১৯৮৭ সালে ১-৩ জানুয়ারি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চর্তুদশ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সাজেদা চৌধুরী পুনঃসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তবে ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের একদলীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেনি। বরং জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দিনরাত রাজপথে থেকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করেছে এবং ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথ সুগম করেছে। ১৯৯১ সালে ২৭ ফেব্রয়ারি দেশে স্বৈরাচার এরশাদ সরকার পরবর্তী প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সূক্ষ কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে অতীত স্বৈরাচারের প্রেতাত্মা বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদীকে তারা মন্ত্রীত্বে বরণ করে। বিএনপি সরকারের দমন পীড়নে তখন আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেয়। বসতবাড়ি, ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থকদের। সিদ্দিকুর রহমান বাংলাভাই ও শায়খ আব্দুর রহমানের মতো জঙ্গীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দেশে পাকিস্তানী আদলের শাসন কায়েমের অপচেষ্টা করা হয়। ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ অফিসে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে সংসদে শেখ হাসিনাকে কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয়নি। শুরু হয় শেখ হাসিনা নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন। এরকম আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যেই ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগের পঞ্চদশ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে সভাপতি ও জিল্লুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সরকার গঠন করেই শেখ হাসিনার সরকার দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার ঘোষণা করে। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে বিরাজমান সমস্যার সমাধান করা হয় ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির মাধ্যমে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলেনের শহীদদের রক্তের মূল্যায়ন নিশ্চিত করা হয় ইউনেস্কো হতে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ের মাধ্যমে। সরকার গঠনের এক বছরের মধ্যেই ১৯৯৭ সালের ৬-৭ মে দলের ষোড়শতম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনা সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০০০ সালের ২৩ জুন। এ কাউন্সিল সভায় শেখ হাসিনা সভাপতি ও জিল্লুর রহমানকে পুনঃসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ২০০১ এ অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসে। জামায়াতে ইসলামী নির্ভর তৎকালীন চার দলীয় জোট সরকারের নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে ‘হাওয়া ভবন’ নামের তারেক রহমানের ব্যবসায়িক অফিসে থেকে। যাকে কেন্দ্র করে তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দীন আল মামুন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বিদ্যুতের খুঁটি সরবরাহের নামে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা ও বিদেশে অর্থ পাচারকারী হিসেবে অপ্রতিরোধ্য পরিচিতি অর্জন করে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সেই চরম দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন-সংগ্রামের ক্রান্তিকালের মধ্যেও ২০০২ সালের ২৬ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সতেরতম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও আব্দুল জলিলকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ২০০৬ সালে বিএনপি জোট নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবে এ প্রশ্নে নিজেদের পছন্দের লোকের হাতে ক্ষমতা দিতে গিয়ে নানা ধরনের কৌশলের আশ্রয় নেয়। আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে নানা নাটকের পর অবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমেদ দেশে তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তবে তিনি দেশব্যাপী একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সীমাহীন নিপীড়ন ও ধরপাকড়ের সর্বগ্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়ে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাও গ্রেফতার হন। দেশের সর্বস্তরের জনতার অকুন্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসায় দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তি পান। (চলবে..................)
↧