যারা চশমা পরতে চান না তাদের জন্য দুটো বিকল্প নিয়েই এই টপিক।
ছোটবেলা থেকে চশমা না পরলেও এক সময়ে এসে প্রায় সবাইকেই চশমা পরতে হয় তবে চশমারও বিকল্প আছে। একটি হচ্ছে কনট্যাক্ট লেন্স। আরেক বিকল্প লেজার আই সার্জারী (ল্যাসিক)।
কনট্যাক্ট লেন্স
কনট্যাক্ট লেন্স দুই ধরনের হয়ে থাকে। হার্ড লেন্স ও সফট ডিসপোজেবল লেন্স। বর্তমানে সফট লেন্সই বেশিরভাগ মানুষ পরে থাকে। হার্ড লেন্স পরে না তেমন একটা। মাত্রাতিরিক্ত পাওয়ার জনিত সমস্যার ক্ষেত্রে হার্ড লেন্স রিকমেন্ড করা হয়।
ইতিবাচক দিকঃ
১. কনট্যাক্ট লেন্স নিরাপদ যদি ঠিকভাবে মেইনটেন করা যায় তবে চশমা হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ।
২। চশমা যেহেতু নাকের উপরে বসানো থাকে তাই নাকের উপর কিছুটা চাপ পড়ে। দাগও পড়ে যায়। লেন্সে এই ঝামেলা নেই।
৩। লেন্স চোখে পরা অবস্থায় কেউ বুঝতেই পারবে না আপনি চোখে লেন্স পরে আছেন যদি না আপনি কালারড লেন্স পরেন। যদি লেন্স সফট ও আরামদায়ক হয় তবে আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন না যে আপনি লেন্স পরে আছেন।
৪. লেন্স পরলে চশমার চেয়ে উন্নতমানের ভিশন পাবেন কারন চশমা পরা অবস্থায় সব কিছু স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা ছোট কিংবা কিছুটা বড় লাগে। লেন্সের ক্ষেত্রে এই সমস্যা নেই।
৫. চশমা পরে খেলাধুলা করা অত্যন্ত ঝামেলা ও বিরক্তির ব্যাপার। অনেক স্পোর্টস আছে যেগুলোতে চশমা পরা অবস্থায় অংশ নেয়া যায় না। এই সব ক্ষেত্রে কনট্যাক্ট লেন্স খুবই কাজে দেয়।
৬. কনট্যাক্ট লেন্স নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে টিনেজারদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ভূমিকা রাখে। লেন্স শিশুরাও পরতে পারে।
৭. দিনে ১২ / ১৪ ঘন্টা লেন্স পরা যায় তবে ৭ / ৮ ঘন্টার বেশি না পরাই ভালো।
নেতিবাচক দিকঃ
১. কনট্যাক্ট লেন্সের মেইনটেনেন্স বেশ ঝামেলার। যারা অলস টাইপ তাদের জন্য কনট্যাক্ট লেন্স না।
২. যদি কনট্যাক্ট লেন্সের ঠিকভাবে যত্ন নেয়া না হয় তবে চোখে ইনফেকশন হতে পারে।
৩. কনট্যাক্ট লেন্স পরে রাতে ঘুমানো একেবারেই অনুচিত। মাঝে মাঝে দুই একদিন ভুল করে লেন্স পরে ঘুমালে তেমন সমস্যা নেই কিন্তু নিয়মিত লেন্স পরে ঘুমালে চোখে ইনফেকশন হতে পারে।
৪. কনট্যাক্ট লেন্সের দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি।
৫। নির্দিষ্ট মেয়াদের বেশি এক লেন্স পরা ঠিক না। একটা লেন্সের মেয়াদ সাধারনত ১ মাসের বেশি হয় না।
লেজার আই সার্জারী - ল্যাসিক
চশমা বা কনট্যাক্ট লেন্স কোনটাই চোখের পাওয়ারজনিত সমস্যা সমাধান করতে পারে না। একমাত্র এক্সাইমার লেজার দিয়ে রিফ্রেক্টিভ সার্জারীর মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করা যায়। বর্তমানে সাধারনত ল্যাসিক সার্জারীর মাধ্যমে এটা করা হয়।
ইতিবাচক দিকঃ
১. চশমা ও কনট্যাক্ট লেন্স থেকে মুক্তি কিংবা মোটা চশমা থেকে মুক্তি।
২. ব্যাথামুক্ত সার্জারী।
৩. অপারেশনের পরে সাথে সাথেই দৃষ্টি স্বাভাবিক হতে থাকে। পরের দিন থেকে প্রায় স্বাভাবিক।
৪. সার্জারী করতে মাত্র কয়েক মিনিট লাগে। খুব ছোট একটা সার্জারী।
৫. ল্যাসিকের মাধ্যমে ২০/২০ ভিশন পাওয়া সম্ভব।
নেতিবাচক দিকঃ
১. ল্যাসিক সার্জারী করলেই যে চোখে ভ্রুটি আর থাকবে না সেটা না। সার্জারীর পরেও একটা সময়ে আবার পাওয়ারজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তখন আবার চশমা পরা লাগবে। অর্থাৎ ল্যাসিক কোনো স্থায়ী সমাধান না।
২. যেহেতু এটা চোখের একটা সার্জারী তাই ঝুঁকি আছে। ল্যাসিকের জন্য আপনি ফিট কিনা এটা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার। যে কেউ চাইলেই ল্যাসিক করতে পারে না।
৩. ল্যাসিক সার্জারীর সময় সার্জিকাল ব্লেড দিয়ে কর্নিয়ার লেয়ার কেটে লেজার দিয়ে কর্নিয়ার কিছু টিস্যু পুড়িয়ে দিয়ে (কতটুকু টিস্যু সরানো লাগবে সেটা আপনার চোখে পাওয়ার জনিত ভ্রুটি কতখানি সেটার উপর নির্ভর করে) কর্নিয়ার আকার পাল্টানো হয়। তাই চোখে সাময়িক কিংবা দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এই ক্ষেত্রে কিছু কম্প্রোমাইজ করতে হতে পারে। যেমন- চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
৪. চোখের কর্নিয়া দূর্বল হয়ে যেতে পারে।
৫. ল্যাসিক অত্যধিক ব্যয়বহুল সার্জারী।
৬. ল্যাসিক করলে রিডিং গ্লাস বয়স হওয়ার কিছু আগেই নিতে হতে পারে কারন আগে যদি দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হতো তবে এখন কাছের জিনিস দেখতে সামান্য সমস্যা হতে পারে। সাধারনত যারা মাইনাস পাওয়ারের গ্লাস পরে তাদের রিডিং গ্লাসের দরকার হয় না। তাদের কাছের জিনিস দেখার ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে স্বাভাবিকদের চেয়ে। ল্যাসিক করলে এই সুবিধা পাওয়া যায় না।
--------------
আপনি যদি কনট্যাক্ট লেন্স কিনতে চান তবে Acuvue (Johnson & Johnson) , Bausch & Lomb ইত্যাদি ভালো ব্র্যান্ডের লেন্স কিনবেন একটু বেশি দাম দিয়ে হলেও কারন এগুলো অনেক সফট ও আরামদায়ক। এগুলোতে উন্নতমানের সিলিকন ইউজ করা হয়। এইসব লেন্সে পানির পরিমান বেশি থাকে। তাই চোখের কর্নিয়া প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায়।
আর যদি ল্যাসিক সার্জারী করতে চান তবে দক্ষ একজন ল্যাসিক সার্জনের কাছ থেকে জেনে নিন আপনার চোখ ল্যাসিকের জন্য ফিট কিনা। কি কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে সেগুলোও জেনে নিবেন। সাধারনত সার্জনেরা বেশি বিস্তারিত বলেন না। তাই এটা আপনার দায়িত্ব সার্জারী করার আগে বিভিন্ন সূত্র থেকে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা যেহেতু এটা চোখের ব্যাপার।
ভালো মানের ল্যাসিক করতে হলে সব সময় দক্ষ, অভিজ্ঞ সার্জন দিয়ে ল্যাসিক করাবেন, তা না হলে পরে আপনিই ভুগবেন।
আর যদি কনট্যাক্ট লেন্স বা ল্যাসিক কোনোটাই ভাল না লাগে তবে চশমা পরা ছাড়া অন্য কোনো গতি নাই। পাওয়ার স্থিতিশীল হয়ে যাওয়ার পরে মায়োপিয়া থাকলে বয়সের সাথে সাথে কারো কারো মায়োপিয়া কমে যেতে পারে তবে একেবারে কখনোই যাবে না। চোখে যারা কম পাওয়ারের চশমা পরেন তারা চেষ্টা করবেন সারাক্ষন চশমা পরে না থাকতে কারন সারাক্ষন চশমা পরে থাকলে চোখ চশমার উপরে পুরোপুরি ডিপেন্ডেন্ট হয়ে যায়। পড়াশুনা করার সময় চশমা খুলে তারপরে পড়ুন কারন কাছের জিনিসতো পুরো স্পষ্ট দেখতে পান। তখন চশমার দরকার নেই। চশমা শুধুমাত্র আপনাকে দূরের জিনিস ভালোভাবে দেখতে সাহায্য করবে (মায়োপিকদের ক্ষেত্রে)। এছাড়া আর কোন কাজ চশমা করে না।
চোখের ব্যায়াম করলেও মায়োপিয়া (মাইনাস পাওয়ার), হাইপারোপিয়া ও প্রেসবায়োপিয়া (প্লাস পাওয়ার) ভালো হয়ে যায় না তবে চোখের ক্লান্তিভাব দূর হয়। তাই মাঝে মাঝে চোখের বিভিন্ন ব্যায়াম করা ভালো।
তবে যাই কিছু করুন চোখের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই তারপরেই করবেন।
বিঃদ্রঃ- স্বাস্থ্য বিভাগে আমার প্রথম টপিক।