Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

লোহিতলেখক

$
0
0

সিগারেটের ধোঁয়ায় পুরো ঘর বদ্ধ হয়ে আছে । বাইরে সূর্যের ঝলমলে আলো কিন্তু তারপরও ঘরের মধ্যে বাতি জ্বলছে । সৌরভ তার ঘরের দরজা - জানালা সব আটকে বসে আছে । জানালা দুটো ভারি পর্দা দিয়ে ঢাকা । সৌরভের মা ছেলের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে । ছেলে গতকাল রাত থেকে কিছু খায় নি । সৌরভের মা ডাক দিলো “সৌরভ, বাবা দরজা খোল । খাবি না ??” সৌরভের জবাব দেবার ইচ্ছে ছিলো না । কিন্তু জবাব না দিলে তার মা দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে থাকবে আর বার বার ডাক দেবে । ও তাই খানিকটা বিরক্ত হয়েই বলল “মা আর খানিকটা পরে খাবো ।” ছেলেটা বড্ড জেদি , একবার যা বলবে তাই করবে । তাই সৌরভের মা আর কিছু না বলে চলে গেলেন ।



সৌরভ গতকাল রাত থেকে একইভাবে চেয়ারে বসে আছে । তার ঠোঁটে একটা সিগারেট আর হাতে কলম । সে সারারাত ধরে লিখার চেষ্টা করছে । সৌরভ একজন লেখক । লেখাটা তার কাছে জীবনের চেয়েও বেশি । সে সারাটা রাত ধরে একটা গল্প লিখবার চেষ্টা করছে , কিন্তু কিছুই লিখতে পারছে না । আগেও তার এরকম হয়েছে বেশ কবার কিন্তু কয়েকটা সিগারেট খাবার পরই ঠিক হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু এবার কিছুতেই কিছু হচ্ছে না । গত দুসপ্তাহ ধরে সে কিচ্ছু লিখতে পারছে না । অনেক চেষ্টা করেছে সৌরভ লিখবার জন্য । তবে কি সে লিখতে ভুলে গেলো ? ঠোঁটে সিগারেটের ছ্যাঁকা লাগায় সৌরভ সচকিত হয়ে উঠল । খাতাটা নিয়ে দুটো লাইন লিখলো “নাহ্ হচ্ছে নাহ্” । সৌরভ খাতার পৃষ্ঠাটা ছিঁড়ে ফেলে দিলো ।



সৌরভ ঠিক মতন ভার্সিটিতে যায় না , হাসে না , আড্ডা দেয় না । তার বন্ধুরা জানে না সৌরভের এই অবস্হা ক্যানো । সৌরভকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও ও উত্তর দেয় না । প্রথম প্রথম ওর বন্ধুদের ব্যপারটা ভাবিয়ে তুললেও আস্তে আস্তে তাদেরও গা সওয়া হয়ে যায় ।



ভার্সিটির ল্যাবে দাঁড়িয়ে আছে সৌরভ । ব্লেড দিয়ে একটা পেন্সিলের মাথা কাটছে অন্নমনষ্ক ভাবে । হঠাৎ আঙুলের মাথায় চিনচিনে ব্যথা অনুভব হওয়ায় ও আঙুলের দিকে তাকিয়ে দেখলো ব্লেডের পোঁচে আঙুলের মাথায় বেশ খানিকটা কেঁটে গেছে । ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল , দেখলো আঙুলের মাথা দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়ছে । রক্ত কি এতটাই লাল !! এত লাল তো ও দেখেনি আগে !!!



সৌরবের এখুনি বাসায় যেতে হবে । রক্তের লাল রঙে তার আবার লিখতে ইচ্ছে করছে । সৌরভ জানে সে এখন কলম হাতে নিলেই লিখতে পারবে । ও কোনরকমে ল্যাব ক্লাসটা শেষ করেই বাসায় দিকে রওয়ানা করল । ভার্সিটি থেকে ওর বাসা খুব একটা দূরে নয় । রিক্সা করে যেতে মিনিট দশেকের মতন লাগে । কিন্ত সৌরভের এই দশটা মিনিট অপেক্ষা করাও একটা অসম্ভব ব্যপার হয়ে দাঁড়ালো । অনেক দিন পর মাথায় লেখা এসেছে , তার যে এখুনি লিখতে হবে । বাসায় কোনরকমে ঢুকে সৌরভ তার রুমের দিকে দৌড় দিলো । খাতা কলম নিয়ে বসেই সৌরভ তার আঙুলের দিকে তাকালো , রক্ত পরাটা অনেক কমে গেছে । নাহ্ এভাবে তো হবে না । সৌরভের যে লাল চাই , রক্তের মতন লাল । সৌরভ সাতপাঁচ ভেবে তার টেবিলের ড্রয়ারটা খুললো । ওইযে ওইতো কাগজ কাটবার ছুরিটা !! আস্তে করে ছুরিটা তুলে নিলো সৌরভ । কোথায় যেনো পড়েছিলো ও হাতের রগ কাঁটলে অনেক রক্ত বের হয় কিন্তু মানুষ মারা যেতে পারে । নাহ্ অত ভাববার সময় নেই এখন সৌরভের হাতে । তার এখন লিখতে হবে । সৌরভ বাঁ হাতটা তুলে ধরে । হাতের নীল রগ গুলো বেশ বোঝা যাচ্ছে । ছুরিটা তুলে নিয়ে সৌরভ এক পোঁচে কেটে ফেলে হাতের রগ । ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয় হাতের কাঁটা অংশ থেকে । খানিকটা রক্ত খাতাতেও পরে । আহ্ রক্ত পড়ায় কি সুন্দর দেখাচ্ছে খাতাটা । যেন কোন শিল্পী দক্ষ হাতে খাতায় লাল রঙা তুলি বুলিয়ে দিয়েছে দু-তিন বার । সৌরভ তার হাতের রক্তের দিকে তাকায় আর ভাবে তার দেহে এত রক্ত !! এত লাল তার রক্ত !!! সৌরভ কলম তুলে নেয় হাতে । সে লিখতে থাকে । সৌরভ হেসে ওঠে পাগলের মতন । সে যে ভয়ে কাতর ছিলো তা আজ ভেঙে গেছে । সে এখন লিখতে পারছে , লেখা ভোলে নি সৌরভ । তার হাত প্রচন্ড গতিতে খাতার উপরে ছুটতে থাকে । মাঝে মাঝে সে লেখা থামিয়ে তার লাল রক্ত দেখে । তার বাঁ হাতটা খানিক অবশ বোধ হয় , ব্যথা করে নাড়াতে । কিন্তু সৌরভের যে এত ভাবার সময় নেই । সে অনেকদিন পর লিখতে পারছে । সৌরভের হাত দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে খাতায় টপ টপ করে , আর সৌরভ ??? সৌরভ লিখে যাচ্ছে পাগলের মতন ।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles