- হ্যালো!
- শোন,ছাদে আয় ত,কুইক।
- এত রাতে ছাদে কেন?
- চুপ।আসতে বলছি আয়।নো টক।কাম ফাস্ট।
প্রিয়ার বিরক্ত লাগছে।এখন রাত প্রায় ১২ টা।এত রাতে ছাদে কি এমন দেখার আছে কি জানি? কাল টার্ম পেপার জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট।কত লিখা বাকি।আর মহারাজা তলব করেছেন।উফ্।কথা শুনলো না একটু।প্রিয়া কাগজপত্র না গুছিয়েই ছাদে রওনা হলো,সায়েম এর সাথে দেখা করতে।সায়েম,ম্যানজম্যান্ট এ ফাইনাল ইয়ার এ পড়ে,প্রিয়ার চাচাত ভাই।৩-৪ বছরের বড় হবে। একসাথেই বেড়ে ওঠা।দুজনার সম্পর্ক টা সুন্দর।বছর ২ হলো সায়েম তাকে ভালোবাসা নিবেদন করেছে।প্রিয়া এখন, চাচাত বোন কাম প্রেমিকা।ঝগড়া হয় না,তবে ছোটখাটো খুনসুটি লেগেই থাকে দুজনের।পরিবারের সবাই তাদের ব্যাপারটা জানে।সায়েম পাস করলেই দুজনের বিয়ে।তাই রাত বিরাতে দেখা করা কোন ব্যাপার না তাদের।
প্রিয়া ছাদে এসে দেখে,সায়েম সিগারেট ফুকছে।প্রিয়া এসেছে বুঝতেই,ফেলে দিলো সিগারেটটা।রাগের ভংগীতে এসে প্রিয়া বললো-
- কি হয়েছে কি? এত রাতে তলব কেন?
- তোকে দেখতে ইচ্ছে করলো,তাই ডাকলাম।
- ভিডিও কল দিতেন সাহেব।এতরাতে ছাদে ডাকার কোন মানে হয়?
- প্রতি ঘন্টায়,না প্রতি মিনিটে,না প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে,তোর ছবি দেখি।তখনও দেখছিলাম।কিন্তু মনটা যে তোর কোমল ছোঁয়া চাচ্ছিলো।
এই বলে,প্রিয়ার হাতটা টেনে নিলো সায়েম।নরম হাত।সে হাতে মেহেদী পরানো।মেহেদীর কি সৌভাগ্য,সে এই কোমল হাতে জায়গা পেয়েছে।
- এই মেহেদীকে যেমন তুই তোর কোমল হাতে জায়গা দিয়েছিস,তোর মনে কি আমাকে জায়গা দিবি?
প্রিয়া অবাক হয়ে দেখছে সায়েমকে।কি গভীর ভালোবাসা ওর দুচোখে।কি গাঢ় প্রেম।সব তার জন্য।সে কতই না সৌভাগ্যবতী যে এমন একজন কে পেয়েছে।
- " জনম জনম তব তরে কাদিবো ওহে প্রিয়"।
- সত্যি?
- সত্যি,সত্যি,সত্যি।তিন সত্যি।
- ভালোবাসি তোকে।
- আমিও,তোমাকে।ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি।
২.
বাসায় অনেক লোক।একজন মানুষ মৃত্যুসজ্জায়।সবাই তাকে ঘিরে আছে।বাসার সবার চোখে পানি।সায়েম,প্রিয়ার দাদী মনোয়ারা বেগম তার বড় ছেলেকে ডেকে সবার সামনে বলতে লাগলো,
- বাবা,আমি বুড়া মানুষ।মরে যাবো যখন তখন।তোমারর কাছে আমার একটা অনুরোধ,সায়েম রে তুমি প্রিয়ার সাথে বিয়ে দিও না।ওরা সুখি হবে না।তুমি প্রিয়া বেটির অন্যখানে,ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দাও।
- মা,ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে।আমরা সবাই জানি।সায়েম এর রেজাল্ট বের হলেই ওদের বিয়ে।এটা আপনিও জানেন।তবুও, এ কথা কেন বলছেন?
- কেন বলছি,তুমি বুঝবা না।আমি যা বলছি,তাই করো।আমার কথাটা রাখো।এই বুড়ির এটা শেষ ইচ্ছা।তুমি আমার বাবা,আমার কথাটা রাখো।
৩.
বাসায় বিয়ে।অনেক হৈচৈ।সবাই আসছে।সায়েম প্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।ওই ত,প্রিয়া চলে এসেছে।বাহ! প্রিয়ার মেয়েটা ত সেই সুন্দরি হয়েছে।একদম প্রিয়ার মতই।
- কেমন আছিসস প্রিয়া?
- ভালোই।তুমি কেমন আছো?
- এই ত,চাকরি বাকরি নিয়ে আছি,ভালোই।তোর বাবুটা ত সেই মিস্টি হয়েছে রে।
- হুম।
- হুম।
- আচ্ছা,তুমি কি কখনও বিয়ে করবে না?
- না,আমি ককনই বিয়ে করবো না।কারণ...
- থাক! বুঝেছি।
- আচ্ছা,তুই বল তো,দাদী এমন কেন করলো?
- আমি জানি না সায়েম ভাই।
- আমিও জানি না।তবে জানবো।আমাকে জানতেই হবে।কেন, কিসের শাস্তি দাদী আমাকে দিলো?
- শাস্তি কি শুধু তোমার একারই সায়েম ভাই?
সায়েম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।কি শান্ত দৃস্টি,কিন্তু সেখানে কি বিষন্নতা।তাহলে,শাস্তি শুধু সে না,আরেকজন ও পেয়েছে।সহ্য করে নিয়েছে নীরবে।