Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

গোলকের ব্যাস আট ইঞ্চি, পর্ব-৪

$
0
0

পূর্বেঃ গোলকের ব্যাস আট ইঞ্চি, পর্ব-৩

একটা ছিমছাম রেস্টুরেন্টে বসে সামরিনা আর মাহাদী। মাহাদীকে পেয়ে সামরিনা রাজ্যের গল্প জুড়ে দেয়। সামরিনার ক্লাসের গল্প, টিচারদের গল্প, ছোটবেলার গল্প। গল্পের শেষ নেই। মাহাদী অবাক হয়ে শোনে সামরিনার গল্প। কোন মানুষ এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে সেটা জানা ছিলো না ওর। মাঝে মাঝে একটা দুইটা প্রশ্নও করে মাহাদীকে। মাহাদী সংক্ষেপে সেগুলোর উত্তর দেয়। গল্প করতে করতে কখন যে সময় পার হয়ে যায় টেরই পায় না ওরা। হঠাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সম্বিত হয় মাহাদীর। দুই ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে। মাহাদী খুব অবাক হয়ে যায়। একটা মেয়ের সাথে ও দুই দুইটা ঘন্টা কথা বলেছে কোন বিরক্তি ছাড়াই। সাধারণত মেয়েদের সাথে পাচ মিনিটের বেশি কথা বললেই মেজাজ খারাপ হওয়া শুরু করে ওর। এবার মাহাদী একটু নড়েচড়ে বসে। ওঠা দরকার। প্রায় বিকেল হয়ে যাচ্ছে। ভার্সিটির খেলার মাঠে হাসানের সাথে দেখা করতে হবে ওর। কিন্তু ওঠার ব্যাপারে সামরিনার কোন খেয়ালই নেই। বাধ্য হয়ে সামরিনার কথার মাঝখানেই মাহাদী একটু গলা খাকাড়ি দিয়ে বলে ওঠে,
-    ইয়ে, সামরিনা। আমার যে এখন ওঠা লাগবে।
-    যাবেনতো। এত তাড়া কিসের?
পোড়া কপাল আমার। মেয়ে হয়ে ছেলেদের লাইনগুলো আমার বলতে হচ্ছে, মনে মনে ভাবে সামরিনা।
-    না, আসলে হাসানের সাথে দেখা করতে হবে। কাজ আছে।
-    ঠিক আছে। আমি নামিয়ে দিবো আপনাকে।
-    নাহ। লাগবে না। তোমার দেরী হয়ে যাবে।
-    দেরী হবে না। আর আপনার কথা কে শোনে? নামিয়ে দেবার আগ পর্যন্ত আপনি আমার কয়েদী। মনে নাই আপনার? খালি কোথায় নামিয়ে দিতে হবে সেটা বলেন।
মনে মনে প্রমোদ গোনে মাহাদী। এই মেয়ে দেখা যায় চীনা জোকের মত লেগে আছে। ছাড়তেই চাচ্ছে না।  কোন মেয়ে ওর জন্যে এমন করছে, এটা চিন্তা করে একটু আনন্দও লাগছে। অস্বীকার করার উপায় নেই।
-    আমাকে একটু ভার্সিটির খেলার মাঠে নামিয়ে দিতে পারবে।
-    খেলার মাঠে?!! খেলার মাঠে কি কাজ?
-    আছে একটু কাজ আরকি।
-    ওকে। নো প্রবলেম। নামিয়ে দিচ্ছি।

বিল মিটিয়ে বেরিয়ে আসে ওরা রেস্টুরেন্ট থেকে। গাড়িতে উঠে আবার ক্যাম্পাসে যেতে বলে ড্রাইভারকে। খেলার মাঠে মাহাদীর কি কাজ , সে ব্যাপারে আর কিছু জিজ্ঞেস করে না সামরিনা। প্রসংগটা না ওঠায় হাফ ছেড়ে বাচে মাহাদী। কারণ ওর মনে হয় , ভালো রেজাল্টের গ্র্যাজুয়েশন করা একটা ছেলে চাকরীবাকরি না করে, একটা ফুটবল দল গড়ার কাজ করতে যাচ্ছে, এ কথাটা সামরিনা সহজভাবে নিবে না। শুধু সামরিনা কেন, যে কোন সুন্দরী মেয়ের কাছেই এ ধরনের কাজ ইম্যাচিওরিটির পরিচায়ক। খেলার মাঠের গেটে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে মাহাদী। হতভম্ব হয়ে লক্ষ্য করে, পিছন পিছন সামরিনাও গাড়ি থেকে নামছে।
-    কি আশ্চর্য্য! তুমি নামছো কেন?
দুষ্টামী ভরা মুখে সামরিনা জবাব দেয়,
-    এমনি। একটা কথা শোনেন নাই যে, আফটার ডিনার ওয়াক আ মাইল। খাওয়া একটু বেশি হয়ে গেছেতো। এজন্যে ভাবছি এখানে একটু হাটাহাটি করে নেই।
-    কিন্তু তুমিতো লাঞ্চ করলে। ডিনারতো না।
-    একই কথা। যাহা বাহান্ন, তাহাই তিপান্ন।
হতাশ হয়ে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো মাহাদী, কিন্তু এর মাঝেই হাসানের গলা শুনতে পায়।
-    কিরে তুই দেখা যায় আগেই চলে এসেছিস। আররে! সামরিনাও আছো দেখছি। খবরটাও নিশ্চই শুনে ফেলেছো এতক্ষণে?
-    কি খবর হাসান ভাই?
মাহাদী প্রাণপণে চোখ পাকিয়ে, ভ্রু-কুচকিয়ে, ইশারায় হাসানকে খবর না বলার জন্যে ইঙ্গিত দিতে থাকে। হাসান উল্টো অবাক হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে,
-    তুই মেনডাকের মতন চোখ বড় বড় করে আছিস কেন?
-    খবরটা কি বলেন না হাসান ভাই।
-    আররে, বাফুফে আমাদের মাহাদীকে একটা ফুটবল টিম বানানোর দায়িত্ব দিয়েছে যেটা খেলবে ফুলহ্যামের ইয়ুথ একাডেমীর একটা স্কোয়াডের সাথে।
হাসানের কথা শেষ হওয়া মাত্রই সামরিনা প্রায় চিৎকার দিয়ে ওঠে,
-    সত্যি!! এই দারুণ খবরটা আপনি আমাকে বলেন নাই কেন এতক্ষণ? আপনি দেখা যায় মহা ক্রিমিনাল।
মাহাদী বিব্রতভাবে হাসে।
-    আসলে......... এমনি। এখনো টিম ঠিক হয় নাই। তাই বলি নাই। চলো, গ্যালারীতে গিয়ে বসি। তারপর কথা বলি।
ওরা তিনজন গ্যালারীতে গিয়ে বসে। মাঠে একটা দল ক্রিকেট খেলছে। ভার্সিটিরই ছাত্র সব। আরেকদিকে দুইটা দল ফুটবল খেলছে। একটা দলের ছেলেগুলোকে ভার্সিটির বলেই মনে হলো। আর আরেক দলের ছেলেগুলো কিশোর বয়সী। এই ধরনের ছেলেপেলেগুলো ভার্সিটির আশেপাশেই থাকে। বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। কেউ ফুটপাতের হকার। কেউ বা পেপার বিক্রী করে। কেউ বা বাজারে দোকানের কর্মচারী। ছাত্র থাকার সময় এদের নিয়মিতভাবে মাঠে দেখতো মাহাদীরা। মাঠের এক পাশে জায়গা পেলে এরা সেখানে খেলতে থাকতো। আজও তার ব্যতিক্রম নেই। এদের খেলা দেখতে দেখতেই হাসান বলে ওঠে,
-    আচ্ছা ম্যাডী, এক কাজ করলে কেমন হয়?
-    কি?
-    বনানীর মাঠে কিছু আন্ডারগ্রাউন্ড টিমের পোলাপান খেলে। ওদেরকে দিয়ে একটা টিম দাড় করালেইতো হয়। ঝামেলা কমে যায়।
-    আমি যতদুর জানি যে, টিমটার সদস্যদের আন্ডার-প্রভিলিজড হতে হবে।
-    আরে, ওদেরকে ঐভাবে ইন্সট্রাক্ট করে দিলেই হবে।
-    রিয়েলী? ওদের স্পাইক মারা চুল, ওরিজিনাল নাইকির বুট, আর ইংরেজী এক্সেন্টের উইয়ার্ড বাংলা শুনে, যে কোন আহাম্মকও বুঝে যাবে যে ওরা সব বড়লোকের গ্যাদা বাচ্চা।

এ কথা বলতে বলতেই দুই নম্বর ফুটবল দলের একটা বল এসে গ্যালারীর সিড়ির কাছে পড়ে। এক কিশোর বল কুড়িয়ে নেয়ার জন্যে আসছে। কিশোর বেশ দুরে থাকতেই কথা বন্ধ করে জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় মাহাদী। তারপর এগিয়ে গিয়ে বলটা হাতে উঠিয়ে নেয়। তারপর ঘুরে হাসানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-    আমাদের যে টিম দরকার, সেই টিম আমরা পেয়ে গেছি।
এ কথা বলেই বলটা পায়ে নিয়ে ড্রিবেল করে এগিয়ে যেতে থাকে কিশোর ছেলেগুলোর খেলার জায়গাটার দিকে। প্রথমে বল কুড়াতে আসা ছেলেটাকে একটা বডি ডজ দিয়ে ছিটকে ফেলে এক পাশে। সাইড থেকে ওর কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে আসে আরও দুই কিশোর। স্প্রিন্ট করে ঐ দুজনকে কাটিয়ে বের হয়ে যায় মাহাদী। সামনে ছেলেদের জটলা থেকে তিনজন বল কেড়ে নেয়ার জন্যে তেড়ে আসে মাহাদীর দিকে। এবারে মাহাদীর চোখ পরে ডানদিকে একটু ফাকা জায়গায় দাঁড়ানো একটা ছেলের দিকে। সামনে থেকে তেড়ে আসা তিনজন একদম কাছে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে মাহাদী। একদম কাছে চলে আসলে ছোট্ট একটা পাসে বল পাঠিয়ে দেয় ডানপাশে ফাকায় দাঁড়ানো ছেলেটাকে এবং একই সময় তারস্বরে চিৎকার করে ছেলেটাকে আবার ওকে পাস দিতে বলে। চিৎকার করতে করতেই সামনে থেকে আসা তিনজনকে এড়িয়ে সামনে বেরিয়ে আসে মাহাদী। ডানপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাও কিছুটা হতচকিত এবং মাহাদীর চিৎকার শুনে কিছু ভীত হয়ে আবার ওকেই পাস ব্যাক করে। চমতকার একটা ওয়াল পাস তৈরী হয়। মাহাদী বল পেয়ে এবারে সামনের পোস্টের দিকে এগিয়ে যায়। একা গোলকিপার দিশেহারা হয়ে একটু নিচু হয়ে, হাত ছড়িয়ে ওর দিকে এগিয়ে আসে। গোলকিপার ছেলেটা মোটামুটি কাছে এগিয়ে এলে, মাহাদী বলের নিচের দিকে কিক করে আলতো করে বলটাকে কিপার ছেলেটার মাথার উপর দিয়ে চিপ করে। কিপারসহ অন্য কিশোরদের অবাক বিস্ময়ে বলের পোস্টে ঢোকা দেখা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। মাহাদী ওর দৌড় বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়ায়। তারপর হাপাতে হাপাতে বলে,
-    বাফুফের জন্যে টিম বানাচ্ছি। আমি চাই, তোমরা আমার সেই টিমে খেলো। কি বলো তোমরা? খেলবে না?
[চলবে]


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>