Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

রহস্যের হাতছানিঃ গল্প-২ ( টুসুর রহস্যময় মৃত্যু )

$
0
0


                                                 টুসুর রহস্যময় মৃত্যু

বুঝলে অমল সে এক বিরাট রহস্য আজো ভাবলে যেন চোঁখের সামনে সব ভেসে উঠে , বলতে বলতে সৈকত সাহেব হাতে ধরে রাখা সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে আস্তে আস্তে ধুয়া ছারতে ছারতে আবার বলতে শুরু করলেন
বুঝলে ঘটনাটি আজ থেকে ঠিক ১২ বছর আগের কথা ২০০০ এর শেষ কি ২০০১সালের শুরুর দিকে।
চাকরিতে বদলি হয়ে পোষ্টিং হলো রাজশাহীতে , অফিসের কাছা কাছি বাসাটা নিলাম ঠিক যেখানে অখানে একটা বড় মসজিদ ছিল বুঝছো ,একদম মসজিদের পাশেই ছিল আমার বাসা।এপারে আমার এলাকা অপারে আরেকটা মাঝখানে আবার ছোট আরেকটা এলাকা, ঘটনাটা এই এলাকাকেই ঘিরে।এলাকাতে একটা প্রাচীন মঠ ছিল আর তার একটু সামনেই একটা বিশাল পুকুর  আর পুকুরের চার পাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে বসতি ।
অনেকটা পুরান ঢাকার মতোই একটা ঘিঞ্জি এলাকা।
তো শোন যা বলছিলাম, এই পুকুরটা ছিল দোষি
অমল এবার হেসে উঠ বলল  পুকুর আবার দোষি হয় কি ভাবে দাদা , সে আবার কি দোষ করল ?
হয়রে ভাই হয়, তুমি হয়তো ভাবছ এই ডিজিটাল সময়ে নিশুতি রাতে আমি তোমাকে ভুত প্রেতের গল্প শোনাচ্ছি কিন্তু  যাই বলো তুমি তো জানো, আমি সাইন্সের ছাত্র আমি সহযে যুক্তি বিহীন কোন কিছু  বিশ্বাস করি না আর ভুত-প্রেতেতো প্রশ্নই আসে না তাই আমি যখন এই এলাকায় প্রথম আসি লোকমুখে নানা মুখরোচক কথা শুনেছিলাম তখন আমিও বিশ্বাস করিনি হেসে উড়িয়ে দিয়েছি তারপরে একদিন নিজের চোঁখে যা দেখেছি তাতে আমার ধারনা পুরোই পাল্টে গেছে , পৃথিবীতে আজো এমন কিছু ঘটে যা যুক্তি তর্কের বাইরে।
তো যা বলছিলাম এই পুকুরটা ছিল দোষি , কেউ আজ প্রর্যন্ত সাঁতরে এই পুকুর  পার হতে পারি নি , এমন কি মাঝ পুকুরে যেয়ে অনেকে মারাও গেছে। আর কালি পুজার রাতে  এই পুকুর জাগ্রত হয়ে উঠে, তাই কেউ ভুলেও কালি পুজোর রাতে পুকুরের জল স্পর্শ করে না।

আমার এই ঘটনাটি যাকে নিয়ে, সে হলো আমার  বন্ধুর একমাত্র মেয়ে নাম ছিল টুসু ।মেয়েটি দেখতে একদম মমের পুতুলের মত ছিল। বয়স আনুমানিক ১০ বছর।

ঘটনার দিন আমি অফিস থেকে সবে বাসায় ফিরেছি হঠাৎ নির্মলের ফোন এল টুসুকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ।আমি কোনরকম বিলম্ব না করে তখনই ছুটলাম নির্মলের বাড়িতে, যেয়ে দেখি বৌদি ততক্ষনে কান্না কাটি শুরু করে একটা হুলুস্থুল বাঁধিয়ে ফেলেছে। দুই বন্ধু মিলে টুসুর পরিচীত বন্ধু যারা ছিল সবার বাড়িতে খোঁজ নিলাম কিন্ত কোথাও পাওয়া গেল না।আমরা হাল ছারলাম না, ডেকোরেটর থেকে মাইক ভাড়া করে পরিচিত একটা ছেলেকে দিয়ে রিক্সা ভাড়া করে রাতের মধ্যেই পুরো শহরে নিখোঁজ সংবাদ জানিয়ে দেওয়া হলো।ক্যাবল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করে টিভিতে স্থানিয় চ্যানেলে মিসিং নিউজ দেওয়া হলো।
কিন্ত কোথাও থেকে কোন রকম খবর পাওয়া যাচ্ছিল না এরই মধ্যে একটা খবর এল ঘটনার দিন নাকি টুসুকে পুকুরের কাছে দেখা গেছিল আমরা যেন আকাশ থেকে পরলাম এই ভেবে যে, আমরা সারা শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজে চলেছি অথচ বাড়ির পাশের পুকুরটাতেই খুঁজে দেখা হয় নি।
তারপর রাজশাহী সদর থেকে ডুবুরী এনে প্রচুর খোঁজাখোজি করা হয়। কিন্তু কোন ভাবে কোন লাশের সন্ধান মেলে না। যদিও ঐ জায়গাটি খুবই গভীর। অভিজ্ঞ ডুবুরীরাও একেবারেপুকুরের তলদেশ পর্যন্ত গিয়েও কিছু না পেয়ে ফিরে এসেছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে লাশ খোঁজা হয় পানির নিচে।

সন্তানহারা বৌদি ,নির্মল এবং আত্মীয়স্বজন মেয়েকে ফিরে পাবার আশায় প্রায় পাগোল হয়ে যাবার যোগার। সে এক করুন দৃশ্য। তখন যেন হীতাহিত জ্ঞানটুকুও হারিয়ে ফেলেছিলাম আমরা যে যেই রকম কথা বলছে আমরা সেরকমই কাজ করছি শুধু টুসুর  সন্ধানের জন্য। যার কাছে যেতে বলছে তার কাছেই যাচ্ছি। এমন সময়  আমরা খোঁজ পেলাম দুরে কোন এক স্থানে এক ব্যাক্তি ("পরী/ফকির" যে যাই বলেন) আছে, সে খোঁজ দিতে পারবে।

মন না চাইলেও শুধু বৌদির কথা ভেবে আমরা একমিনিটও দেরি না করে মাইক্রো ভাড়া করে  সেই রাতেই ঐ লোকের কাছে যায়। তখন আমরা সেই লোকের কাছ থেকে জানতে পারি যে, টুসু নিখোঁজ হওয়ার পরেও অনেক সময় ধরে বেঁচে ছিল, কিন্তু একদিন আগেই তাকে মেরে ফেলেছে এবং তার লাশ এখন পানির নিচেই আছে এবং পানিতে ডোবার ঠিক তিন দিনের মাথায় টুসুর লাশ ঐ জায়গাতেই ভেসে উঠবে। এবং সেই লোকটি আরো জানায় যে, টুসুকে জ্বীনেরা নিয়ে গিয়েছিল।
আমার বিশ্বাস হলো না, তখন কেন জানি না নিজের উপরেই প্রচন্দ্র মেজাজ খারাপ হতে লাগল যে নির্মলের না হয় মাথার ঠিক নাই কিন্তু আমি মূর্খের মত এত বড় ভুল কি করে করলাম । ভুত-প্রেত বলে কি কিছু আছে নাকি, ফকির বেটা ভোগাস মেরে দুই পয়সা কামিয়ে নিয়েছে মাত্র।

কিন্তু সবাইকে তো অবশ্যই আমাকেও  আশ্চর্য করে ঠিক ৩ দিনের মাথায় সকাল বেলা ঠিক পুকুরের মাঝখানে টুসুর লাশ ভেসে উঠে। এলাকাবাসি সবাই এটা নিজে চোখে দেখেন। কিন্তু তার চেয়েও আশ্চর্য বিষয় হলো, লাশটি ছিল অক্ষত। পানির নিচে ৩ দিন থাকার ফলে সেটা পচে, ফুলে যাওয়ার কথা ছিল। লাশের কোথাও কোন মাছও ঠোকর দেয়নি। মানে পুরোই অক্ষত। দেখে মনে হচ্ছিল, মেয়েটি এখনও ঘুমিয়ে আছে এবং তার সারা শরীর ভিজিয়ে দেয়া হয়েছে।এর পর থেকে গভীর রাতে অনেকেই টুসুকে পুকুর পারে বসে থাকতে দেখেছে।

- এই হলো ঘটনা। বুঝলে অমল ।

এই ঘটনাটা আমি পরে অনেকদিন আমার নানা যুক্তি দিয়ে মেলানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু এখনো আমার কাছে একটা অমীমাংসিত রহস্যই হয়ে আছে।

--------------------------------------------------------------
রহস্য মানব
২০।০২।২০১৩


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>