৩-১৪ বছরের এক কিশোরী। অবাধ্য শরীর,বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে যখন আশিকের সামনে আসে দোলা,হচকিয়ে যায় আশিক।

মেডিকেল থেকে বেরুতে বেরুতেই লেট হয় আশিকের।মেয়েটাকে কতক্ষণ ধরে দাড় করিয়ে রেখেছে।রাগ করে,কিন্তু সেটা লুকায়।আশিক বোঝে বেশ।সে ভান করে বোঝেনি কিছুই। মেয়েটা আজ রাগ করবে মনে হয়,১ ঘন্টা লেট হয়ে গেছে।উফ্,এত অশান্তি ডাক্তারিতে।আশিক ক্লান্ত।ব্যাগটা চেক করে আশিক।ঠিক আছে সব।দোলা আচার পছন্দ করে।তাই আচার কিনেছিলে কাল সন্ধ্যায়।সব ঠিক আছে দেখে হাপ ছাড়ে আশিক।
সকাল থেকে প্রচুর বৃস্টি।সিগারেট কিনতে হবে।এক দোকানে কিনতে গিয়ে আরো কিছুক্ষন লেট হলো আশিকের।৫০০ টাকা ভাংগতি ছিলো না।
- আরে মিয়া,সাত সকালে ৫০০ টাকা নিয়ে আসছেন।বসেন।ওয়েট করেন।
- চাচা,সময় নাই ত।তাড়াতাড়ি করেন একটু।
- ক্যান,বিবি বইয়া আছে নাকি?
বিরক্ত হয় আশিক।এত কথা কেন? ধুর,ভাল্লাগে না।

এখন ১০.২২।দোলার কান্না পাচ্ছে।পানি আটকানো যাচ্ছে না।আজ সে সেজেছে।শাড়ি পড়েছে,চোখে কাজল দিয়েছে,কপালে টিপ দিয়েছে,চুড়ি পড়েছে।কাজল সে সব সময়ই দেয়।আশিকের খুব পছন্দের কি না।চোখের কাজল নস্ট হয়ে যাচ্ছে।আশেপাশের সবাই কেমন কেমন করে তাকাচ্ছে।ভালো লাগছে না কিছু।হাপাতে হাপাতে আশিক এসেই থ! একি? কে বসে আছে? নীল শাড়ি,সাদা ব্লাউজ পড়ে,চুল ছেড়ে এক পরী বসে আছে।আশিকের কেন জানি মেয়েটাকে ছুঁতে মন চাইল।
- কি অবস্থা? ভিজে চুপচুপ দেখি।
- হুম।ভিজলাম।
- ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হবে।
- হলে হোক।
- আচ্ছা।চলো,যাই বুড়িগঙ্গার পাড়ে।
- আগে একটু বসে নিন।হাপাচ্ছেন ত।
- আচ্ছা।

দূরে দূরে হাটছে দুজনে।আশিক সামনে,দোলা ওর পিছে পিছে।দোলা কথা বলছে।আশিক যা করে,শুনে।শুনতে ভালো লাগে।রাস্তা পার হচ্ছে দুজনে।আশিক সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখে একটা বাস খুব দ্রুত আসছে।আরে,মেয়েটা ত নিচের দিকে তাকিয়ে হাটছে।আশিক দৌড়ে এসে এসে চিৎকার করলো-" দোলা,সরে যাও"
রক্ত আশিক দেখে,প্রতিদিনই।বাচ্চা ডেলিভারির সময়,অপারেশন এর সময়,রক্ত নেওয়ার সময়।কখনই এই রক্ত দেখে তার খারাপ লাগে না।আজ লাগছে।মেেয়টা আজ এসেছিলো বুড়িগঙ্গার পানিতে পা ডুবিয়ে বসে নৌকা ভ্রমন করতে।সে তো অনেক দূরের একটা ভ্রমন শুরু করলো।আশিকের চোখে পানি।মনে মনে সে বললো-
" তুমি দূরে দূরেই থেকে গেলে,কাছে আসা আর হলো না"


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>