খবরটোয়েন্টিফোর.কম:
খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলে কলকাতায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি তখন বাংলাদেশে না আসার কারণ হিসেবে বলেছিলেন, ‘আমি বাংলাদেশে যাব কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যেতে পারব না, শেখ হাসিনার (তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা) সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারব না—সেটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ তাঁর আশঙ্কা ছিল বিএনপি সরকার শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের বিষয়টি সুনজরে দেখবে না।১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে এসেছিলেন। সেবারেও সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হলেও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি দুই দেশের মানুষকে নিবিড় বন্ধনে বেঁধে রেখেছে।’ এমনকি পৃথিবীর সব বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এক হলে উপমহাদেশে বিরাট রাজনৈতিক শক্তি হতো বলেও মন্তব্য করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেত্রী।
কিন্তু মমতার এসব মত ও মন্তব্য যে নিছক লোকদেখানো—এখন পদে পদে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
গত শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত রঞ্জন মাথাইকে (পররাষ্ট্রসচিব) তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিস্তা কমিশনের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে পানি ভাগাভাগির কোনো চুক্তি নয়। কবে নাগাদ প্রতিবেদন পাওয়া যাবে তা কেউ বলতে পারছেন না। তত দিনে বাংলাদেশের মানুষ পানির অভাবে মারা গেলেও আপসহীন এই নেত্রীর কিছু আসে যায় না।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময়ই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। এ ব্যাপারে দুই দেশের সরকার ঐকমত্যেও পৌঁছেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাগড়া দেওয়ায় চুক্তি হয়নি। তিনি সে সময় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিরোধিতাই করেননি, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিস্তার কারণে ট্রানজিটসহ বহু দ্বিপক্ষীয় বিষয় অমীমাংসিত থেকে গেছে।
এখানেই শেষ নয়। গত সেপ্টেম্বরে সীমান্ত-বিরোধ নিষ্পত্তি এবং ছিটমহল বিনিময়ে দুই দেশের মধ্যে যে প্রটোকল সই হয়েছিল তার বাস্তবায়নেরও প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন করার আগে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ও সংসদে অনুমোদন জরুরি। বর্তমানে ভারতের ইউপিএ সরকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস অন্যতম শরিক। তাদের সমর্থন ছাড়া এই প্রটোকল বাস্তবায়নও সম্ভব হবে না। চুক্তির পর অঙ্গরপোতা ও দহগ্রাম ছিটমহলবাসীর জন্য তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা উপলক্ষে যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় তাতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গরহাজির ছিলেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি কি কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে দিতে চাইছেন, সীমান্ত প্রটোকল চুক্তি তাঁর পছন্দ নয়? পুনর্বাসনের অজুহাত তুলে এখন ছিটমহল বিনিময় ঠেকিয়ে রাখতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস।
সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের এই ‘বাঙালি নেত্রীই’ দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের বড় বাধা। এর ঠিক বিপরীত অবস্থানে ছিলেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিআই(এম) নেতা জ্যোতি বসু। ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। চুক্তির আগে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। দিল্লিকে বুঝিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে গঙ্গার পানি থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা যাবে না। অন্যদিকে তৃণমূল নেত্রী নির্বাচন এলেই মৌলবাদী বিজেপির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে ‘ভোটার তালিকায় প্রচুর বাংলাদেশির নাম’ আছে বলে শোরগোল তুলেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, নয় মাস আগে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এলেও জনগণের কল্যাণে তেমন কিছু করতে পারেননি। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তাঁর সরকার এবং দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাই পড়তি জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা তিস্তার পানি বণ্টনকেই দিল্লির সঙ্গে দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
http://www.facebook.com/groups/3xp1r3/p 688965594/
↧
তিস্তার পানি ভাগাভাগিতে মমতার বাধা দেওয়ার মুল কারণ।
↧